মঙ্গলবার, ২১ জানুয়ারি, ২০২৫ | ৭ মাঘ, ১৪৩১ | ২০ রজব, ১৪৪৬

মূলপাতা চট্ট-মেট্টো

চিটাগাং চেম্বারের সেক্রেটারি উধাও!



রাজনীতি সংবাদ প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
প্রকাশের সময় : ২০ জানুয়ারি ২০২৫, ১০:২০ পূর্বাহ্ণ

চিটাগাং চেম্বার অব কমার্সের সেক্রেটারি ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ ফারুক উধাও হয়ে গেছেন। তিনি গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে কোর্ট বিল্ডিংয়ে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) মুহাম্মদ আনোয়ার পাশার কার্যালয়ে আসছেন না। আনোয়ার পাশা চিটাগাং চেম্বার অব কমার্সের প্রশাসকের দায়িত্ব পালন করছেন।

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত বছরের ৩১ আগস্ট চিটাগাং চেম্বারে ইঞ্জিনিয়ার ফারুককে লাঞ্চিত করেন একদল ব্যবসায়ী। পরদিন ফারুকের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ তুলে তাকে অপসারণের দাবিতে আন্দোলনে নামেন চেম্বারের এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের সদস্যরা।

এরপর থেকে ফারুক আর চেম্বারে যাননি। চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার আনোয়ার পাশা চেম্বারের প্রশাসকের দায়িত্ব পাওয়ার পর কোর্ট বিল্ডিংয়ে তার কার্যালয়ে গিয়ে অফিস করতেন ফারুক। কিন্তু তিনি দিনে মাত্র আড়াই ঘণ্টা অফিস করতেন আর বেতন নিতেন আড়াই লাখের ওপরে! আড়াই ঘণ্টার চাকরিতে মিনিটে ১ হাজার ৭৭৭ টাকা আয় করতেন তিনি। চিটাগাং চেম্বারে ফুল টাইম অফিস করা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে এ নিয়ে ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দেয়।

এ নিয়ে গত ২১ নভেম্বর রাজনীতি সংবাদে ‘আড়াই ঘণ্টা অফিস করে বেতন নেন আড়াই লাখের ওপরে!’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনটি প্রকাশ হওয়ার পর বিস্মিত হন চিটাগাং চেম্বারের সদস্যরা।

ব্যবসায়ীদের অনেকে প্রশ্ন তুলেন, আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি এম এ লতিফের ‘ঘনিষ্ঠ সহযোগী’ হয়েও ইঞ্জিনিয়ার ফারুক এখনো পর্যন্ত কীভাবে চিটাগাং  চেম্বারে রাজার হালে চাকরি করেন?

জানা গেছে, গত ১ ডিসেম্বর থেকে ইঞ্জিনিয়ার ফারুক কোর্ট বিল্ডিংয়ে চট্টগ্রাম অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) আনোয়ার পাশার কার্যালয়ে আসছেন না। তিনি অফিস থেকে ছুটিও নেননি, পদত্যাগও করেননি।

এ বিষয়ে জানতে ইঞ্জিনিয়ার ফারুকের মোবাইল ফোনে কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

জানা গেছে, কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকায় ইঞ্জিনিয়ার ফারুককে গত ডিসেম্বর মাসের বেতন দেওয়া হয়নি। তিনি কর্মস্থলে না আসায় চিটাগাং চেম্বারের দুই ডেপুটি সেক্রেটারি আনিসুর রহমান ও শাহেদ আলী টিটুকে প্রতিষ্ঠানটির ব্যাংক অ্যাকাউন্টের অথরাইজড সিগনেটারির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

চিটাগাং চেম্বারের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বলছেন, ইঞ্জিনিয়ার ফারুক উধাও হয়ে গেছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চিটাগাং চেম্বার অব কমার্সের প্রশাসক আনোয়ার পাশা রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‘সে (ইঞ্জিনিয়ার ফারুক) কোর্ট বিল্ডিংয়ে আমার অফিসে এসে চেম্বারের মেম্বারশিপের কাজ করতো। যদিও এখন মেম্বারশিপের তেমন কাজ নেই। গত দেড় মাস ধরে আমি তাকে অফিসে দেখিনি। সে চেম্বারেও আসে না। সে এখন কোথায় আছে সেটা আমি জানি না। কর্মস্থলে না আসায় তাকে এ মাসে বেতনও দেওয়া হয়নি।’

 

প্রসঙ্গত, গত বছরের ২১ অক্টোবর রাজনীতি সংবাদে ‘৬ কোটি টাকার মালিক চিটাগাং চেম্বারের সেক্রেটারি’ শীর্ষক একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

আড়াই ঘণ্টা অফিস করেও ফারুক মাস শেষে পূর্ণ বেতন পকেটে ঢোকান। চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট) থেকে বিএসসি (সিভিল ইঞ্জিনিয়ার) পাশ করা ফারুকের বেতন ২ লাখ ৬৬ হাজার ৫৪০ টাকা। ২০০৮ সালের ১০ এপ্রিল চিটাগাং চেম্বারের অব কমার্সের মালিকানাধীন ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে আবাসিক ইঞ্জিনিয়ার (সিভিল) পদে ২৪ হাজার টাকা বেতনে চাকরি নিয়েছিলেন তিনি। ৯ বছরের মাথায় তিনি চিটাগাং চেম্বারের সেক্রেটারি ইনচার্জ হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। সেক্রেটারির চেয়ারে বসার পর ফুলেফেঁপে উঠে তার সম্পদ। জমি-প্লট কিনেছেন প্রায় ৩ কোটি টাকার, সঞ্চয়পত্র কিনেছেন প্রায় ১ কোটি টাকার, ব্যবসায় বিনিয়োগ করেছেন প্রায় ১ কোটি টাকা, বানিয়েছেন কোটি টাকা দামের আলিশান বাড়ি। সবমিলিয়ে তিনি প্রায় ৬ কোটি টাকার সম্পদ গড়েছেন।

চট্টগ্রাম-১১ আসনের (বন্দর-পতেঙ্গা) আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য ও চিটাগাং চেম্বারের সাবেক সভাপতি এম এ লতিফের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে পরিচিত ইঞ্জিনিয়ার ফারুক। তিনি লতিফের ছত্রছায়ায় ও যোগসাজসে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে ‘হরিলুট’ করে অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

চেম্বার সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, ফারুকের ‘দুর্নীতির’ বিষয়টি তদন্ত করার জন্য চেম্বার প্রশাসক বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করেছেন।

আরও পড়ুন:

আড়াই ঘণ্টা অফিস করে বেতন নেন আড়াই লাখের ওপরে!

৬ কোটি টাকার মালিক চিটাগাং চেম্বারের সেক্রেটারি

চিটাগাং চেম্বারের সাবেক সভাপতি হাজ্জাজের কর ফাঁকির তদন্ত শুরু

মন্তব্য করুন
Rajniti Sangbad


আরও খবর