শনিবার, ১৬ নভেম্বর, ২০২৪ | ১ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৩ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬

মূলপাতা জাতীয়

বঙ্গোপসাগরে ভারত, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের স্বার্থ রয়েছে: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা


পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন। ফাইল ছবি

রাজনীতি সংবাদ প্রতিবেদক, ঢাকা প্রকাশের সময় :১৬ নভেম্বর, ২০২৪ ৪:৪৫ : অপরাহ্ণ

বঙ্গোপসাগরকে কেন্দ্র করে ভারত, যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের আলাদা আলাদা স্বার্থ রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন।

তিনি বলেন, অন্যান্য নানা ইস্যুর পাশাপাশি রোহিঙ্গা ইস্যুর পরিপ্রেক্ষিতে বঙ্গোপসাগর বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গত আট বছরে এই সংকট নিরসনে বড় প্রতিবেশীর কাছ থেকে সহযোগিতা প্রত্যাশার চেয়ে কম।

আজ শনিবার রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে তিন দিনব্যাপী ‘বে অব বেঙ্গল কনভারসেশন’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক ভূরাজনৈতিক সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) এ সম্মেলনের আয়োজন করেছে।

তৌহিদ হোসেন বলেন, প্রতিবেশীদের বিষয়টিকে আমি এভাবে দেখি যে, তাদের নিজেদের স্বার্থ আছে বলে আমাদের পাশে এসে সমস্যার সমাধান তারা করেনি। ফলে এই সমস্যা আমাদের জন্য বড় ধরনের বোঝা তৈরি করেছে।

রোহিঙ্গা সংকট দ্রত সমাধান না হলে বিশ্বের জন্য হুমকি হয়ে উঠবে উল্লেখ করে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘এটি খুব দ্রুত এবং খুব সহজে সমাধান হবে বলে আমি মনে করি না। তবে একটি বিষয় আমি এখানে উল্লেখ করতে চাই তা হলো- এই সমস্যার সমাধান না হলে, এটি বিশ্বের জন্য সমস্যা হয়ে উঠবে।’

বাংলাদেশের পাশে দাঁড়াতে চীন কেন এগিয়ে আসেনি, এমন প্রশ্ন উঠতে পারে বলে মনে করেন তৌহিদ হোসেন। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, বঙ্গোপসাগরে প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে চীনের কাছে মিয়ানমার অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। একইভাবে ভারত চিন্তা করেছে রাখাইনের কালাদান প্রকল্প তার উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোর প্রবেশাধিকারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তাই এই প্রকল্পের জন্য ভারতের কাছে মিয়ানমারের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রাখার কোনো বিকল্প নেই। বাংলাদেশ প্রতিযোগিতামূলক ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থের আবর্তে আটকা পড়েছে।

 

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, এমন এক পরিপ্রেক্ষিতে বলতে পারি, আমরা পরিস্থিতির বলি হয়েছি। আমি কাউকে দায়ী না করেই বলি সবাই নিজের স্বার্থ দেখবে। এতে করে রোহিঙ্গা সংকট দীর্ঘায়িত হচ্ছে। শিগগিরই এবং খুব সহজে রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান হবে বলে টানেলের শেষ প্রান্তে কোনো আলো দেখা যাচ্ছে না। রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান না হলে এটা বাকি বিশ্বের জন্য ইস্যু হয়ে দাঁড়াবে।

তৌহিদ হোসেন বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারকে নিয়ে মানুষের প্রত্যাশা অনেক উঁচুতে। কিন্তু ধৈর্য একেবারেই কম। প্রতিটি পরিবর্তনে ফল আসতে সময় লাগে। আমি বিশ্বাস করি, নানা বিষয়ের সমাধানের জন্য আমাদের আরও কিছুটা ধৈর্যের প্রয়োজন। রাজনীতিবিদ, তরুণ প্রজন্মসহ সমাজের সবাই অংশের এই ধৈর্যের প্রয়োজন।

গত ১০০ দিনে অন্তর্বর্তী সরকারের অর্জনের প্রসঙ্গ টেনে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, আমরা কি আসলেই কিছু অর্জন করিনি? আমি আগে পত্রিকায় লিখতাম, টিভিতে কথা বলতাম। আমার সীমারেখা কতটা, সেটা আমি জানতাম। আমি সেই সীমারেখার কাছাকাছি যেতাম। কিন্তু সীমা অতিক্রমের সাহস দেখাতে পারতাম না। পশ্চিমে যারা অবস্থান করেন, তারাই স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারতেন। দেশের বাইরে যারা থাকতেন। দেশের ভেতরে যারা থাকতেন, তাদের সরকারের পদক্ষেপের সমালোচনা করতে পারতেন না। এখন দেশের ভেতরে যারা আছেন, তারাও অবাধে অন্তর্বর্তী সরকারের পদক্ষেপের সমালোচনা করছেন। এটা দেখে আমি অত্যন্ত খুশি। এই একটি বিষয় আমরা এরই মধ্যে অর্জন করেছি। আমি আশা করবো, ধৈর্য ধারণ করলে, দেশে এবং দেশের বাইরের সব বন্ধুর সহায়তায় সব কটি না হলে তরুণ জনগোষ্ঠীর অধিকাংশ প্রত্যাশা আমরা পূরণ করতে পারব।

সম্মেলনে উদ্বোধনী বক্তব্য দেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ভিডিও বার্তা দেন মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ ও বলিভিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট হোর্গে কিরোগা।

সিজিএসের নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তৃতা করেন সংস্থার চেয়ারপারসন মনিরা খান।

আরও পড়ুন: প্রায় পুরো জাতি পরিবর্তনের আওয়াজ তুলেছে: ড. ইউনূস

মন্তব্য করুন
Rajniti Sangbad


আরও খবর