রাজনীতি সংবাদ প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
প্রকাশের সময় : ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ৯:৩৩ অপরাহ্ণ
চট্টগ্রামে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নতুন কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে সংগঠনটির দুপক্ষের নেতাকর্মীরা প্রকাশ্যে বিরোধে জড়িয়ে পড়েছেন। নতুন কমিটি নিয়ে সংগঠনের একাংশের নেতাকর্মীদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। তবে অপর অংশের নেতা-কর্মীরা কমিটির সমর্থনে আনন্দ মিছিল ও শোডাউন করেছে।
গতকাল সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) রাত ১২টার দিকে কেন্দ্র থেকে ছয় মাসের জন্য বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলার কমিটি ঘোষণা করা হয়।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রিজাউর রহমানকে আহ্বায়ক ও সরকারি সিটি কলেজের শিক্ষার্থী নিজাম উদ্দিনকে সদস্যসচিব করে ৩১৫ সদস্যের মহানগর কমিটি দেওয়া হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জোবাইর হোসেনকে আহ্বায়ক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তৌহিদুল ইসলামকে সদস্যসচিব করে ৩২৭ সদস্যের চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা কমিটি গঠন করা হয়। এ ছাড়া চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইয়াছির আরফিন চৌধুরীকে আহ্বায়ক ও চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী মো. রইছ উদ্দিনকে সদস্যসচিব করে ১১২ সদস্যের চট্টগ্রাম উত্তর জেলা কমিটি করা হয়।
একাংশের নেতাকর্মীদের অভিযোগ, চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণের ঘোষিত কমিটিতে ‘ব্যবসায়ী, নারী হেনস্তায় অভিযুক্ত ও কিশোর গ্যাং’ সদস্যকে পদে বসানো হয়েছে। এ কমিটি বাতিলের জন্য তিন দফা আলটিমেটামও দেন তারা।
এই বিক্ষুব্ধ অংশটি ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক রাসেল আহমেদের অনুসারী। আর আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব পদ পাওয়া সমন্বয়করা হলেন কেন্দ্রীয় সহসমন্বয়ক খান তালাত মাহমুদ রাফির অনুসারী। নতুন কমিটি নিয়ে দুই নেতার অনুসারীরা কার্যত মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছেন।
আজ মঙ্গলবার বিকেলে নগরীর লালখান বাজারে তারা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন রাসেলের অনুসারীরা। এ সময় পুলিশ তাদের সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনা করে। সন্ধ্যার পর তারা সড়ক ছেড়ে দেন। তাদের দাবি, ঘোষিত কমিটি থেকে ৫০ থেকে ১০০ জন পদত্যাগ করেছেন।
বিরোধের জেরে আজ বিকেলে ফেসবুক লাইভে এসে কমিটি বাতিল না করলে দলবল নিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম ছাড়ার হুমকিও দেন সমন্বয়ক রাসেল।
এদিকে কেন্দ্রীয় সহসমন্বয়ক রাফি এক ফেসবুক বার্তায় নতুন কমিটিকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। রাফির অনুসারীরা নগরীর ষোলশহরে কমিটির সমর্থনে আনন্দ মিছিল ও শোডাউন করে। এ ছাড়া গণপদযাত্রা কর্মসূচিও পালন করে তারা।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে আন্দোলনে মুখ্য ভূমিকায় থাকা যোদ্ধাদের ‘অবমূল্যায়ন’ ও জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ‘ইতিহাস বিকৃত করে কমিটি ঘোষণা’র প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করেন রাসেল অনুসারী সমন্বয়করা।
ঘোষিত মহানগর কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক চৌধুরী সিয়াম ইলাহী বলেন, কেন্দ্র থেকে ঘোষিত তিনটি কমিটিই একপক্ষীয়। ২৪-এর স্পিরিটের সঙ্গে বেইমানি করা হয়েছে। আন্দোলনে যারা ছিল তাদের কমিটিতে না রেখে ৫ আগস্ট-পরবর্তী বিভিন্ন কর্মসূচিতে এসে জ্বালাময়ী বক্তব্য যারা দিয়েছেন তাদের আহ্বায়ক, সদস্য সচিব করা হয়েছে। যারা আন্দোলনে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছেন, তাদের মাইনাস করে কমিটি করা হয়েছে।
তিনি বলেন, কেন্দ্রের কাছে চট্টগ্রাম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে নারী হেনস্তা এবং কিশোর গ্যাং নিয়ে অভিযোগ দেওয়া হয়েছিল। যারা নারী হেনস্তা এবং কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য, তাদের রেখেই কমিটি গঠন করা হয়েছে। পাশাপাশি সনাতনী ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বীকে স্থান দেওয়া হয়নি। নারী সম্মুখযোদ্ধাদের মধ্যে যারা সম্মুখ সারিতে ছিল, তাদের অবমূল্যায়ন করা হয়েছে। তাই ছাত্র আন্দোলন চট্টগ্রামের পক্ষ থেকে নতুন কমিটি অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছি।
আরও পড়ুন: ইউনিভার্সিটি থেকে রাজনীতির মাঠে সাঈদ আল নোমান, নানা জল্পনা