শুক্রবার, ১০ জানুয়ারি, ২০২৫ | ২৬ পৌষ, ১৪৩১ | ৯ রজব, ১৪৪৬

মূলপাতা চট্ট-মেট্টো

চিটাগাং চেম্বারের সাবেক সভাপতি হাজ্জাজের কর ফাঁকির তদন্ত শুরু



রাজনীতি সংবাদ প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
প্রকাশের সময় : ১০ জানুয়ারি ২০২৫, ৪:৪৫ অপরাহ্ণ

চিটাগাং চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সভাপতি ওমর হাজ্জাজের কর ফাঁকির তদন্ত শুরু হয়েছে। চট্টগ্রাম আয়কর বিভাগের গোয়েন্দা ইউনিট তার ‘গোপন’ সম্পদের খোঁজে মাঠে নেমেছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম কর অঞ্চল-১ এর অতিরিক্ত কমিশনার মো. আশরাফুল ইসলাম রাজনীতি সংবাদকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, ‘ওমর হাজ্জাজ তার কর ফাইলে যেসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও সম্পদের তথ্য গোপন করেছেন সেগুলোর সন্ধানে আমাদের গোয়েন্দা ইউনিট ইতিমধ্যে তদন্ত শুরু করেছে। তদন্তে করযোগ্য গোপন সম্পদের সন্ধান পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।’

ওমর হাজ্জাজ চট্টগ্রাম-১১ আসনের (বন্দর-পতেঙ্গা) আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য এম এ লতিফের তৃতীয় সন্তান।

উল্লেখ্য, গত বছরের ১ জুলাই রাজনীতি সংবাদে ‘চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি ওমর হাজ্জাজের কর ফাঁকি!’ শীর্ষক একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপর বিষয়টি চট্টগ্রাম আয়কর বিভাগের নজরে আসে।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ওমর হাজ্জাজ আয়কর ফাইলে তার চারটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের তথ্য গোপন করেছেন।

প্রতিষ্ঠানগুলো হলো-ব্লু এনার্জি লিমিটেড, জিডি হার্বার সার্ভিস, গ্লোব ইঞ্জিনিয়ারিং শিপইয়ার্ড এবং রিলায়েন্স শিপইয়ার্ড। এর মধ্যে ওমর হাজ্জাজ ব্লু এনার্জি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। এ ছাড়া জিডি হার্বার সার্ভিস এবং গ্লোব ইঞ্জিনিয়ারিং শিপইয়ার্ডের ম্যানেজিং পার্টনার। আর রিলায়েন্স শিপইয়ার্ডের পরিচালক পদে আছেন।

২০২৩ সালের ৮ আগস্ট বিনাভোটে চিটাগাং চেম্বারের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন ওমর হাজ্জাজ। এ নিয়ে তখন বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে ওমর হাজ্জাজের এই চারটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের তথ্য উল্লেখ করা হয়।

ওমর হাজ্জাজ কর ফাইলে যে চারটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের তথ্য গোপন করেছেন তার মধ্যে রাজনীতি সংবাদের অনুসন্ধানে গ্লোব শিপইয়ার্ড ইঞ্জিনিয়ারিং নামে প্রতিষ্ঠানটির সন্ধান পাওয়া যায়। তিনি গ্লোব শিপইয়ার্ডের ম্যানেজিং পার্টনার। ২০১৬ সালে মুন্সীগঞ্জ পৌরসভার চরকিশোরগঞ্জে ধলেশ্বরী নদীর তীরে গ্লোব শিপইয়ার্ড ইঞ্জিনিয়ারিং নামে জাহাজ মেরামতকারী প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলা হয়।

রাজনীতি সংবাদের ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, গ্লোব শিপইয়ার্ডের জমির পরিমাণ হলো সাড়ে ৬ একর। এই জমির আনুমানিক বাজারমূল্য সাড়ে ৬ কোটি টাকা। অথচ ওমর হাজ্জাজ তার সর্বশেষ ২০২৩-২০২৪ করবর্ষের আয়কর রিটার্নে ব্যবসায় মূলধনের পরিমাণ দেখিয়েছেন মাত্র ২৭ লাখ ৬১ হাজার ৯৪৭ টাকা। আর আয়কর রিটার্নে মোট সম্পত্তির পরিমাণ দেখিয়েছেন ১ কোটি ৩৩ লাখ ৩২ হাজার ৪২৫ টাকা। বার্ষিক আয় দেখিয়েছেন ১৮ লাখ ১ হাজার ৯৪৬ টাকা। তার কোনো ব্যাংক ঋণও নেই বলে উল্লেখ করেছেন।

 

তাহলে ২৭ লাখ ৬১ হাজার ৯৪৭ টাকা ব্যবসায় পুঁজি খাটিয়ে গোপন করা সাড়ে ৬ কোটি টাকার গ্লোব শিপইয়ার্ডসহ চারটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ওমর হাজ্জাজের বিনিয়োগ করা অর্থের উৎস কী?

জানা গেছে, বৈধ সম্পত্তি অর্জিত বছরে আয়কর রিটার্নে না দেখালে সেটা অনেকটা অবৈধ সম্পত্তি হিসেবে গণ্য হয়ে যায়, যেটাকে অপ্রদর্শিত সম্পত্তি বলা হয়। আর যে আয় করদাতা কর ফাঁকি দেওয়ার উদ্দেশ্যে আয়কর রিটার্নে প্রদর্শন করে না, তা কালো টাকা বলে ধরে নেওয়া হয়। আয়কর রিটার্নে যে আয় দেখানো হয়, তার চেয়ে বেশি আয় বা অপ্রদর্শিত আয় পাওয়া গেলে তার ওপর জরিমানাসহ কর দিতে হয়। কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে আয়কর ফাঁকি দিলে বা এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে সর্বোচ্চ ৫ বছর করাদণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান রয়েছে নতুন আয়কর আইনে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ওমর হাজ্জাজের কর ফাঁকির তদন্তে তার বাবা এম এ লতিফও ফেঁসে যেতে পারেন। কারণ ওমর হাজ্জাজ কর ফাইলে যে চারটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের তথ্য গোপন করেছেন সেগুলোর সঙ্গে এম এ লতিফের সম্পৃক্ততা রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এম এ লতিফের কর ফাইলে এসব সম্পত্তির তথ্য উল্লেখ নেই। এমনকি গত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় নির্বাচন কমিশনে আয়কর রিটার্নে তিনি এসব সম্পদের তথ্য গোপন করেছেন। এ ছাড়া এম এ লতিফের লাইটারেজ জাহাজ, ভোগ্য পণ্য আমদানি, আবাসনসহ বিভিন্ন ব্যবসা রয়েছে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় হত্যা মামলাসহ ৮-১০টি মামলার আসামি লতিফ। গত ১৬ আগস্ট চট্টগ্রামের বায়েজিদ বোস্তামী এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। আন্দোলনে এরশাদ নামে একজনকে গুলির ঘটনায় ডবলমুরিং থানায় করা মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নেওয়া হয়। এরপর তাকে দুটি হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। বর্তমানে তিনি চট্টগ্রাম কারাগারে রয়েছেন।

সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, এম এ লতিফের এখন ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করছেন তার ম্যানেজার মাহবুবুল আলম। তিনি চিটাগাং চেম্বারের সহকারী সচিব।

আরও পড়ুন: চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি ওমর হাজ্জাজের কর ফাঁকি!

মন্তব্য করুন
Rajniti Sangbad


আরও খবর