রাজনীতি সংবাদ ডেস্ক
প্রকাশের সময় : ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:২৬ পূর্বাহ্ণ
পাবনার রূপপুর পারমাণবিক কেন্দ্রের প্রায় ৪ বিলিয়ন পাউন্ড ঘুষ নেওয়ার অভিযোগের তদন্তে শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানার মেয়ে ও যুক্তরাজ্যের ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিকের নাম জড়িয়েছে। এ নিয়ে টিউলিপকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে যুক্তরাজ্যের মন্ত্রিসভার কর্মকর্তারা। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে দেশটির মন্ত্রিপরিষদ অফিসের ন্যায় এবং নৈতিকতা দল।
গত ২২ ডিসেম্বর যুক্তরাজ্যভিত্তিক দ্য সানডে টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, টিউলিপকে গত ১৯ ডিসেম্বর জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তবে এই খবরটি সামনে আসে গতকাল রোববার। জিজ্ঞাসাবাদে নিজের অবস্থান তুলে ধরেন তিনি। যদিও টিউলিপ নিজে জিজ্ঞাসাবাদের ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করেননি।
তবে মন্ত্রিসভা অফিসের এক মুখপাত্র বলেছেন, অর্থ আত্মসাতের সঙ্গে জড়িত থাকার দাবি অস্বীকার করেছেন তিনি।
টিউলিপ যুক্তরাজ্যের লেবার মন্ত্রিসভার সদস্য। তিনি ইকোনমিক সেক্রেটারি টু দ্য ট্রেজারি অ্যান্ড সিটি মিনিস্টার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তার কাজ যুক্তরাজ্যের অর্থবাজারের ভেতরের দুর্নীতি সামাল দেওয়া।
ব্রিটিশ এই সংবাদমাধ্যমটি বলছে, বাংলাদেশে একটি পারমাণবিক শক্তি প্রকল্প থেকে নিজের পরিবারকে প্রায় ৪ বিলিয়ন পাউন্ড আত্মসাৎ করতে সহায়তা করার অভিযোগে মন্ত্রিপরিষদ অফিসের ন্যায় ও নৈতিকতা দল মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিককে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে।
২০১৩ সালে টিউলিপ বাংলাদেশের রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তি করতে সহায়তা করেছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছে। যে চুক্তিতে প্রায় ১ বিলিয়ন পাউন্ড ঘুষের লেনদেন হয়েছিল।
সে সময়ের এক ছবিতে দেখা যায়, ক্রেমলিনে শেখ হাসিনা ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে টিউলিপ সিদ্দিক উপস্থিত ছিলেন। অভিযোগ অনুযায়ী, রূপপুরের এই প্রকল্প থেকে ৩.৯ বিলিয়ন (৩৯০ কোটি) পাউন্ড সরিয়ে নেয় শেখ হাসিনার পরিবার ও তার মন্ত্রীরা।
এ নিয়ে সানডে টাইমস তাদের প্রতিবেদনে জানায়, টিউলিপ সিদ্দিক যুক্তরাজ্যের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ার স্টারমারের বন্ধু এবং তার নির্বাচনী এলাকার পাশের আসন হ্যাম্পস্টেড অ্যান্ড হাইগেইট আসনের প্রতিনিধিত্ব করেন তিনি। দুর্নীতিতে জড়িত থাকার অভিযোগ সামনে আসার পর টিউলিপ সিদ্দিক দেশটির মন্ত্রিপরিষদ অফিসের ন্যায় এবং নৈতিকতা দলের (পিইটি) প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠকে যোগ দিতে সম্মত হন।
গত বৃহস্পতিবার পিইটি’র ওই কর্মকর্তা টিউলিপ সিদ্দিকের অফিসে যান। পরে ওই কর্মকর্তার কাছে ১০ বিলিয়ন পাউন্ডের রূপপুর প্রকল্পের দুর্নীতির সঙ্গে তার জড়িত থাকার অভিযোগের বিষয়ে জবাব দেন টিউলিপ।
এদিকে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর ডাউনিং স্ট্রিটের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, টিউলিপের ওপর প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের আস্থা আছে এবং দুর্নীতিবিরোধী পদক্ষেপগুলোর দেখাশোনো করার ক্ষেত্রে তার দায়িত্ব অব্যাহত থাকবে। তিনি তার মন্ত্রীর দায়িত্ব অব্যাহত রাখবেন। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর মুখপাত্র জানিয়েছেন, টিউলিপ সিদ্দিকের অর্থ আত্মসাতে জড়িত থাকার যে অভিযোগ রয়েছে, সেগুলোতে তার কোনো সম্পৃক্ততা থাকার দাবিও উড়িয়ে দিয়েছেন স্টারমার।
আরেক সংবাদমাধ্যম ডেইলি মেইল জানিয়েছে, টিউলিপকে এগুলো নিয়ে আগামী মাসে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এ ছাড়া দুর্নীতি দমন কমিশন ঢাকার ব্রিটিশ হাইকমিশনের মাধ্যমে যুক্তরাজ্যে একটি চিঠি দেবে। এর মাধ্যমে তিনি বিদেশি অপরাধ তদন্তের অধীনে পড়বেন।
আরও পড়ুন: হাসিনা, রেহানা, জয় ও টিউলিপের দুর্নীতি অনুসন্ধান করবে দুদক