রাজনীতি সংবাদ ডেস্ক
প্রকাশের সময় : ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:০৫ পূর্বাহ্ণ
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক বেয়াই ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন দেশ ছেড়ে সুদূর সুইজারল্যান্ডে বসবাস করছেন। তার ছেলে খন্দকার মাশরুর হোসেন মিতু শেখ হাসিনার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের সাবেক স্বামী। মোশাররফ হোসেন তিন মেয়াদে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এলজিইডি, বিআরটিএ, সড়ক, বিএডিসিসহ বিভিন্ন সরকারি বিভাগের ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণ, আত্মীয়স্বজনের মাধ্যমে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে অনিয়ম, অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং বিদেশে অর্থ পাচারে জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠে।
গত বছরের ৬ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, সাবেক স্থানীয় সরকারমন্ত্রী ও ফরিদপুর সদর আসনের (ফরিদপুর-৩) এমপি ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে জাতীয় সংসদ থেকে তিন মাসের ছুটি নিয়েছেন। চিকিৎসার জন্য তিনি বর্তমানে সুইজারল্যান্ডে অবস্থান করছেন।
ওই বছরের ৫ সেপ্টেম্বর তার ছুটির আবেদন পাঠ করে শোনান সংসদের সভাপতির দায়িত্ব পালনকারী ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু। পরে কণ্ঠভোটে পাস হয়।
সর্বশেষ ২০২১ সালের ৪ এপ্রিল সংসদ অধিবেশনে যোগ দেন মোশাররফ। সেটা ছিল একাদশ জাতীয় সংসদের ১২তম অধিবেশন। মাত্র তিন দিনের জন্য ওই অধিবেশন বসে।
সংসদের কার্যপ্রণালি বিধির ১৭৯ (২) এ অনুসারে ৯ জুলাই ২০২৩ থেকে পরবর্তী ৯০ বৈঠকের জন্য ছুটির জন্য ই-মেইলে আবেদন করেন বলে জানান শামসুল হক টুকু। সংসদের কার্যপ্রণালি বিধি অনুযায়ী এ ছুটির আবেদন সংসদে পাঠ করে শোনানো হয় এবং ভোটে দেওয়া হয়।
ছুটির আবেদনে খন্দকার মোশাররফ হোসেন উল্লেখ করেছেন, ব্যাকপেইন, অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপসহ নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছি। উন্নত চিকিৎসার জন্য সুইজারল্যান্ডে অবস্থান করছি। সংসদ কার্যপ্রণালি বিধির ১৭৯ এর ২ বিধি অনুসারে ৯ জুলাই ২০২৩ থেকে পরবর্তী একাধিকক্রমে ৯০ বৈঠক দিবস সংসদে অনুপস্থিতির ছুটি মঞ্জুর প্রার্থনা করছি। জানতে চাইলে খন্দকার মোশাররফ হোসেন সুইজারল্যান্ড থেকে মোবাইল ফোনে গণমাধ্যমকে জানান, তিনি ছুটির আবেদন করেছেন। তার শরীরের অবস্থা বেশি ভালো নয়।
ফরিদপুর-৩ (সদর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেনের ১০ বছরের সাম্রাজ্যের পতনের পর তার ফরিদপুরের বাড়িঘরগুলো বিরানভূমিতে পরিণত হয়েছে। জনমানবহীন বাড়িগুলো গেট লাগিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আগে সাধারণ মানুষ প্রবেশ করতে পারলেও বর্তমানে সে সুযোগ নেই। ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে খন্দকার মোশাররফ গড়ে তুলেছেন অঢেল সম্পদ। তার অনুসারীরাও দুর্নীতি আর লুটপাটের মাধ্যমে হাজার কোটি টাকা পাচারে অভিযুক্ত।
দেশের বহুল আলোচিত দুই হাজার কোটি টাকা মানি লন্ডারিংয়ের মামলায় মোশাররফ হোসেনের অনেক অনুসারী এখনো কারাগারে। তবে দুর্নীতির মহোৎসব চললেও ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে তখন রক্ষা পান মোশাররফ। তারপর দেশ ছেড়ে সুদূর সুইজারল্যান্ডে বসবাস করছেন শেখ হাসিনার বেয়াই খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
সরেজমিন দেখা যায়, ফরিদপুর শহরে গড়ে তোলা খন্দকার মোশাররফ হোসেনের তিনটি জৌলুসপূর্ণ বাড়ি। যার বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় শত কোটি টাকা। এক সময় ক্ষমতার কেন্দ্র হিসাবে পরিচিত খন্দকার মোশাররফের বাড়িগুলো এখন খাঁ খাঁ করছে। ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন ২০০৯ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত তিন মেয়াদে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। প্রথমবার শ্রমমন্ত্রী, এরপর প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী এবং সর্বশেষ স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন। অনিয়ম, অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং বিদেশে অর্থ পাচারে জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠে।
খন্দকার মোশাররফের ‘হেলমেট বাহিনী’র হাতে শুধু বিএনপি নেতারাই নন, আওয়ামী লীগের অনেকে হামলা-নির্যাতনের শিকার হন বলে অভিযোগ রয়েছে। দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে শত শত কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন করেন। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ব্যবহার করে অতিশয় নিরীহ প্রতিবেশীদের ওপর নির্মম নির্যাতনের পথ বেছে নেন। অনেকের কাছ থেকে জোর করে জমিজমা লিখে নেন বলে অভিযোগ রয়েছে। যারা জমি লিখে দিতে চাননি তাদেরটা জোর করেই নিতেন তিনি। এ শোক সইতে না পেরে শোকে কষ্টে মারা গেছেন কেউ কেউ।
জানা গেছে, শেখ হাসিনার সঙ্গে আত্মীয়তার সুবাদে এমপি ও মন্ত্রী হয়ে খন্দকার মোশাররফ বিশেষ বাহিনী তৈরি করে দুর্নীতির রাজত্ব কায়েম করেন। যার মধ্যে হেলমেট বাহিনী ফরিদপুরে ব্যাপক নাম ছড়ায়। বাড়ি তৈরির বিলাসিতায় মেতে ওঠেন তিনি। শহরের বদরপুর, কমলাপুর এবং ডিক্রিরচরে সরকারি খাস ও ব্যক্তিমালিকানার জায়গাজমি নামমাত্র মূল্যে কিনে ও দখল করে জেলা সদরেই নির্মাণ করেন বিলাসবহুল ও নয়নাভিরাম তিনটি বাড়ি।
দুর্নীতি ও দখলবাজির কেলেঙ্কারিতে ব্যাপক সমালোচিত হয়ে পতন হয় তার। ২০২০ সালের জুন মাসে ফরিদপুরে কথিত এক শুদ্ধি অভিযানের পর ২৬ জুন ঢাকার কাফরুল থানায় খন্দকার মোশাররফের ভাই খন্দকার বাবরসহ মোশাররফ অনুসারীদের বিরুদ্ধে দুই হাজার কোটি টাকা পাচারের একটি মামলা করেন পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) পরিদর্শক এসএম মিরাজ আল মাহমুদ। ওই শুদ্ধি অভিযানে খন্দকার মোশাররফের একের পর এক আস্থাভাজন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়। হত্যাসহ অসংখ্য মামলায় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতাদের কারাগারে ঢোকানো হয়।
আরও পড়ুন: মির্জা আজমের ৮০টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ৯০৭ কোটি টাকার লেনদেন