রাজনীতি সংবাদ ডেস্ক
প্রকাশের সময় : ২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭:০৯ অপরাহ্ণ
ভারতের আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করেছে উগ্রপন্থী ভারতীয়রা। এ সময় তারা দূতাবাসে উড়ন্ত বাংলাদেশের লাল-সবুজ পতাকা হেনেহিঁচড়ে ছিঁড়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। ‘হিন্দু সংঘর্ষ সমিতি’ নামের একটি উগ্রবাদী সংগঠনের সমর্থকরা এই হামলা চালায়।
আজ সোমবার দুপুরে এই হামলার ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় একটি সূত্র জানায়, বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রেপ্তারের বিরুদ্ধে ‘হিন্দু সংগ্রাম স্মৃতি’র সভা ছিল আগরতলার বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনের সামনে। সভা শেষে সংগঠনের একটি প্রতিনিধি দল হাইকমিশন কার্যালয়ে স্মারকলিপি দিতে যায়। এসময় বাইরে থাকা কয়েক যুবক হঠাৎ সহকারী হাইকমিশন কার্যালয়ে ঢুকে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা নামিয়ে ছিড়ে ফেলে। তারা হাইকমিশন কার্যালয়ের কিছু সাইনবোর্ড ভাঙচুর করে ও আগুন লাগিয়ে দেয়।
এই ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এতে দেখা যায়, গেরুয়া পতাকা এবং পট্টিধারী কিছু লোক বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনে ঢুকছে। তারা ফ্ল্যাগস্ট্যান্ড থেকে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা নামিয়ে ছিঁড়ে ফেলে। পুলিশ তাদের থামানোর চেষ্টা করে এবং হাইকমিশন চত্বর থেকে বের করে দেয়। ঘটনাস্থলে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) সদস্যদেরও দেখা যায়।
আগরতলা থেকে ঢাকা হয়ে কলকাতার পথে চলা শ্যামলী পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাস গত শনিবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দুর্ঘটনায় পড়ে। ত্রিপুরার পরিবহনমন্ত্রী ও ভারতের একাধিক সংবাদমাধ্যম এই দুর্ঘটনাকে হামলা বলে উল্লেখ করে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এসপি মোহাম্মদ জাবেদুর রহমান রোববার দুপুরে তার কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে ভারতের সংবাদমাধ্যম ও পরিবহনমন্ত্রীর দাবি প্রত্যাখান করে বলেন, বাসের যাত্রীদের ওপর হামলার কোনো ঘটনা ঘটেনি। বাসটি দুর্ঘটনার কবলে পড়েছিল।
সংবাদ সম্মেলনে শ্যামলী পরিবহনের বাসের চালক আসাদুল হক জানান, সকাল সাড়ে ৯টায় আগরতলা থেকে ছেড়ে আসা শ্যামলী পরিবহনের যাত্রীবাহী বাসটি ১১টার দিকে আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার চান্দিয়ারা এলাকায় একটি ট্রাক যাত্রীবাহী বাসটিকে ওভারটেক করে। তখন বাসচালক ব্রেক করলেও একটি ভ্যানে ধাক্কা লাগে। এতে ভ্যানচালক ইব্রাহিম (৩০) সামান্য আহত হন।
এ নিয়ে ইব্রাহিম ও বাসচালক মো. আসাদুল হকের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। পরে খাঁটিহাতা হাইওয়ে থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে রেকারের মাধ্যমে ভ্যানটি উদ্ধার করে। এ সময় শ্যামলী পরিবহনের কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধি মেহেদী হাসান ও ভ্যান কর্তৃপক্ষের মধ্যে আলোচনায় মীমাংসা হলে বাসটি ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়।
বাসে হামলা হয়নি জানিয়ে চালক আসাদুল হক সাংবাদিকদের বলেন, ‘ভারতীয় যাত্রীদের সঙ্গেও স্থানীয় সাধারণ মানুষের কারো বাকবিতণ্ডা হয়নি। ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে বাসে হামলার খবর দেখে আমিও অবাক হয়েছি।’
ত্রিপুরা সরকারের পরিবহনমন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী তার ভেরিফায়েড এক্স অ্যাকাউন্টে বাসের ছবি পোস্ট দিয়ে লিখেছেন, ‘ত্রিপুরা থেকে কলকাতা যাবার পথে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিশ্বরোডে আক্রান্ত হয়েছে শ্যামলী পরিবহন। বাসটিকে দুর্ঘটনায় ফেলতে ধাক্কা দেয় একটি পণ্যবাহী ট্রাক। এতে একটি অটোর সাথে বাসের সংঘর্ষ হয়। এ সময় স্থানীয় লোকজন ভারতীয় যাত্রীদের ক্রমাগত হুমকি দেয়। ভারতবিরোধী শ্লোগান ও কটূক্তি করে।’
সুশান্ত চৌধুরীর এই অভিযোগ সত্য নয় বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান চালক আসাদুল হক। তবে ভারত সংবাদমাধ্যম টিভিনাইন ‘আর কত নামবে? বাংলাদেশে আক্রান্ত কলকাতাগামী বাস, ভারতীয়দের দিল প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি’ শিরোনামে খবর প্রকাশ করে। এর কয়েক ঘণ্টা পর আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলার ঘটনাটি ঘটে।
কূটনৈতিক রীতি অনুযায়ী, সহকারী হাইকমিশন বাংলাদেশের সার্বভৌম সম্পদ। এর ভেতরে ভারতের আইন প্রযোজ্য নয়। কূটনৈতিক দায়মুক্তি থাকায়, কোনো দেশের দূতাবাসে স্বাগতিক দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রবেশ করতে পারে না।
ভারতের দুঃখপ্রকাশ
আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলা চালানোর ঘটনায় দুঃখপ্রকাশ করেছে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সোমবার মন্ত্রণালয়টির এক বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়।
এতে বলা হয়, ভারতের আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী দূতাবাসে হামলার ঘটনাটি দুঃখজনক। কূটনৈতিক এবং কনস্যুলার সম্পত্তি কোনো অবস্থাতেই হামলার লক্ষ্যবস্তু করা উচিত নয়। ভারত সরকার নয়া দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশন ও অন্য স্থানে বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে নিরাপত্তা জোরদার করার ব্যবস্থা নিচ্ছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়।
হামলার ঘটনায় ক্ষুব্ধ বাংলাদেশ
ভারতের ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলায় বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনে হামলার ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বাংলাদেশ। আজ রাতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ প্রতিক্রিয়া জানানো হয়।
এতে বলা হয়, সোমবার দুপুরে আগরতলার হিন্দু সংঘর্ষ সমিতির বিক্ষোভকারীদের দ্বারা বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনের প্রাঙ্গণে হিংসাত্মক বিক্ষোভ ও আক্রমণের কারণে বাংলাদেশ সরকার গভীরভাবে ক্ষুব্ধ।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, প্রাপ্ত তথ্য চূড়ান্তভাবে প্রমাণ করে যে বিক্ষোভকারীরা পূর্বপরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনের প্রধান ফটক ভেঙে প্রাঙ্গণে প্রবেশ করে। এসময় স্থানীয় আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের উপস্থিতিতে তারা পতাকার খুঁটি ভাঙচুর করে, বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা অবমাননা করে এবং সহকারী হাইকমিশনের অভ্যন্তরের সম্পত্তিও ক্ষতিগ্রস্ত করে। দুঃখের বিষয়, হাইকমিশন প্রাঙ্গণ রক্ষার দায়িত্বে থাকা স্থানীয় পুলিশ সদস্যরা শুরু থেকেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সক্রিয় ভূমিকা রাখেনি। সহকারী হাইকমিশনের সব সদস্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশে শান্তিরক্ষী বাহিনী মোতায়নের প্রস্তাব মমতার