রাজনীতি সংবাদ প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
প্রকাশের সময় : ২ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:১৭ অপরাহ্ণ
রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় গ্রেপ্তার বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ ব্রহ্মচারীর জামিন আবেদন জজ আদালতেও নাকচ হয়েছে। তিনি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সংগঠন আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘের (ইসকন) বহিষ্কৃত নেতা।
আজ বৃহস্পতিবার সকালে চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ সাইফুল ইসলাম দুপক্ষের যুক্তিতর্ক শুনে জামিন নামঞ্জুর করেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করে চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতের সহকারী পিপি মফিজুল হক ভূইয়া বলেন, এটি রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা, এর সর্বোচ্চ সাজা যাবজ্জীবন। আদালত জামিন নামঞ্জুর করেছেন। কেউ সংক্ষুব্ধ হলে উচ্চ আদালতে যাবার সুযোগ রয়েছে।
চিন্ময় দাশের আইনজীবী অপূর্ব ভট্টাচার্য বলেন, জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেছেন আদালত। আমরা উচ্চ আদালতে যাবো।
শুনানির সময় চিন্ময়কে আদালতে হাজির করা হয়নি। আসামির আইনজীবীর উপস্থিতিতে ভার্চুয়াল হাজিরায় জামিন শুনানি হয়।
এর আগে গত ২৬ নভেম্বর ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে চিন্ময় দাসের জামিন নামঞ্জুর হলে ওই দিনই চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতে আবেদন করা হয়। ওই আবেদনের শুনানি হয় ৩ ডিসেম্বর। কিন্তু ওই দিন চিন্ময়ের পক্ষে কোনো আইনজীবী আদালতে উপস্থিত ছিলেন না। পাশাপাশি রাষ্ট্রপক্ষও শুনানির জন্য সময়ের আবেদন করে। এসবের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত জামিন শুনানির জন্য ২০২৫ সালের ২ জানুয়ারি দিন ধার্য করেন।
এর মধ্যে গত ১১ ও ১২ ডিসেম্বর ঢাকা থেকে রবীন্দ্র ঘোষ নামের এক আইনজীবী এসে চিন্ময়ের জামিন শুনানির তারিখ এগিয়ে আনার আবেদন করেন। কিন্তু আবেদনটি যথাযথ প্রক্রিয়ায় না করায় আদালত তা নাকচ করে পূর্ব নির্ধারিত তারিখে জামিন শুনানির দিন ধার্য রাখেন।
গত ৮ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীসহ ১৬৪ জনের বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি মামলার আবেদন করা হয়েছে।
এনামুল হক নামের এক ব্যবসায়ী এ মামলার আবেদন করেন। তবে আদালত মামলাটি গ্রহণ করে আদেশের অপেক্ষায় রেখেছেন।
প্রসঙ্গত, গত ২৫ অক্টোবর চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের নেতৃত্বে চট্টগ্রামের লালদীঘি মাঠে সনাতনী সম্প্রদায়ের একটি বড় সমাবেশ হয়। সেদিন নিউমার্কেট মোড়ে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার ওপরে ইসকনের গেরুয়া রঙের ধর্মীয় পতাকা স্থাপন করা হয়। এ ঘটনায় গত ৩০ অক্টোবর চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে জাতীয় পতাকার অবমাননার অভিযোগে রাষ্ট্রদ্রোহ আইনে একটি মামলা দায়ের হয়। ফিরোজ খান নামের এক ব্যক্তি বাদী হয়ে চট্টগ্রাম নগরীর কোতোয়ালী থানায় মামলাটি দায়ের করেন।
মামলায় অভিযোগে বলা হয়েছে, ৫ অগাস্ট গণঅভুত্থানের পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা নিউমার্কেট মোড়ে একটি জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে। গত ২৫ অক্টোবর লালদীঘি ময়দানে সনাতনীদের সমাবেশের দিন ওই পতাকার ওপর ইসকনের গেরুয়া রঙের ধর্মীয় পতাকা স্থাপন করে দেওয়া হয়, যা রাষ্ট্রের অখণ্ডতাকে অস্বীকার করার শামিল।
রাষ্ট্রদ্রোহের সেই মামলায় চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গত ২৫ নভেম্বর ঢাকা শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। গত ২৬ নভেম্বর তাকে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে চট্টগ্রাম আদালতে নেওয়া হয়। আদালত জামিন না মঞ্জুর করে তাকে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেন। জামিন না দেওয়ার জের ধরে সেখানে বিক্ষোভ করেন ইসকনের সমর্থকরা। এ সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায় তারা। সংঘর্ষ চলাকালে আদালত এলাকায় মসজিদসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে হামলা চালায় তারা।
একপর্যায়ে বিকেলে আদালতের প্রধান ফটকের বিপরীতে রঙ্গম কনভেনশন হলের গলিতে একদল ইসকন অনুসারীর হাতে খুন হন অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম আলিফ।
পুলিশের একটি সূত্র জানায়, বিকেল পৌনে ৪টার দিকে ইসকনের অনুসারীরা আদালত এলাকায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে হামলা শুরু করলে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ তাদের বাধা দেন। এরপর তাকে তুলে নিয়ে আদালতের প্রধান ফটকের বিপরীতে রঙ্গম টাওয়ারের সামনে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে সাইফুলকে কুপিয়ে আহত করা হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় সাইফুলকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেলে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
আলিফ সহকারী সরকারি কৌঁসুলি (এপিপি) হিসেবে কর্মরত ছিলেন। আলিফ হত্যার ঘটনায় নগরীর কোতোয়ালী থানায় দুটি মামলা দায়ের হয়েছে।
আরও পড়ুন:
চিন্ময় কৃষ্ণ দাসসহ ১৬৪ জনের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টা মামলার আবেদন
চিন্ময় দাসসহ ইসকনের ১৭ সদস্যের ব্যাংক হিসাব জব্দ