বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর, ২০২৪ | ৩ পৌষ, ১৪৩১ | ১৫ জমাদিউস সানি, ১৪৪৬

মূলপাতা খেলা

ওয়েস্ট ইন্ডিজকে উড়িয়ে সিরিজ জিতলো বাংলাদেশ


বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজ ম্যাচ।

স্পোর্টস ডেস্ক
প্রকাশের সময় : ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:১৬ পূর্বাহ্ণ

ব্যাটিং ব্যর্থতায় স্কোরবোর্ডে বেশি রান তুলতে পারেনি বাংলাদেশ। শামীম হোসেনের শেষের ঝড়ে আসে স্রেফ ১২৯ রানের পুঁজি। এই সংগ্রহ নিয়েই বল হাতে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে কাঁপিয়ে দেয় বাংলাদেশ। তাসকিন, শেখ মেহেদি, রিশাদ, সাকিবদের বোলিংয়ের সামনে এই অল্প রান তাড়াতেই মুখ থুবড়ে পড়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। বাংলাদেশের দারুণ বোলিংয়ের দিনে সিরিজে ফেরা আর সম্ভব হয়নি ক্যারিবীয়দের। স্বাগতিকদের তাদের মাঠেই গুড়িয়ে দিয়ে স্বস্তির জয় তুলে নেয় বাংলাদেশ।

তিন ম্যাচ সিরিজের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ২৭ রানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। ম্যাচটি জেতার মধ্য দিয়ে দীর্ঘ ৬ বছর পর ক্যারিবিয়ানদের বিপক্ষে সিরিজ জিতলো লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। সিরিজের শেষ ম্যাচ আগামী ১৮ ডিসেম্বর শুক্রবার।

আজ বুধবার কিংসটাউনের আর্নোস ভেলে স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ আগে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভারে স্কোরবোর্ডে তুলে ১২৯ রান। ১৩০ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে ১০২ রানেই থমকে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ।

সহজ লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা দারুণই করেছিলেন দুই ক্যারিবিয়ান ওপেনার ব্র্যান্ডন কিং ও জনসন চার্লস। দুই ওভারে ১৯ রান তুলে ফেলেন দুজনে মিলে। কিন্তু তৃতীয় ওভারে এসেই আঘাত হানেন তাসকিন। তার প্রথম বলেই কট বিহাইন্ড হয়ে সাজঘরে ফেরেন কিং। চার বল পরেই একইভাবে ফেরান তিনে নামা ফ্লেচারকে। এরপর নিয়মিত বিরতিতেই উইকেট হারাতে থাকে ক্যারিবিয়ানরা।

চতুর্থ ওভারের চতুর্থ বলে মাহেদী হাসানের শিকার হন সেট হয়ে আসা জনসন চার্লস। এরপর আবার পঞ্চম ওভারে ফিরে নিকোলাস পুরানকে ফেরান মাহেদী। অষ্টম ওভারের দ্বিতীয় বলে হাসান মাহমুদের শিকার হন ক্যারিবিয়ান অধিনায়ক রভম্যান পাওয়েল। নবম ওভারের তৃতীয় বলে রোমারিও শেফার্ডকে ফেরান তানজিম সাকিব। ৪২ রান তুলতেই ৬ উইকেট নেই ক্যারিবিয়ানদের।

মাঝে শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তোলেন রোস্টন চেজ। পাঁচে নামা এই ক্যারিবিয়ান ব্যাটসম্যানকে অপর প্রান্ত থেকে যোগ্য সঙ্গ দেন আটে নামা আকিল হোসেইন। দুজনের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় রানের চাকা ঘুরতে থাকে ক্যারিবিয়ানদের। লক্ষ্যটা ছোট বলেই কি না, জয়ের আশা ভালোভাবেই বেঁচে ছিল স্বাগতিকদের।

১৬তম ওভারে বোলিংয়ে আসেন হাসান মাহমুদ। তার প্রথম দুই বলেই দুই ছক্কা হাঁকান রোস্টন চেজ। প্রথমটি স্কুপ করে, পরেরটি ফুল টসে স্ট্রেট দিয়ে। ১৬ রান দিয়েছিলেন হাসান মাহমুদ তার এই ওভারে। তাতে ম্যাচটাও অনেকটা ঘুরে যায় স্বাগতিকদের পক্ষেই।

তবে, পরের ওভারেই রিশাদ এসে পানি ঢেলে দেন ক্যারিবিয়ানদের জয়ের স্বপ্নে। পরপর দুই বলে সাজঘরে ফেরান ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠা চেজ এবং নয়ে নামা গুদাকেশ মোতিকে। রিশাদের পরের ওভারে এসেই ক্যারিবিয়ানদের দশম ব্যাটসম্যান আলজারি জোসেফকে তুলে নেন তানজিম সাকিব। চোখের পলকেই ৮৯ রানে ৬ উইকেট থেকে স্বাগতিকদের স্কোর হয়ে যায় ৯০ রানে ৯ উইকেট।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের কফিনে শেষ পেরেকটা ঠোকেন সেই তাসকিন, যার হাতেই প্রথম উইকেটটি পড়েছিল তাদের। স্বাগতিকদের ইনিংস থামে ৯ বল বাকি থাকতে, ১০২ রানে।

বাংলাদেশের হয়ে বল হাতে ১৬ রান দিয়ে সর্বোচ্চ তিন উইকেট নেন তাসকিন আহমেদ। সমান দুটি করে উইকেট নেন তানজিম সাকিব, রিশাদ হোসেন ও মেহেদি হাসান। হাসান মাহমুদের শিকার একটি।

এর আগে টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে ইনিংসের শুরুতে হতাশ করেছেন অধিনায়ক লিটন দাস। দ্বিতীয় ম্যাচে পজিশন বদলে লিটন নেমেছেন ওপেনিংয়ে। কিন্তু লাভ হয়নি। আকিল হোসেনের তৃতীয় ওভারে বল এগিয়ে গিয়ে খেলতে গিয়ে ব্যাটে পাননি লিটন। হন স্টাম্পিংয়ের শিকার! ১০ বলে ৩ রানে আউট হয়ে শুরুতেই বাংলাদেশকে হতাশ করেন অধিনায়ক।

লিটনের বিদায়ের পর উইকেটে এলেন আর গেলেন তানজিদ তামিম। দলীয় ১১ রানে তিনিও ফিরে যান সাজঘরে। জোড়া ধাক্কা সামলে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টায় বাংলাদেশ। কিন্তু সেই চেষ্টা ব্যর্থ হয় সৌম্য সরকারের রান আউটে। দলীয় ৩৯ রানে রান আউট হন বাঁহাতি ব্যাটার। ১৮ বলে ১১ রানের বেশি করতে পারেননি তিনি।

এত হতাশার মাঝে আশা হয়ে ধরা দেন একাদশে ফেরা মেহেদী হাসান মিরাজ। শট হাঁকিয়ে থিতু হওয়ার আশা জাগান তিনি। তবে সেই আশাও ভেস্তে দেন আলজারি জোসেফ। ইনিংসের ১০ম ওভারে আলজারির করা শেষ বলে পুল করে ছক্কা মারতে গিয়ে স্কয়ার লেগের সীমানায় ক্যাচ দেন মিরাজ। তিন চার ও এক ছক্কায় ২৫ বলে ২৬ রানে শেষ হয় মিরাজের ইনিংস।

ক্যারিবীয়দের পরের শিকার রিশাদ হোসেন। গুডাকেশ মোটির লেগ স্টাম্পে থাকা ফুল লেংথ ডেলিভারি গায়ের জোরে লেগে খেলতে গিয়ে বিপদ বাড়ান রিশাদ। বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফেরেন বাংলাদেশি লেগ স্পিনার। ফেরার আগে করেন ৫ রান।

রিশাদের পর মেহেদি হাসানকেও একই কায়দায় বোল্ড করে মাঠছাড়া করেন মোটি। ১১ বলে ১১ রান করে ফেরেন মেহেদি।

একের পর এক উইকেট হারানো বাংলাদেশের হয়ে হাল ধরেন শামীম হোসেন। শেষ দিকে সাকিবকে নিয়ে দলের রান ১০০ পার করেন তিনি। তার অপরাজিত ৩৫ রানে ভর করে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে একশ ছাড়ানো লক্ষ্য দিতে পারে বাংলাদেশ। সর্বোচ্চ ৩৫ রান করতে শামীমের লেগেছে ১৭ বল। আর ১১ বলে ৯ রান করেন তানজিম সাকিব। নবম উইকেটে তাদের জুটিতে ২৩ বলে আসে ৪১ রান। এটাই সফরকারীদের সেরা জুটি।

বল হাতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে দুই উইকেট নেন মোটি। আকিল হোসেন, রোমারিও, রোস্টন চেজ ও আলজারি জোসেফ নেন সমান একটি করে উইকেট।

আরও পড়ুন: বিজয় দিবসে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে নাটকীয় জয় বাংলাদেশের

মন্তব্য করুন
Rajniti Sangbad


আরও খবর