রাজনীতি সংবাদ ডেস্ক
প্রকাশের সময় : ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ৫:৪৬ অপরাহ্ণ
জনতার বিরোধিতার মুখে ক্ষমতা আঁকড়ে রাখতে বিগত আওয়ামী লীগ সরকার জুলাই অভ্যুত্থানে নৃশংসতা চালিয়েছিল বলে মন্তব্য করেছেন জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার তুর্ক।
জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে বাংলাদেশে সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ।
এই প্রতিবেদনে বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনী ও পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রমাণ পেয়েছে জাতিসংঘের তদন্ত কমিটি।
কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সৃষ্ট বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে বিক্ষোভকারী ছাত্র-জনতার ওপর নিষ্ঠুর বলপ্রয়োগ করে পতিত আওয়ামী লীগ সরকার। আন্দোলনের তীব্রতা বেড়ে সরকার পতনের দাবিতে রুপ নিলে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠে আওয়ামী লীগ।
বুধবার জাতিসংঘের প্রকাশিত এতে বলা হয়েছে, পতিত আওয়ামী লীগ সরকার এবং এর নিরাপত্তা ও গোয়েন্দাবাহিনী যুক্ত হয়ে সহিংস উপায় ব্যবহার করে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে।
এ ঘটনা আন্তর্জাতিক ফৌজদারি অপরাধ আইনের দৃষ্টিকোণ থেকে উদ্বেগজনক বলে উল্লেখ করেছে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয় (ওএইচসিএইচআর)। এসব ঘটনায় অধিকতর ফৌজদারি তদন্তের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে বলেও জানিয়েছে সংস্থাটি।
এ প্রসঙ্গে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার তুর্ক বলেন, ‘জনবিরোধিতার মুখে ক্ষমতা আঁকড়ে রাখতে একটি পরিকল্পিত এবং সুসমন্বিত কৌশল হিসেবে এমন নৃশংস পদক্ষেপ নিয়েছিল সাবেক সরকার। বিক্ষোভ দমন করার কৌশলের অংশ হিসেবে রাজনৈতিক নেতৃত্ব এবং ঊর্ধ্বতন নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের জ্ঞাতসারে, তাদের সমন্বয় ও নির্দেশনায় শত শত বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, নির্বিচার গ্রেফতার ও আটক এবং নির্যাতন চালানো হয়েছে বলে বিশ্বাস করার যুক্তিসংগত কারণ রয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা যে সাক্ষ্য এবং প্রমাণ সংগ্রহ করেছি, তা ব্যাপক রাষ্ট্রীয় সহিংসতা এবং নিশানা করে হত্যার এক উদ্বেগজনক চিত্র তুলে ধরে। যা সবচেয়ে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনার মধ্যে পড়ে এবং যা আন্তর্জাতিক অপরাধের শামিল বলেও বিবেচিত হতে পারে।’
জাতিসংঘের বহুল প্রতীক্ষিত এই প্রতিবেদন এমন সময়ে প্রকাশিত হলো, এদিন নিরাপত্তা বাহিনীর গোপন বন্দিশালা ‘আয়নাঘর’ পরিদর্শন করেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। যেখানে বছরের পর বছর ধরে বিচার ছাড়াই বিরোধী রাজনৈতিক কর্মীদের আটক করে রাখা হয়েছিল।
গত ১৫ বছরে নিরাপত্তাবাহিনীর বিচারবহির্ভূত হত্যা, জোরপূর্বক গুম ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে এসেছে মানবাধিকার সংগঠনগুলো। এবার জাতিসংঘের স্বাধীন তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
একইসঙ্গে পতনের আগে আওয়ামী লীগ দাবি করেছিল, আন্দোলনে ছাত্র-জনতার হত্যার ঘটনায় জাতিসংঘের সহায়তা স্বাগত জানানো হবে। এবার জাতিসংঘের এই প্রতিবেদন বলছে, এসব হত্যাকাণ্ডের পেছনে ভারতে পালিয়ে যাওয়া ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ ছিল।
আরও পড়ুন: আয়নাঘর দেখে প্রধান উপদেষ্টা বললেন ‘এটা বিভৎস দৃশ্য’