শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর, ২০২৪ | ১৪ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৬ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬

মূলপাতা চট্ট-মেট্টো

চট্টগ্রামে আইনজীবী হত্যা: ডিসি-ওসিকে বদলি


ডিসি লিয়াকত আলী খান ও ওসি ফজলুল কাদের চৌধুরী। ছবি: সংগৃহীত

রাজনীতি সংবাদ প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম প্রকাশের সময় :২৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১১:৪৬ : অপরাহ্ণ

আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যাকাণ্ড তদন্তে পুলিশের প্রাথমিক ব্যর্থতার কারণে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) দক্ষিণ জোনের উপকমিশনার (ডিসি) লিয়াকত আলী খানকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তার স্থলে বন্দর জোনের ডিসি শাকিলা সোলতানাকে পদায়ন করা হয়েছে। লিয়াকত আলীকে বদলি করে পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেন্ট বিভাগে পদায়ন করা হয়েছে।

এ ছাড়া সিএমপি দক্ষিণ জোনের অধীনে কোতোয়ালী থানার ওসি মুহাম্মদ ফজলুল কাদের চৌধুরীকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তার স্থলে সিএমপির বিশেষ শাখায় কর্মরত পরিদর্শক মো. আবদুল করিমকে পদায়ন করা হয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার সিএমপি কমিশনার হাসিব আজিজ এই বদলি আদেশ জারি করেন ।

এদিন পর্যন্ত ৩০ জনের অধিক লোককে গ্রেপ্তারের তথ্য দিয়েছে পুলিশ। কিন্তু তাদের মধ্যে হত্যাকাণ্ডে জড়িত কারা এবং তাদের ভূমিকা কী ছিল তা স্পষ্ট করতে পারেনি পুলিশ। অন্তর্বর্তী সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে বিষয়টি নজরদারি করা হয়।

এদিকে, বুধবারের মতো বৃহস্পতিবারও চট্টগ্রাম আদালতের বিচারিক কার্যক্রম বন্ধ ছিল। সহকর্মী হত্যার প্রতিবাদে চট্টগ্রাম আদালতে বিক্ষোভ সমাবেশ করে আইনজীবী নেতারা।

বিক্ষোভ সমাবেশে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি নাজিম উদ্দিন চৌধুরী চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে ঘিরে আদালত প্রাঙ্গণের ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, ‘চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে যখন কারাগারে নেওয়ার জন্য প্রিজন ভ্যানে তোলা হলো, তখন পুলিশ কেন নিষ্ক্রিয় ছিল? কাদের ইন্ধনে চিন্ময় কৃষ্ণকে তিন ঘণ্টা রাস্তায় দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছিল? তাকে হ্যান্ডমাইক দেওয়া হয়েছিল। প্রিজন ভ্যান থেকে তিনি কীভাবে বক্তৃতা দিলেন?’

 

সিএমপি কমিশনারকে আল্টিমেটাম দিয়ে আইনজীবী সমিতির সভাপতি বলেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে আইনজীবী সাইফুলের খুনিদের গ্রেপ্তার করা না হলে আপনি পদে থাকতে পারবেন না।

প্রসঙ্গত, গত ২৫ নভেম্বর বিকেলে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে যাওয়ার সময় শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সংগঠন আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘের (ইসকন) নেতা চিম্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশ।

রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে পরদিন তাকে চট্টগ্রাম আদালতে নেওয়া হয়। আদালত জামিন না মঞ্জুর করে তাকে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেন। জামিন না দেওয়ার জের ধরে সেখানে বিক্ষোভ করেন ইসকনের সমর্থকরা। এ সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায় তারা। সংঘর্ষ চলাকালে আদালত এলাকায় মসজিদসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে হামলা চালায় তারা।

একপর্যায়ে বিকেলে আদালতের প্রধান ফটকের বিপরীতে রঙ্গম কনভেনশন হলের গলিতে একদল ইসকন অনুসারীর হাতে খুন হন অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম আলিফ।

পুলিশের একটি সূত্র জানায়, বিকেল পৌনে ৪টার দিকে ইসকনের অনুসারীরা আদালত এলাকায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে হামলা শুরু করলে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ তাদের বাধা দেন। এরপর তাকে তুলে নিয়ে আদালতের প্রধান ফটকের বিপরীতে রঙ্গম টাওয়ারের সামনে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে সাইফুলকে কুপিয়ে আহত করা হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় সাইফুলকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেলে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

আলিফ সহকারী সরকারি কৌঁসুলি (এপিপি) হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি চট্টগ্রামে লোহাগাড়া উপজেলার চুনতি ইউনিয়নের জালাল উদ্দিনের ছেলে। তিনি আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। তিনি ২০১৮ সালে জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য হন। পরে তিনি হাইকোর্টের আইনজীবী হিসেবেও নিবন্ধন পান।

আলিফ হত্যার ঘটনায় নগরীর কোতোয়ালি থানায় দুটি মামলা দায়ের হয়েছে।

আরও পড়ুন: চট্টগ্রাম আদালত ভবনে ইসকন সমর্থকদের তাণ্ডব, আইনজীবীকে কুপিয়ে হত্যা

মন্তব্য করুন
Rajniti Sangbad


আরও খবর