বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর, ২০২৪ | ৩ পৌষ, ১৪৩১ | ১৫ জমাদিউস সানি, ১৪৪৬

মূলপাতা জাতীয়

এবার ‘অন্য রকম’ বিজয় দিবস



রাজনীতি সংবাদ ডেস্ক
প্রকাশের সময় : ১৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:৩৫ পূর্বাহ্ণ

মহান বিজয় দিবস আজ। ৯ মাস রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ১৯৭১ সালের এই দিনে পাকিস্তানি শাসন-শোষণ থেকে পুরো মুক্ত হয়েছিল জাতি। তবে এবার ভিন্ন এক প্রেক্ষাপটে হাজির হয়েছে এই বিজয় দিবস। ‘অন্য রকম’ পরিবেশে উদযাপন হবে বিজয়ের এই বার্ষিকী। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে স্বৈরাচারী শাসনের অবসানের পর এই প্রথম উদযাপন হতে যাচ্ছে বিজয় দিবস।

জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে প্রায় দেড় হাজার মানুষ জীবন উৎসর্গ করেছেন। আহত ও পঙ্গুত্ববরণ করেছেন কয়েক হাজার মানুষ। তাদের এই ত্যাগের বিনিময়ে স্বৈরাচারী শাসকের পতনকে অনেকে দ্বিতীয় স্বাধীনতা বলে আখ্যা দিয়েছেন।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে সূচনা হওয়া আন্দোলন গণঅভ্যুত্থানে পরিণত করতে এতে যুক্ত হয়েছিলেন সব শ্রেণি-পেশার মানুষ। সবার সম্মিলিত ত্যাগ আর আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন এবং শেখ হাসিনার ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়। শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার রাষ্ট্রের সংস্কার ও একটি জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের লক্ষ্যে কাজ করছে।

৫ আগস্টের অভ্যুত্থানের পর এবার ভিন্ন এক পরিবেশ দেশে। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের নেতাদের প্রায় সবাই আত্মগোপনে। অনেকে গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে। দলটির কর্মীরাও আর দৃশ্যপটে নেই। বিএনপি, জামায়াতসহ স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে যুক্ত রাজনৈতিক দলগুলো এবং তাদের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা এবার স্বাধীনভাবে বিজয় দিবস উদ্‌যাপনের সুযোগ পেয়েছেন।

আওয়ামী লীগের ১৬ বছরের শাসন আমলে নানা বিধি-নিষেধের মধ্যে বিজয় দিবস উদযাপন করতে হয়েছে তৎকালীন বিরোধী দলগুলোকে। গ্রেপ্তার-নির্যাতন ও হয়রানির ভয়ে বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানেও অংশ নিতে পারেননি অনেকে।

তাই এবার নতুন প্রেক্ষাপটে নতুন উদ্দীপনায় উদযাপন হতে যাচ্ছে বিজয় দিবস। এবারের এই দিবসে মহান মুক্তিযুদ্ধে জীবন উৎসর্গকারী বীর মুক্তিযোদ্ধাদের গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করা হবে। পাশাপাশি ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানে জীবন দেয়া শহীদদেরও স্মরণ করবে পুরো দেশ।

জুলাই-আগস্টের অভ্যুত্থানে অংশ নিয়ে স্বৈরাচারী সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকা রাষ্ট্রীয় বাহিনীর গুলি, আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের হামলায় আহত অনেকে এখনো হাসপাতালে কাতরাচ্ছেন। কেউ হাত হারিয়েছেন, কেউ পা। কারও চোখের দৃষ্টি কেড়ে নিয়েছে স্বৈরাচারের বুলেট। আহত এই মানুষদের রক্তের দাগ এখনো শুকায়নি।

যে আকাঙ্ক্ষা নিয়ে তারা সরকার পতনের আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন তা পূরণে এবারের বিজয় দিবসে আবারো শপথ নেবে সর্বস্তরের মানুষ। বৈষম্যহীন নতুন বাংলাদেশ গড়ে ছাত্র-জনতা আবারো মুষ্টিবদ্ধ শপথ নেবে বিজয় দিবসে।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত বাংলাদেশকে অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক চেতনায় গড়ে তোলার যে স্বপ্ন ছিল বিগত সময়ে নানা কারণে তা পুরো অর্জিত হয়নি। রাজনৈতিক হানাহানি, দুর্নীতি-দুর্বৃত্তায়নের কারণে মলিন হয়ে পড়েছিল বিজয়ের ক্যানভাস। ৫ আগস্টের পর বৈষম্যমুক্ত নতুন এক বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় ঘোষণা করা হয়েছে ছাত্র-জনতার তরফে। নতুন বাংলাদেশ গড়তে একগুচ্ছ সংস্কার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে সরকার। গঠন করা হয়েছে সংশ্লিষ্ট সংস্কার কমিশন। সংস্কারে সায় দিয়েছে প্রায় সব রাজনৈতিক দল। তাই অপার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে নতুন করে দেশ গড়ার।

দেশে আর যাতে কোনো শাসক স্বৈরাচারী হতে না পারে। লুটপাট করে রাষ্ট্রীয় সম্পদ বিদেশে পাচার করতে না পারে। নাগরিক হিসেবে সবাই সমান অধিকার ভোগ করতে পারে- এমনটিই হবে এবারের বিজয় দিবসের অঙ্গীকার।

এই দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস পৃথক বাণী দিয়েছেন। দেশবাসীকে বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানানোর পাশাপাশি তারা গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেছেন অগণিত বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদের আত্মত্যাগের কথা, যাদের ত্যাগের বিনিময়ে চূড়ান্ত বিজয় অর্জন সম্ভব হয়েছিল।

যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান বিজয় দিবস উদযাপনে জাতীয় পর্যায়ে ব্যাপক কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। আজ প্রত্যুষে ঢাকায় ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসটির সূচনা হবে। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন এবং প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।

এর পর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজমের নেতৃত্বে বীরশ্রেষ্ঠ পরিবার, ও বীর মুক্তিযোদ্ধারা পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। বিদেশি কূটনীতিক এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের সদস্যসহ সর্বস্তরের মানুষ পুষ্পস্তবক অর্পণ করে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন। বঙ্গভবনে অপরাহ্নে বীরশ্রেষ্ঠদের পরিবারকে সংবর্ধনা দেওয়া হবে।

মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন কর্মসূচি নিয়েছে। বিএনপির কর্মসূচিতে রয়েছে– আজ ভোরে দলীয় সব কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন, সকাল সাড়ে ৭টায় সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ ও সেখান থেকে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবরে পুষ্পমাল্য অর্পণ এবং দুপুর ২টায় মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে ‘সবার আগে বাংলাদেশ’-এর উদ্যোগে ‘সর্বজনীন কনসার্ট’। এ উপলক্ষে পোস্টার প্রকাশ এবং নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে আলোকসজ্জা করা হবে। এ ছাড়া গতকাল রোববার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে আলোচনা সভা করেছে দলটি।

জামায়াতে ইসলামীর কর্মসূচিতে রয়েছে–সকাল ১০টায় দলের ঢাকা মহানগর উত্তরের উদ্যোগে রাজধানীর উত্তরার জমজম টাওয়ারের সামনে থেকে এবং মহানগর দক্ষিণের উদ্যোগে বিজয়নগর থেকে বিজয় র‌্যালি।

এ ছাড়া গণতন্ত্র মঞ্চ, বাম গণতান্ত্রিক জোট, বিকল্পধারা বাংলাদেশ, এলডিপি, সিপিবি, বাসদ, গণফোরাম, বাংলাদেশ জাসদ, জেএসডি, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, গণসংহতি আন্দোলন, বাসদ (মার্ক্সবাদী) সহ বিভিন্ন দল ও সংগঠন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।

আরও পড়ুন: গুমের পর অনেককেই মাথায় গুলি করে হত্যা, লাশ ফেলা হয় নদীতে

মন্তব্য করুন
Rajniti Sangbad


আরও খবর