সাঈদীর মৃত্যু মেডিক্যাল কিলিং কি না তদন্ত করতে হবে: আজহারী

আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ইসলামী চিন্তাবিদ ও মুফাসসিরে কুরআন মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যু মেডিক্যাল কিলিং কি না তা তদন্ত করে জাতির সামনে প্রকাশ করার দাবি জানিয়েছেন জনপ্রিয় ইসলামী আলোচক ড. মিজানুর রহমান আজহারী।

তিনি বলেন, ‘মাওলানা সাঈদীর মৃত্যু স্বাভাবকি ছিল নাকি মেডিক্যাল কিলিং ছিল, তা আমরা এখনো জানি না। এখন বিষয়টি তদন্ত করে জাতির সামনে প্রতিবেদন প্রকাশ করতে হবে।’

আজ শুক্রবার রাতে চট্টগ্রাম নগরীর প্যারেড মাঠে ইসলামী সমাজকল্যাণ পরিষদ আয়োজিত তাফসিরুল কুরআন মাহফিলের পঞ্চম ও শেষ দিনে প্রধান মুফাসসিরের বক্তব্যে তিনি এ দাবি জানান।

প্রয়াত জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর স্মৃতিধন্য এই তাফসির মাহফিলে চট্টগ্রাম ছাড়াও আশপাশের বিভিন্ন জেলা থেকে লাখো মানুষের সমাগম ঘটে। মাফিলস্থল ছাড়িয়ে পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন সড়কেও অবস্থান নেন আজহারীর বক্তব্য শুনতে আসা লোকজন। জনসমুদ্রে পরিণত হয় প্যারেড মাঠ ও সংলগ্ন এলাকা। আগে এ মাহফিলে প্রধান অতিথি থাকতেন মাওলানা সাঈদী।

মিজানুর রহমান আজহারী বলেন,‘অধিপত্যবাদ, ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী। তিনি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার ছিলেন। তাই তার মুত্যু পরিকল্পিত মেডিক্যাল কিলিং হতে পারে। এ ধারণা আমরা করতেই পারি।’

তরুণ এই ইসলামী বক্তা বলেন, ‘বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দাবি জানাই, মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যু স্বাভাবিক নাকি হত্যাকাণ্ড তা তদন্ত কমিটি করে রিপোর্ট গণমানুষের কাছে জানাতে হবে।’

মিজানুর রহমান আজহারী বলেন, ‘আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী শিরক-বিদআতের আস্তানা তছনছ করে দিয়েছিলেন। আজীবন ইসলামকে বিজয়ী হিসেবে দেখতে চেয়েছেন। অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। তার মৃত্যুতে গোটা বিশ্ব কেঁদেছে।’

উল্লেখ্য, ২০২৩ সালর ১৩ আগস্ট বিকেলে কাশিমপুর কারাগারের ভেতরে বুকের ব্যথায় অসুস্থ হয়ে পড়েন মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী। কারা কর্তৃপক্ষ তাকে কারাগারের অ্যাম্বুলেন্স দিয়ে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে ঢাকার বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে পাঠানো হয়। পরদিন সোমবার রাত ৮টা ৪০ মিনিটে হার্ট অ্যাটাকে আল্লামা সাঈদীর মৃত্যুর কথা জানায় বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কর্তৃপক্ষ।

তাফসির মাহফিলে দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপট প্রসঙ্গে মিজানুর রহমান আজহারী বলেন, ‘যে সময়টা আমরা কাটাচ্ছি, এতো সুন্দর সময় বাংলাদেশ আর পাবে না। আমাদের জন্মের পর থেকে এ রকম চমৎকার সময় আমরা পাইনি। এটাই আসল সময়।’

তাফসির মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় অন্তর্বর্তী সরকারের ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা এরইমধ্যে বলেছেন, আমরা এমন নির্বাচন দিতে চাই, যা হবে ঐতিহাসিক। দিনের ভোট দিনে হবে। রাতে হবে না। সবাই নিজের ভোট নিজে দিতে পারবেন। কোনো কারচুপি হবে না। নিশ্চিন্ত থাকুন। আমরা একটি বৈষম্যহীন, সুন্দর ও ইনসাফভিত্তিক রাষ্ট্র উপহার দিতে চাই। আমাদের কুরআনকে ধারণ করতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘গত ১৬ বছর ইসলামিক ফাউন্ডেশনে যারা নয়-ছয় করেছেন, আমরা একজন বিচারপতির মাধ্যমে তদন্ত সাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবো।’

ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, ‘ব্যাংকে টাকা নেই, লালবাতি জ্বলছে। আমরা রিজার্ভে হাত দিচ্ছি না। আমাদের পরবর্তীতে যারা রাষ্ট্রক্ষমতায় আসবেন তাদের জন্য একটি সাসটেইনেবল ইকোনমি রেখে যেতে চাই।’

অধ্যক্ষ নজরুল ইসলামের সঞ্চালনায় মাহফিলে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াত আমীর শাহজাহান চৌধুরী, মাওলনা মনিরুল ইসলাম মজুমদার, সাঈদী পুত্র মাওলানা শামীম সাঈদী প্রমুখ।

আরও পড়ুন:

‘সাঈদীকে ভারতের নির্দেশে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে’

৭১ যদি দেখতাম, রাজাকার হয়ে যেতাম: আজহারী