রাজনীতি সংবাদ প্রতিবেদক, ঢাকা প্রকাশের সময় :২৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:৩৯ : পূর্বাহ্ণ
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সংগঠন আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘের (ইসকন) নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাশকে গ্রেপ্তার এবং তার জামিন নাকচ করায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ভারত।
আজ মঙ্গলবার দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে এই উদ্বেগ জানায় দিল্লি।
এদিকে চিন্ময় দাশের গ্রেপ্তারে ভারতের উদ্বেগ প্রকাশের পাল্টা প্রতিক্রিয়া দিয়েছে বাংলাদেশ। রাতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে সেই উদ্বেগের জবাব দেওয়া হয়।
ভারতের বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশ সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র শ্রী চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেপ্তার ও তার জামিন নাকচের বিষয়টি গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি। বাংলাদেশে ‘উগ্রপন্থিদের’ দ্বারা হিন্দু এবং অন্যান্য সংখ্যালঘুদের ওপর একাধিক হামলার পর এমন ঘটনা ঘটলো। এ ছাড়া সংখ্যালঘুদের ঘরবাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের পাশাপাশি মন্দির অপবিত্রতার ঘটনাও ঘটেছে।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, দুর্ভাগ্যজনক যে, যখন এসব ঘটনায় অভিযুক্তরা অধরা রয়ে গেছে, তখন শান্তিপূর্ণ সমাবেশের মাধ্যমে ন্যায্য দাবি উপস্থাপনকারী একজন ধর্মীয় নেতাকে গ্রেপ্তার করা উচিত নয়। আমরা শ্রী দাসের গ্রেপ্তারের বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদকারী সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার বিষয়টিও উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করেছি।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, আমরা বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষকে হিন্দু ও সকল সংখ্যালঘুদের শান্তিপূর্ণ সমাবেশ ও মত প্রকাশের স্বাধীনতাসহ নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানাই।
বাংলাদেশের জবাব
চিন্ময় দাশকে গ্রেপ্তার নিয়ে ভারতের প্রতিক্রিয়ার জবাব দিয়েছে বাংলাদেশ। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গতকাল এ বিষয়ে দেওয়া বিবৃতিতে বলেছে, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ভারতের বিবৃতির বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছে।
অতিশয় হতাশা ও গভীরভাবে অনুভূতিতে আঘাতের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকার উল্লেখ করছে যে, শ্রী চিন্ময় কৃষ্ণ দাশকে নির্দিষ্ট অভিযোগে গ্রেপ্তারের পর থেকে কিছু মহল তা নিয়ে ভুল তথ্য ছড়িয়ে দিচ্ছে।
বাংলাদেশ সরকার জানাচ্ছে যে, এমন অপ্রমাণিত বিবৃতি শুধু সত্যের অপলাপই নয়, একই সঙ্গে তা দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ও বোঝাপড়ার চেতনার পরিপন্থি। সব ধর্মীয় বিশ্বাসের মানুষের মধ্যে যে সম্প্রীতি আছে তার প্রতিফলন নয় এই বিবৃতি। এ বিষয়ে সরকার ও জনগণের প্রতিশ্রুতি এবং প্রচেষ্টার প্রতিফলন করে না। বাংলাদেশি জনগণের বিরুদ্ধে ভয়াবহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িতদের দায়মুক্তির সংস্কৃতি চূড়ান্তভাবে বন্ধে বাংলাদেশ সরকার দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। এভাবে ধর্মীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ ও সংখ্যালঘুদের বিষয়কেও একই সমানভাবে দেখে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ দৃঢ়তার সঙ্গে এটা নিশ্চিত করে যে, ধর্মীয় পরিচয়ে নিজ নিজ আচার-অনুষ্ঠান পালনের অধিকার, বাধা ছাড়াই মত প্রকাশ করার অধিকার আছে সব নাগরিকের, বিশেষ করে ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সদস্যদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা বাংলাদেশ সরকারের দায়িত্ব। গত মাসে শান্তিপূর্ণভাবে দুর্গাপূজা উদ্যাপনের মাধ্যমে তা আবারো প্রমাণিত হয়েছে।
বাংলাদেশ সরকার আবারো বলতে চায় যে, দেশের বিচারবিভাগ পুরো স্বাধীন এবং সরকার বিচারিক কাজে হস্তক্ষেপ করে না। উত্থাপিত বিষয়ে যে প্রশ্ন তোলা হয়েছে তা এখন আদালত দেখছে। দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি সমুন্নত রাখতেও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বাংলাদেশ সরকার। চট্টগ্রামে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে নৃশংসভাবে হত্যায় গভীরভাবে উদ্বিগ্ন সরকার। যেকোনো মূল্যে ধর্মীয় সম্প্রীতি বজায় রাখা নিশ্চিত করতে বন্দরনগরীতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে কর্তৃপক্ষ।
প্রসঙ্গত, জাতীয় পতাকা অবমাননার অভিযোগে দায়ের হওয়া মামলায় চিন্ময় দাসকে গত ২৫ নভেম্বর বিকেল ৫টার দিকে ঢাকা শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর তাকে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
আজ মঙ্গলবার সকালে তাকে আদালতে হাজির করা হয়। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন-৬ এর ম্যাজিস্ট্রেট কাজী শরিফুল ইসলাম তার জামিন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
জামিন না মঞ্জুর হওয়ার পর বিকেল ৩টার দিকে চিন্ময় দাসকে প্রিজনভ্যানে করে কারাগারে নিয়ে যাওয়ার সময় তার সমর্থকরা পুলিশকে বাধা দেয়। তারা চট্টগ্রাম কোর্ট ভবনের নিচে সড়কের মাঝে শুয়ে পড়েন, ভ্যানের চারপাশে মানবঢাল তৈরি করেন। প্রায় তিন ঘণ্টা প্রিজনভ্যান আটকে রাখার পর পুলিশ বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলে তাদের সঙ্গে সংঘর্ষ শুরু হয়। এ সময় বাধাপ্রধানকারীদের ওপর লাঠিচার্জ করে পুলিশ। একপর্যায়ে পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে চিন্ময় দাসের সমর্থকদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
সংঘর্ষের একপর্যায়ে চট্টগ্রাম আদালতের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর সাইফুল ইসলাম আলিফকে কুপিয়ে হত্যা করে ইসকনের সমর্থকরা।
আরও পড়ুন: চট্টগ্রাম আদালত ভবনে ইসকন সমর্থকদের তাণ্ডব, আইনজীবীকে কুপিয়ে হত্যা