ট্রাকচাপায় পিষ্ট হাসনাত-সারজিসের গাড়ি, হত্যাচেষ্টার অভিযোগ

চট্টগ্রামে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুই সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ ও সারজিস আলমকে বহনকারী প্রাইভেটকার একটি গাড়ি ট্রাকচাপায় পিষ্ট হয়েছে। এতে গাড়িটির সামনের অংশ দুমড়ে-মুচড়ে গেছে। তবে এই ঘটনায় দুই সমন্বয়ক অক্ষত রয়েছেন।

আজ বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে এই দুর্ঘটনা ঘটে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আজ হাসনাত আবদুল্লাহ ও সারজিস আলম প্রাইভেটকারে চড়ে চট্টগ্রামে নিহত আইনজীবী আলিফের কবর জিয়ারত করতে লোহাগাড়া উপজেলার চুনতির ফারাঙ্গায় যান। ফেরার পথে তাদের প্রাইভেটকারটিকে চাপা দেয় একটি ট্রাক। এতে প্রাইভেটকারটির সামনের অংশ দুমড়েমুচড়ে যায়। পুলিশ ট্রাক ও প্রাইভেটকারটি থানায় নিয়ে যায়। একই সঙ্গে ট্রাকটির চালক ও হেল্পারকে আটক করে।

লোহাগাড়া থানার দায়িত্বরত এএসআই মো. আলিম দুর্ঘটনার তথ্য নিশ্চিত করে জানান, এই ঘটনায় একটি ট্রাক জব্দ করা হয়েছে। জিডির প্রক্রিয়া চলছে। তবে কীভাবে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে তা প্রাথমিকভাবে জানাতে পারেননি এএসআই আলিম।

পুলিশ জানিয়েছে, প্রাথমিক তদন্তে ট্রাক চালক ময়মনসিংহ থেকে কক্সবাজারে মালামাল খালাস করে আসার কথা বললেও মাল খালাসের কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র আব্দুল হান্নান মাসউদ তার ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘সারজিস আলম ও হাসনাত আব্দুল্লাহ ভাইকে ট্রাকচাপা দিয়ে হত্যাচেষ্টা করা হয়েছে। ইসকনের জঙ্গী ও ভারতীয় ‘র’ এর যৌথ তত্ত্বাবধানে এটা হয়েছে বলে আমাদের বিশ্বাস।’

এর আগে আজ দুপুরে চট্টগ্রাম মহানগর আদালতের নিহত আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফের দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। নগরীর জমিয়তুল ফালাহ মসজিদ মাঠে ওই জানাজায় অংশ নেন হাসনাত আবদুল্লাহ এবং সারজিস আলম। পরবর্তীতে ইফুল ইসলাম আলিফের কবর জিয়ারত করতে লোহাগাড়ার চুনতি এলাকায় যান।

প্রসঙ্গত, রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় গ্রেপ্তার সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সংগঠন আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘের (ইসকন) নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গতকাল মঙ্গলবার চট্টগ্রাম আদালতে নেওয়া হলে সেখানে বিক্ষোভ করেন তার অনুসারীরা।

এ সময় বিকেলে চট্টগ্রাম আদালত এলাকায় সাইফুল ইসলাম আলিফ নামের এক আইনজীবীকে কুপিয়ে হত্যা করেন উগ্রবাদী সংগঠন ইসকনের সমর্থকরা। আলিফ সহকারী সরকারি কৌঁসুলি (এপিপি) হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

পুলিশের একটি সূত্র জানায়, বিকেল পৌনে ৪টার দিকে ইসকনের অনুসারীরা আদালত এলাকায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে হামলা শুরু করলে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ তাদের বাধা দেন। এরপর তাকে তুলে নিয়ে আদালতের প্রধান ফটকের বিপরীতে রঙ্গম টাওয়ারের সামনে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে সাইফুলকে কুপিয়ে আহত করা হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় সাইফুলকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেলে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

নিহত সাইফুল ইসলাম আলিফ চট্টগ্রামে লোহাগাড়া উপজেলার চুনতি ইউনিয়নের জালাল উদ্দিনের ছেলে। তিনি আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। তিনি ২০১৮ সালে জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য হন। পরে তিনি হাইকোর্টের আইনজীবী হিসেবেও নিবন্ধন পান।

এদিকে, আইনজীবীকে হত্যার ঘটনায় চট্টগ্রামে রাতভর অভিযান চালিয়ে ৩০ জনকে আটক করেছে যৌথবাহিনী। এ ঘটনায় নগরের কোতোয়ালি থানায় দুইটি মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

আরও পড়ুন: ইসকনকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে নিষিদ্ধ করতে হবে: হাসনাত আবদুল্লাহ