রাজনীতি সংবাদ প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম প্রকাশের সময় :২৬ নভেম্বর, ২০২৪ ৫:৩৪ : অপরাহ্ণ
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সংগঠন আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘের (ইসকন) নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে জামিন না দেওয়ার জেরে চট্টগ্রাম আদালত ভবনে তাণ্ডব চালিয়েছে তার সমর্থকরা। এ সময় কুপিয়ে চট্টগ্রাম আদালতের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর সাইফুল ইসলাম আলিফকে হত্যা করা হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার বিকেলে চট্টগ্রাম আদালত ভবনে এ ঘটনা ঘটে।
জানা গেছে, নিহত সাইফুল ইসলাম আলিফ চট্টগ্রামে লোহাগাড়া উপজেলার চুনতি ইউনিয়নের জালাল উদ্দিনের ছেলে। তিনি আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। তিনি ২০১৮ সালে জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য হন। পরে তিনি হাইকোর্টের আইনজীবী হিসেবেও নিবন্ধন পান।
মোক্তার উদ্দিন সাগর নামে এক আইনজীবী জানান, আমার চোখের সামনে অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম আলিফকে কোপানো হয়েছে।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ তসলিম উদ্দীন বলেন, চট্টগ্রাম আদালতে সংঘর্ষের ঘটনায় ৭-৮ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে একজনকে মৃত ঘোষণা করা হয়েছে।
জাতীয় পতাকা অবমাননার অভিযোগে দায়ের হওয়া মামলায় চিন্ময় দাসকে গতকাল সোমবার বিকেল ৫টার দিকে ঢাকা শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর তাকে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
আজ কঠোর নিরাত্তায় সকাল ১০টা ৫০ মিনিটে তাকে আদালতে হাজির করা হয়। এ সময় আদালত প্রাঙ্গণে ভিড় করেন চিন্ময় দাসের সমর্থকরা।
জামিন না মঞ্জুর হওয়ার পর বিকেল ৩টার দিকে চিন্ময় দাসকে প্রিজনভ্যানে করে কারাগারে নিয়ে যাওয়ার সময় তার সমর্থকরা পুলিশকে বাধা দেয়। তারা চট্টগ্রাম কোর্ট ভবনের নিচে সড়কের মাঝে শুয়ে পড়েন, ভ্যানের চারপাশে মানবঢাল তৈরি করেন। প্রায় তিন ঘণ্টা প্রিজনভ্যান আটকে রাখার পর পুলিশ বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলে তাদের সঙ্গে সংঘর্ষ শুরু হয়। এ সময় বাধাপ্রধানকারীদের ওপর লাঠিচার্জ করে পুলিশ। একপর্যায়ে পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে চিন্ময় দাসের সমর্থকদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ সময় আদালত এলাকার মসজিদসহ বেশ কয়েকটি স্থাপনা ভাঙচুর করা হয়। ঘটনার পর ওই এলাকার পরিস্থিতি থমথমে হয়ে ওঠে।
কোতোয়ালি থানার ওসি ফজলুল কাদের চৌধুরী বলেন, ‘ইসকন নেতা চিন্ময় দাসের সমর্থকরা একটি মসজিদসহ বেশ কয়েকটি স্থাপনা ভাঙচুর চালায়। এই ঘটনায় বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে।
ঘটনায় আহত এনামুল হক নামে এক সেবাপ্রার্থী অভিযোগ করেন, তিনি জমি রেজিস্ট্রির জন্য আদালতে এসেছিলেন। তাঁর দাড়ি-টুপি-পাঞ্জাবি দেখায় ইসকনের কর্মীরা তার ওপর হামলা চালায়।
ইসকন নেতা চিন্ময় দাশ বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র ও চট্টগ্রামের হাটহাজারীর পুণ্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ।
চিন্ময় দাসের নেতৃত্বে চট্টগ্রাম ও রংপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় সনাতনী ধর্মাবলম্বীদের ৮ দফা দাবি নিয়ে বেশ কয়েকটি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
গত ২৫ অক্টোবর বিকেলে চট্টগ্রামের লালদীঘি মাঠে ৮ দফা দাবি আদায়ের লক্ষে সমাবেশের আয়োজন করে আলোচনায় আসেন চিন্ময় দাস। ওই সমাবেশ করা হয় বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চের নামে। সমাবেশে চিন্ময় দাস বাংলাদেশে হিন্দুদের মঠ-মন্দিরে হামলা বাড়িঘরে লুট, অগ্নিসংযোগসহ নানান অভিযোগ করেন। অথচ, তার বিরুদ্ধেই দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করার অভিযোগ রয়েছে। বিভিন্ন সময় তিনি উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়ে থাকেন।
গত ৩০ অক্টোবর চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের হয়। মো. ফিরোজ খান নামে এক ব্যক্তি বাদী হয়ে চট্টগ্রাম নগরীর কোতোয়ালি থানায় মামলাটি দায়ের করেন। জাতীয় পতাকার অবমাননার অভিযোগে রাষ্ট্রদ্রোহ আইনে এ মামলা হয়। মামলার পরই দুজনকে গ্রেপ্তার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
মামলায় অভিযোগে বলা হয়েছে, ৫ অগাস্ট গণঅভুত্থানের পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা নিউমার্কেট মোড়ে একটি জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে। গত ২৫ অক্টোবর লালদীঘি ময়দানে সনাতনীদের সমাবেশের দিন ওই পতাকার ওপর ইসকনের গেরুয়া রঙের ধর্মীয় পতাকা স্থাপন করে দেওয়া হয়, যা রাষ্ট্রের অখণ্ডতাকে অস্বীকার করার শামিল।
আরও পড়ুন: চট্টগ্রামে ইসকন নেতা চিন্ময়ের অনুসারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ