শুক্রবার, ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ | ৮ ফাল্গুন, ১৪৩১ | ২১ শাবান, ১৪৪৬

মূলপাতা জাতীয়

আয়নাঘর দেখে প্রধান উপদেষ্টা বললেন ‘এটা বিভৎস দৃশ্য’


ভুক্তভোগীদের নিয়ে আয়নাঘর পরিদর্শন করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি: সংগৃহীত

রাজনীতি সংবাদ প্রতিবেদক, ঢাকা
প্রকাশের সময় : ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২:০৮ অপরাহ্ণ

ভুক্তভোগীদের নিয়ে সামরিক ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আয়নাঘর (গোপন বন্দিশালা) পরিদর্শন করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) যৌথ জিজ্ঞাসাবাদ সেল এবং র‌্যাব-২ এর সিপিসি-৩ এর ভেতরের সেলগুলো পরিদর্শন করেন। এ সময় তার সঙ্গে দেশ-বিদেশের গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

আজ বুধবার বেলা ১১টার দিকে আয়নাঘর পরিদর্শনে যান প্রধান উপদেষ্টা।

পরিদর্শন শেষে ড. মুহাম্মদ ইউনূস সাংবাদিকদের বলেন, ‘এ রকম ইন্টারোগেশন সেল, টর্চার সেল সারা বাংলাদেশজুড়ে আছে; সেগুলো শুনলাম আজকে। আমার ধারণা ছিল যে, এখানে আয়নাঘর বলতে যে কয়েকটা আছে তাই। কিন্তু এখন শুনলাম, আয়নাঘরের ভার্সন সারা দেশজুড়ে আছে। কেউ বলছে ৭০০, কেউ বলছে ৮০০। সংখ্যাও নিরূপণ করা যায়নি। কতটা জানা আছে, কতটা অজানা রয়ে গেছে।’

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘নৃশংস অবস্থা। প্রতিটি জিনিস যে হয়েছে এখানে, যতটাই শুনি অবিশ্বাস্য মনে হয়। এটা কি আমাদেরই জগত, আমাদেরই সমাজ। আমরা কি এটা করলাম। যারা নিগৃহীত হয়েছে, যারা এটার শিকার হয়েছে তারাও আমাদের সঙ্গে আছে। তাদের মুখ থেকে শুনলাম-এটা কীভাবে হয়েছে।’

ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘আইয়ামে জাহেলিয়াত বলে একটা কথা আছে। গত সরকার সর্বক্ষেত্রে আইয়ামে জাহেলিয়াতকে প্রতিষ্ঠিত করে গেছে। এটা (আয়নাঘর) এর একটি নমুনা।’

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে বলা হয়েছে, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বুধবার ঢাকা শহরের তিনটি স্থানে পরিদর্শন করেন, যেগুলি আগে অত্যাচার কক্ষ এবং গোপন কারাগার হিসেবে ব্যবহার করা হতো।

পরিদর্শনকালে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে গুম সংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের সদস্য, আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, উপদেষ্টা মাহফুজ আলম এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম এক ফেসবুক পোস্টে বলেছেন, ব্যারিস্টার মীর আহমদ বিন কাসেম আরমান উত্তরায় র‌্যাবিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন-১ কম্পাউন্ডে ছোট্ট আয়নাঘর, গোপন কারাগারের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন যেখানে তাকে আট বছর ধরে শেখ হাসিনার পোষা নিরাপত্তা বাহিনী গোপনে রেখেছিল। আজ তিনি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহম্মদ ইউনূসের কাছে ঢাকায় আয়নাঘর পরিদর্শনকালে তার অগ্নিপরীক্ষার কথা বর্ণনা করেন।

অভিযোগ রয়েছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শাসনকালে ২০০৯ সাল থেকে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৬০৫ জনকে গোপনে বন্দি করে রাখা হয়েছিল। অন্য আরেকটি তথ্যে বলা হয়েছে, ২০১৪ থেকে ২০১৯ সালের জুলাই পর্যন্ত বাংলাদেশে ৩৪৪ জন ব্যক্তি গুমের শিকার হয়েছেন। তাদের মধ্যে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায় ৪০ জনকে। আর ৬৬ জনকে সরকারি হেফাজতে গ্রেপ্তার অবস্থায় পাওয়া গেছে।

 

যেসব ব্যক্তি দীর্ঘদিন গুম থাকার পর ফিরে এসেছেন, তারা গুমের ব্যাপারে মৌনতা অবলম্বন করেছেন। ধারণা করা হয়, এসব মানুষদের গুম করে রাখা হয় আয়নাঘরে। অভিযোগ রয়েছে, আয়নাঘরেই বন্দি ছিলেন, অধ্যাপক মোবাশার হাসান, সাবেক রাষ্ট্রদূত মারুফ জামান, ব্যবসায়ী অনিরুদ্ধ কুমার রায়, মাইকেল চাকমা ও মীর আহমদ বিন কাসেমসহ অনেকে।

উল্লেখ্য, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাধ্যমে বিভিন্ন শ্রেণির মানুষকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে গিয়ে ‘বিশেষ’ স্থানে রাখা হতো। এ নিয়ে সুইডেনভিত্তিক সংবাদমাধ্যম নেত্র নিউজে প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে এসব স্থান ‘আয়নাঘর’ নামে প্রকাশ্যে আসে। গুম হওয়া ব্যক্তিদের অনেকে শেখ হাসিনা সরকারের ক্ষমতাচ্যুতির পর আয়নাঘর থেকে ফিরে আসেন পরিবারের কাছে। তাদের বয়ানে উঠে এসেছে আয়নাঘরের ভয়াবহতা।

আরও পড়ুন: ‘আয়নাঘর’ নিয়ন্ত্রণ করতেন তারিক আহমেদ সিদ্দিক

মন্তব্য করুন
Rajniti Sangbad


আরও খবর