রাজনীতি সংবাদ ডেস্ক প্রকাশের সময় :২০ নভেম্বর, ২০২৪ ৪:১৯ : অপরাহ্ণ
সেনাবাহিনীর চাকরি থেকে অব্যাহতি পাওয়া বিতর্কিত মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসানের কর্মকাণ্ডকে বসনিয়া-হার্জেগভনিয়ার ‘কসাই’ রাদোভান কারাদজিচের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে তুলনা করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের (আইসিটি) চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম।
আজ বুধবার জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মানবাতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে জিয়াউল আহসানসহ ৮ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার দেখানোর শুনানির সময় তিনি এ মন্তব্য করেন।
জানা যায়, শুনানি চলাকালে ট্রাইব্যুনালে ক্ষিপ্ত আচরণ করেন ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) সাবেক মহাপরিচালক জিয়াউল আহসান। তবে পুলিশের সাবেক আইজি আব্দুল্লাহ আল-মামুনসহ অন্য ৭ আসামি শুনানি চলাকালে নীরব ছিলেন।
শুনানিতে চিফ প্রসিকিউটর বলেন, জিয়াউল আহসান বিভিন্ন সময় র্যাবের বিভিন্ন পদে ছিলেন। সর্বশেষ তিনি এনটিএমসির মহাপরিচালক ছিলেন। তিনি বাংলাদেশের গুম, গুমের পরে নিয়ে গিয়ে পৈশাচিক নির্যাতন, হত্যার পরে লাশ ডিসপোজাল করা, এসব কালচারের জনক ছিলেন। আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে যারা বিরোধী দলে থেকে বিভিন্ন সময় কথা বলার চেষ্টা করেছে, তাদের তিনি একের পর এক পরিকল্পিতভাবে অপহরণ করেছেন, গুম করেছেন, বছরের পর বছর আটকে রেখেছেন। তাদের মধ্যে বহু মানুষ আজও ফিরে আসেননি।
শুনানি চলাকালে শেষদিকে বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকেন জিয়াউল আহসান। ওই সময় তাকে বসাতে গেলে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যকে ধমক দিয়ে সরিয়ে দেন তিনি।
আদালত এজলাস ছাড়ার আগে জিয়াউল আহসানের আইনজীবী নাজনীন নাহার ট্রাইব্যুনালের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, জিয়াউল আহসান কথা বলতে চান।
এ সময় কাঠগড়ায় ক্ষিপ্ত জিয়াউল আহসান বিচারকদের লক্ষ্য করে বলেন, ‘আমি আয়নাঘরে কখনো চাকরি করিনি। আমি টেকনিক্যাল দায়িত্বে ছিলাম।’
এ সময় আদালত বলেন, ‘তদন্ত চলছে। আপনার আইনজীবী আছে। আইনজীবী বলার পর প্রয়োজনে যোগ করবেন।’
শুনানি ও আদেশ শেষে জিয়াউল আহসান আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেন। বিচারপতিরা এজলাস ছাড়ার পর দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা আসামিদের কাঠগড়া থেকে হাজত খানায় নেওয়ার জন্য যান।
এ সময় জিয়াউল আহসান তাদের বলেন, ‘কেউ আমাকে ধরবে না, কাছে আসবে না। তোমরা মার খেয়েছো, ভবিষ্যতে আরও খাবে। আমাকে জেল খানায় কাগজ-কলম দেওয়া হয় না। আমি লিখবো। আমাকে কাগজ-কলম দিতে হবে। আমার বিরুদ্ধে যা বলেছে, তা আমাকে দাও। আমি দেখবো।’
এ সময় তাকে বেশ উত্তেজিত দেখা যায়। তবে তার আইনজীবী নাজনীন নাহার বলেন, পরে সবই দেওয়া হবে।
আদালত থেকে কারাগারে নিতে প্রিজনভ্যানে নেওয়ার জন্য কয়েকজন পুলিশ সদস্য তার দুই হাত ধরে রাখেন। এ সময়ও তিনি তাদেরকে হাত ছেড়ে দিতে বলেন।
‘জিয়াউল আহসানের নেতৃত্বে বিএনপি নেতা ইলিয়াস গুম’
তাজুল ইসলাম ট্রাব্যুনালে শুনানিতে বলেন, ‘জিয়াউল আহসানের নেতৃত্বে বিএনপি নেতা ইলিয়াসকে গুম করে হত্যা করা হয় বলে আমরা জানতে পেরেছি। এছাড়াও নাম জানা-না জানা অনেক মানুষকে অপহরণের পর নির্যাতন করা হয়েছে। তার পৈশাচিকতা ৯০-এর দশকে বসনিয়া-হার্জেগভনিয়ার সারফিয়ান বাহিনী যে গণহত্যা চালিয়েছিল, যে ধরনের অত্যাচার করতো, তার সাথে আমরা তুলনা করেছি।’
ট্রাব্যুনালের এই চিফ প্রসিকিউটর বলেন, ‘বলকানের কসাইয়ের মতো বাংলাদেশের কসাই হিসেবে এই জিয়াউল আহসান হত্যাকাণ্ড থেকে শুরু করে, গুম নির্যাতনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন।’
আরও পড়ুন:
গুম-খুনের ‘মাস্টারমাইন্ড’ কে এই জিয়াউল আহসান
জুলাই-আগস্ট গণহত্যার ‘সুপ্রিম কর্মকর্তা’ ছিলেন পুলিশের আইজি মামুন