রাজনীতি সংবাদ প্রতিবেদক, ঢাকা
প্রকাশের সময় : ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩:১৯ অপরাহ্ণ
জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির প্রয়াত গোলাম আজমের ছেলে সাবেক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুল্লাহিল আমান আযমীর বরখাস্তের আদেশ বাতিল করা হয়েছে।
আজ শুক্রবার আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতর (আইএসপিআর) এ তথ্য জানিয়েছে।
আইএসপিআর জানায়, গত ২৪ ডিসেম্বর তার বরখাস্তের আদেশ প্রমার্জনা করে ২০০৯ সালের ২৪ জুন থেকে ভূতাপেক্ষভাবে ‘অকালীন (বাধ্যতামূলক) অবসর’ প্রদান করা হয়েছে। একই সঙ্গে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে ওই বছরের ২৩ জুন জারি করা তার বরখাস্তের প্রজ্ঞাপনটি বাতিল করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, সেনাবাহিনীর সাবেক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুল্লাহিল আমান আযমী গত ৭ আগস্ট মধ্যরাতে রাজধানীর ক্যান্টনমেন্টের কচুক্ষেত এলাকায় অবস্থিত সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা-ডিজিএফআইয়ের ‘আয়নাঘর’ (বন্দিশালা) থেকে মুক্তি পান।
২০১৬ সালের ২২ আগস্ট রাতে রাজধানীর বড় মগবাজারের বাসা থেকে সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয় দিয়ে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুল্লাহিল আমান আযমীকে তুলে নেওয়া হয়। পরে তাকে সেনাবাহিনী থেকে বাধ্যতামূলক অব্যাহতি দেয় আওয়ামী লীগ সরকার।
মুক্তি পাওয়ার পর গত ৩ সেপ্টেম্বর রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা-ডিজিএফআইয়ের ‘আয়নাঘরে’ (বন্দিশালা) ৮ বছর গুম থাকার লোমহর্ষক বর্ণনা তুলে ধরেন।
আবদুল্লাহিল আযমী বলেন, ‘যখন আমার বাসায় তারা আসলো তখন তাদের কাছে আমি জানতে চেয়েছিলাম আপনারা কারা, পরিচয় কী, পরিচয়পত্র দেখান। তারা আমার কথার জবাব দেননি। আমি বেশ কিছু প্রশ্ন করেছি তারা কোনো কথার জবাব দেননি। এক অফিসার আমাকে তুই করে সম্বোধন করে। আমার সঙ্গে খুবই খারাপ ব্যবহার করে। এক পর্যায়ে আমাকে গ্রেপ্তার করে গাড়িতে নিয়ে চোখ বেঁধে দেয়। সে সময় আমাকে ও সেনাবাহিনীকে নিয়ে খুবই খারাপ ব্যবহার করে।’
সাবেক এই সেনা কর্মকর্তা বলেন, ‘আমি ফিরে এসে জানতে পারলাম, আমার পরিবারের ওপর তারা কী পরিমাণ নির্যাতন চালিয়েছে। আমার স্ত্রীর গায়ে হাত তুলতে চেয়েছিল তারা। এক পর্যায়ে আমার স্ত্রীকে তুলে নিতে চাইলে স্ত্রী আমার মাকে সঙ্গে নিতে বলে তখন তারা তাকে নেয়নি। এ সময় আমার বাড়ির যুবতী কাজের মেয়ের ওপর হাত চালিয়েছে। বাসার ম্যানেজার ও দারোয়ানসহ সবাইয়ের ওপর তারা হামলা চালায়।’
আবদুল্লাহিল আযমী বলেন, ‘আমার চোখ-মুখ বাঁধা অবস্থায় একটা জায়গায় নিয়ে গেলো। তারা আমাকে পোশাক দিলো। রাতে আমাকে খাবার দেয় কিন্তু খাওয়ার মতো অবস্থায় ছিলাম না। টয়লেট যেতে চাইলে তারা আমার চোখ-হাত বেঁধে নিয়ে যেত। প্রায় ৫০ কদম হাঁটার পর টয়লেটে যেতাম।’
সাবেক এই সেনা কর্মকর্তা বলেন, ‘৮ বছর সেখানে বন্দি থাকা অবস্থায় পৃথিবীর কোনো আলো দেখিনি, আকাশ দেখিনি, সূর্য দেখিনি। প্রতি রাতেই ক্রসফায়ারের ভয় থাকতো। বারবার মনে হতো, তারা হয়তো আমাকে ক্রসফায়ার করে হত্যা করবে। আমি রাতে তাহাজ্জুদ পড়ে আল্লাহর কাছে শুধু কান্না করতাম, আল্লাহ আমার লাশটা যেন কুকুরদের খাদ্যে পরিণত না হয়। আমার লাশটা যেন আমার পরিবারের কাছে যায়। সবসময় এ দোয়াটাই করতাম।’
আবদুল্লাহিল আযমী বলেন, ‘আমাকে যখন একটি ঘরে আবদ্ধ করা হলো তখন জিজ্ঞাস করা হয়েছিল, কেন আমি ভারতের বিরুদ্ধে লেখি। কেন ফেসবুকে ভারতের বিরুদ্ধে সোচ্চার। এতে স্পষ্টই বুঝা যাচ্ছে, তারা কেন আমাকে আয়নাঘরে আটকিয়ে রাখেন।’
আরও পড়ুন: ৮ বছর গুম থাকার লোমহর্ষক বর্ণনা দিলেন ব্রিগেডিয়ার আজমী