রাজনীতি সংবাদ প্রতিবেদক, ঢাকা
প্রকাশের সময় : ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪, ৬:১৪ অপরাহ্ণ
আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে দুর্নীতির প্রমাণ না মেলার কথা বলে যে মামলার সমাপ্তি টেনেছিল দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), সেই পদ্মা সেতু দুর্নীতি মামলা দশ বছর পর আবার সচল হতে যাচ্ছে।
পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের কার্যাদেশ পাইয়ে দেওয়া এবং ঘুষ লেনদেনের অভিযোগে বনানী থানায় করা মামলাটি পুনরায় তদন্তের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান কমিশনের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) আক্তার হোসেন।
দুদক মহাপরিচালক জানান, প্রায় ১২ বছর আগে ২০১২ সালে রাজধানীর বনানী থানায় এ মামলা দায়ের করা হয়। দুই বছর পর আদালতে পুলিশ মামলাটির চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছিল। সেটি আবার তদন্তের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
উল্লেখ্য, পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের নির্মাণকাজে দুর্নীতি ও ঘুষ লেনদেনের ষড়যন্ত্রের অভিযোগে দুদকের উপ পরিচালক আবদুল্লাহ আল জাহিদ ২০১২ সালের ১৭ ডিসেম্বর বনানী থানায় এই মামলা দায়ের করেন, যাতে সাতজনকে আসামি করা হয়।
মামলায় প্রধান আসামি করা হয় সেতু বিভাগের তখনকার সচিব মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়াকে। তাকে গ্রেপ্তার করার পাশাপাশি সরকারি চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও পরে তিনি জামিনে মুক্তি পান। এক পর্যায়ে বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহার করে তাকে চাকরিও ফিরিয়ে দেওয়া হয়।
বাকি ছয়জন হলেন-সেতু কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (নদী শাসন) কাজী মো. ফেরদৌস, সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) নির্বাহী প্রকৌশলী রিয়াজ আহমেদ জাবের, ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড প্ল্যানিং কনসালটেন্ট লিমিটেডের উপ ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বাংলাদেশে কানাডীয় পরামর্শক প্রতিষ্ঠান এসএনসি লাভালিনের স্থানীয় প্রতিনিধি মোহাম্মদ মোস্তফা, এসএনসি-লাভালিনের সাবেক পরিচালক মোহাম্মদ ইসমাইল, এই সংস্থার আন্তর্জাতিক প্রকল্প বিভাগের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট রমেশ সাহ ও সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট কেভিন ওয়ালেস।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছিল- ‘এই আসামিরা পারস্পরিক যোগসাজশে ঘুষ লেনদেনের ষড়যন্ত্র করার মাধ্যমে পদ্মা সেতু প্রকল্পের তদারকি পরামর্শকের কাজ এর অন্যতম দরদাতা এসএনসি লাভালিন ইন্টারন্যাশনালকে পাইয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করে। এর মধ্য দিয়ে তারা দণ্ডবিধির ১৬১ এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনে অপরাধ করেছেন, যা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।’
এসএনসি লাভালিন ওই কার্যাদেশ পেলে ‘ঘুষ লেনদেন সম্পন্ন হতো’ বলেও এজাহারে লেখা হয়।
২২ মাস তদন্তের পর দুদক আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়। সেখানে বলা হয়, পদ্মা সেতু নির্মাণে ‘দুর্নীতি বা ষড়যন্ত্রের’ কোনো প্রমাণ মেলেনি।
২০১৪ সালের ১৬ অক্টোবর দুদকের দেওয়া চূড়ান্ত প্রতিবেদন গ্রহণ করে সাত আসামির সবাইকে অব্যাহতি দেয় ঢাকার একটি আদালত।
তার আগে ওই বছর ৩ সেপ্টেম্বর দুদক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তখনকার চেয়ারম্যান মো. বদিউজ্জামান বলেছিলেন, ‘মামলার মেরিট না থাকায়, তদন্তে পর্যাপ্ত তথ্য ও সাক্ষী না পাওয়ায় চূড়ান্ত প্রতিবেদনের জন্য মামলাটি নথিভুক্ত করা হয়েছে। দেড় বছরের বেশি সময় ধরে তদন্তে মামলাটিকে এগিয়ে নেওয়ার মতো তথ্য পাওয়া যায়নি। তাই আদালতে চার্জশিট পেশ করা সম্ভব হচ্ছে না।’
দুর্নীতির ওই ষড়যন্ত্রে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে পদত্যাগে বাধ্য হন সেই সময়ের যোগাযোগ মন্ত্রী আবুল হোসেন। অভিযোগ ছিল সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরীর বিরুদ্ধেও। তবে তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির কোনো তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়নি বলে পরে দাবি করেছিলেন তখনকার দুদক কমিশনার সাহাবুদ্দিন চুপপু, যিনি এখন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি।
আওয়ামী লীগের সরকার পতনের পর পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে মামলাটি পুনরুজ্জীবিত করার সিদ্ধান্তেরে বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে দুদকের মহাপরিচালক আক্তার হোসেন বলেন, ‘তখন তথ্য প্রমাণ না পাওয়ায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছিল। তবে এই সংক্রান্ত কিছু তথ্য প্রমাণ পাওয়া যাওয়ায় মামলাটির কমিশন অধিকতর তদন্তের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’
আরও পড়ুন: জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র তৈরি করবে অন্তর্বর্তী সরকার