রাজনীতি সংবাদ ডেস্ক প্রকাশের সময় :২৪ নভেম্বর, ২০২৪ ৬:৪৪ : অপরাহ্ণ
ভারতের উত্তর প্রদেশ রাজ্যে একটি মুঘল আমলের জামে মসজিদের স্থানে এক সময় মন্দির ছিল দাবি করে আদালতে মামলা করা হয়েছে। এরপর আদালতের নির্দেশে সেখানে জরিপ পরিচালনার সময় পুলিশের সঙ্গে মুসল্লিদের সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় পুলিশ গুলি করে তিন মুসলিমকে হত্যা করেছে। আহত হয়েছেন আরও অন্তত ৩০ জন।
আজ রোববার সকালে উত্তর প্রদেশের সম্বল জেলায় এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এই ঘটনা উত্তর প্রদেশের রাজনৈতিক এবং সামাজিক মহলে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে।
আদালতে দায়ের করা মামলায় বাদী পক্ষের দাবি, মসজিদের স্থানে একসময় একটি মন্দির ছিল। পিটিশনে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘বাবরনামা’ ও ‘আইন-ই-আকবরি’ গ্রন্থে উল্লেখ আছে, ১৫২৯ সালে সম্রাট বাবর এই স্থানে থাকা মন্দির ধ্বংস করেছিলেন। এরপর আদালত বাদীর পিটিশনের ভিত্তিতে সেখানে জরিপ চালানোর নির্দেশ দিয়েছেন।
আদালতের নির্দেশে আজ সকালে জরিপ চালাতে গিয়েছিল একটি দল। ওই সময় সেখানে প্রায় ১ হাজার মুসল্লি জড়ো হন। তারা জরিপ চালাতে বাধা দেন। তারা পুলিশ ও জরিপকারী দলের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। এ সময় তারা অন্তত ১০টি যানবাহনে অগ্নিসংযোগ করেন। পুলিশ তখন গুলি চালিয়ে নাঈম, বিলাল এবং নোমান নামের তিন মুসলিমকে হত্যা করেছে।
যেসব হিন্দুত্ববাদী ব্যক্তি মসজিদের জায়গায় মন্দির থাকার দাবি করেছেন, তারা আদালতের পিটিশনে বলেছেন, মুঘল শাসক বাবরের আমলে ১৫২৯ সালে মন্দির ভেঙে সেখানে মসজিদ তৈরি করা হয়েছিল।
সমালোচকরা বলেছেন, মূলত উত্তেজনা তৈরি করতেই মসজিদটিতে জরিপ চালানোর মতো নির্দেশ দিয়েছে আদালত। এ ছাড়া এর মাধ্যমে ভারতের উপাসনা আইন ১৯৯১ ভঙ্গ করা হয়েছে। এ আইনে ধর্মীয় স্থাপনাগুলোর পবিত্রতা রক্ষার কথা বলা হয়েছে।
তিন মুসলিমকে হত্যার পাশপাশি নারীসহ আরও অন্তত ১৫ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তারা জানিয়েছে, যারাই আজকের ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিল তাদের সবাইকে শনাক্ত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।
প্রায় ৫০ জন আহত ও তিনজকে হত্যার পরও মসজিদটিতে জরিপ চালিয়েছে জরিপকারী দল। তারা আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী মসজিদটির বিভিন্ন জায়গার ছবি ও ভিডিও ধারণ করে নিয়ে গেছেন। আগামী ২৯ নভেম্বরের মধ্যে আদালতের কাছে জরিপের প্রতিবেদন জমা দিতে হবে।
স্থানীয় রাজনীতিবিদরা বলেছেন, নরেন্দ্র মোদির বিজেপি সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে সেখানে উত্তেজনা তৈরি করেছে। তারা মূলত সেখানে রাজনৈতিক ফায়দা আদায় করে নিতে এ কাজ করেছে।
সমাজবাদী পার্টির প্রধান অখিলেশ যাদব অভিযোগ করেছেন, বিজেপি সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে এই অশান্তি তৈরি করেছে। তিনি বলেন, ‘সম্বলে গুরুতর ঘটনা ঘটেছে। জরিপ দলকে সকালে পাঠিয়ে আলোচনাকে বাধাগ্রস্ত করা হয়েছে। এর উদ্দেশ্য ছিল নির্বাচনী ইস্যু নিয়ে বিতর্ক এড়ানো।’
সমাজবাদী পার্টির সংসদ সদস্য জিয়াউর রহমান বারক ১৯৯১ সালের উপাসনালয় আইন উল্লেখ করে জরিপের সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, ‘সম্বলের জামে মসজিদ একটি ঐতিহাসিক স্থান। সুপ্রিম কোর্টের রায়ে বলা হয়েছিল, ১৯৪৭ সালের মতোই উপাসনালয়ের অবস্থান অপরিবর্তিত থাকবে।’
আরও পড়ুন: মানবাধিকারকর্মী মিনা ফারাহকে জামায়াত আমিরের ফোন