রাজনীতি সংবাদ প্রতিবেদক, ঢাকা
প্রকাশের সময় : ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪, ৫:১৭ অপরাহ্ণ
রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আজ মঙ্গলবার বিকেলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘মার্চ ফর ইউনিটি’ (ঐক্যের জন্য যাত্রা) কর্মসূচিতে লাখো ছাত্র-জনতার ঢল নেমেছে। সমাবেশে ছাত্র-জনতা স্বৈরশাসক শেখ হাসিনাসহ জুলাই-আগস্ট গণহত্যায় জড়িতদের ফাঁসির দাবি জানিয়েছেন।
এ ছাড়া সমাবেশে অন্তর্বর্তী সরকারকে ১৫ জানুয়ারির মধ্যে জুলাই গণঅভুত্থানের ঘোষণাপত্র জারি করার আল্টিমেটাম দিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ।
হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘এতোদিন পর্যন্ত আমাদের এই জুলাই গণ-অভুত্থানের কোনো ঘোষণাপত্র ছিলো না। আমরা বলতে চাই ১৫ জানুয়ারির মধ্যে জুলাই গণঅভুত্থানের ঘোষণাপত্র জারি করতে হবে।’
জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, ‘এ দেশের মানুষ এক নতুন বাংলাদেশ চায়। বাংলাদেশের মানুষ নতুন সংবিধান চায়। বাংলাদেশের মানুষ সংস্কার চায়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা যখন জুলাই অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র পাঠের আয়োজনের ঘোষণা দেয় তখন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষ থেকে সব রাজনৈতিক সংগঠনের সমন্বয়ে ঘোষণাপত্র পাঠের ঘোষণা দেওয়া হয়।’
এই কর্মসূচি উপলক্ষে সকাল থেকেই ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছাত্র-জনতা ব্যানার, পতাকা ও ফেস্টুন হাতে মিছিল নিয়ে জড়ো হতে শুরু করেন।
চট্টগ্রাম, নাটোর, পঞ্চগড়, সিরাজগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলা থেকে আসা ছাত্র-জনতাও সকাল থেকে শহীদ মিনার ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় অবস্থান নেন এবং পর্যায়ক্রমে তারা মিছিল নিয়ে শহীদ মিনারে জড়ো হন।
বিকেলে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ও এর আশপাশের এলাকায় দেখা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা জনসমুদ্রে পরিণত হয়। ঢাকার বাইরে থেকে আসা বিপ্লবীরা সকাল থেকে শহীদ মিনারে ও আশপাশে অবস্থান করতে দেখা গেছে।
এ সময় ‘ফাঁসি ফাঁসি ফাঁসি চাই, খুনি হাসিনার ফাঁসি চাই’, ‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাহিরে’, ‘দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা-ঢাকা’, ‘আবু সাঈদ মুগ্ধ শেষ হয়নি যুদ্ধ’, ‘গোলামি না আজাদি, আজাদি-আজাদি’, ‘দালালি না রাজপথ, রাজপথ রাজপথ’ প্রভৃতি স্লোগান দিতে শোনা যায়।
শহীদ মিনারে ডিজিটাল পর্দায় বিগত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের বিভিন্ন দুর্নীতি নিয়ে একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। এরপর মঞ্চ থেকে স্লোগান শুরু হয়। বিকেল চারটার দিকে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। পরে একজন শহীদের বাবার বক্তব্যের মধ্য দিয়ে সমাবেশ শুরু হয়। সমাবেশে জুলাই অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া আহতরাও অংশ নেন।
শহীদ শাহরিয়ার হাসান আলভীর বাবা আবুল হাসান বলেন, আমার ছেলে শাহরিয়ার নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী আন্দোলনের সময় মিরপুর ১০ এ শহিদ হয়েছে। আমাদের কান্না কখনো থামবে না, এই বেদনা শেষ হওয়ার নয়। খুনি হাসিনা ও তার হেমলেট বাহিনী আমাদের ওপর পাখির মতো গুলি চালিয়েছে। আমরা খুনি হাসিনার ফাঁসি চাই।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, শহীদদের রক্তের দাগ এখনও শুকায়নি, এর মধ্যে স্বৈরাচারকে পুনর্বাসনের চেষ্টা করে যাচ্ছেন কেউ কেউ। যখনই আমরা চিরতরে দেশ থেকে ফ্যাসিবাদ মুক্ত করতে চাই, তখনই সুশীল বেশে কিছু ব্যক্তি ও দল বিরোধিতায় নেমে যায়। আমরা প্রয়োজনে তাদেরও প্রতিহত করব।
এর আগে, অভ্যুত্থান পরবর্তী জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র প্রকাশের কথা জানিয়েছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র প্রকাশের কথা জানানো হলে আগের সিদ্ধান্ত থেকে ফিরে আসে সংগঠনটি।
আরও পড়ুন: জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র তৈরি করবে অন্তর্বর্তী সরকার