শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪ | ৮ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২০ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬

মূলপাতা রাজধানী

জিরো পয়েন্টে ছাত্র-জনতার অবস্থান, দেখা নেই আ.লীগ নেতাকর্মীদের


রাজধানীর গুলিস্তানের জিরো পয়েন্টে অবস্থান নিয়ে মিছিল করছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা। ছবি: সংগৃহীত

রাজনীতি সংবাদ প্রতিবেদক, ঢাকা প্রকাশের সময় :১০ নভেম্বর, ২০২৪ ১:৩৩ : অপরাহ্ণ

রাজধানীর জিরো পয়েন্টে আজ রোববার বিকেল ৩টায় ‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার’ কর্মসূচিতে জমায়েত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছিল আওয়ামী লীগ। তবে তাদের কর্মসূচি প্রতিরোধে সকাল থেকেই জিরো পয়েন্ট ও আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের আশপাশের এলাকায় অবস্থান নিয়েছে বিএনপি, গণঅধিকার পরিষদ ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা। ওই এলাকায় দেখা মিলছে না আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের।

আজ দুপুর ১২টার দিকে পল্টন মোড় থেকে শুরু করে জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ঘুরে এমন চিত্র দেখা যায়।

জিরো পয়েন্ট এলাকায় সরেজমিনে দেখা যায়, বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠন ও ছাত্র-জনতা আওয়ামী লীগ বিরোধী স্লোগান দিচ্ছেন। মিছিলের মাধ্যমে তারা নিজেদের অবস্থান জানান দিচ্ছেন এবং আওয়ামী লীগের সমাবেশ প্রতিহতের আহ্বান জানাচ্ছেন।

‘জুলাইয়ের কাফেলা’ নামক সংগঠনের সদস্যরা আওয়ামী লীগের বিরোধিতা করে স্লোগান দিচ্ছেন এবং সমাবেশ প্রতিহতের প্রতিজ্ঞা ব্যক্ত করছেন।

জুলাইয়ের কাফেলার ব্যানারে মিছিল আসা আরিফ রব্বানী বলেন, স্বৈরাচারের দোসররা বিদেশে বসে ষড়যন্ত্র করছে। তারা এখনো দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছে। বিগত দিনের গণহত্যার ব্যাপারে অনুতপ্ত হওয়ার বদলে উল্টো দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের মানুষের কাছে একটি ঘৃণ্য দল। এদের লজ্জা শরম নেই। আজ যেকোনো মূল্যে তাদের ঘোষিত কর্মসূচি প্রতিহত করা হবে।

এদিকে ছোট ছোট মিছিল নিয়ে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের সামনে জড়ো হচ্ছেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সেখানে বাড়তে থাকে তাদের সংখ্যা। দুপুর ১২ টার দিকে সেখানে প্রায় দেড় হাজার বিএনপির নেতাকর্মীর উপস্থিতি ছিল। অনেকের হাতেই লাঠি সোঁঠা দেখা যায়। এ সময় সেখান সন্দেহভাজন কয়েকজনকে মারধরও করা হয়। ফোন চেক করে আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে এখন পর্যন্ত অন্তত থেকে ১০-১৫ জনকে মারধরের খবর পাওয়া গেছে। পরে পুলিশ মারধরের শিকার ব্যক্তিদের নিয়ে যায়।

এদিকে বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ গেটের মূল সড়কে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের গণজমায়েত কর্মসূচি চলছে। কর্মসূচিতে মঞ্চে ইতোমধ্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ ও সারজিস আলম উপস্থিত হয়েছেন।

জিরো পয়েন্টে ছাত্র-জনতার অবস্থান, দেখা নেই আ.লীগ নেতাকর্মীদের

হাসনাত আবদুল্লাহ তার বক্তব্যে বলেন, ‘ছাত্রলীগ, যুবলীগের সঙ্গে ম্যাচ খেলতে আমরা প্রস্তুত আছি। কিন্তু নিজেদের মধ্যে ঐক্য ধরে রাখতে হবে। আমরা ম্যাচ খেলব শুধুমাত্র ছাত্রলীগের সঙ্গে, যুবলীগের সঙ্গে এবং আওয়ামী লীগের সঙ্গে।’

হাসনাত বলেন, ‘ছাত্রলীগকে উৎখাত করার জন্য সবার মাঠে নামার প্রয়োজন নাই৷ শুধু ঢাকা কলেজের ছাত্ররাই যথেষ্ট।’

রাজধানীর মোড়ে মোড়ে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি। আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের সামনে অর্ধশতাধিক পুলিশ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। তবে জিরো পয়েন্টের আশপাশে নিরাপত্তা আরও বেশি জোরদার করা হয়েছে। সেখানে পুলিশ জলকামান ও এপিসি প্রস্তুত রেখেছে।সচিবালয়ের সামনে বিভিন্ন বাহিনীর প্রায় দুই শতাধিক সদস্য উপস্থিত রয়েছেন।

সংঘর্ষের আশঙ্কায় গুলিস্তান, জিরো পয়েন্টের আশপাশে এলাকায় সাধারণ মানুষের উপস্থিতি অনেকটাই কম। এসব এলাকার দোকানপাটও আজ খোলেনি। ব্যক্তিগত যানবাহনের চলাচলও বেশ কম দেখা গেছে।

উল্লেখ্য, ১৯৮৭ সালে এরশাদবিরোধী আন্দোলনে যুবলীগ কর্মী নূর হোসেন বুকে ও পিঠে ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক’ স্লোগান লিখে রাজপথে মিছিলে নেমেছিলেন। সেদিন পুলিশের গুলিতে মারা যান তিনি। তাকে হত্যার এই দিনে গুলিস্তানের জিরো পয়েন্টে শহীদ নূর হোসেন চত্বরে বিক্ষোভ মিছিলের ডাক দিয়েছে আওয়ামী লীগ।

গতকাল শনিবার আওয়ামী লীগের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে একটি পোস্টার পোস্ট করা হয়। যাতে লেখা, ‘১০ নভেম্বর আসুন জিরো পয়েন্টে, বাংলাদেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে’।

পরে আওয়ামী লীগের ফেসবুক পেজে অপর এক পোস্টে নেতাকর্মীদের উদ্দেশ করে লেখা হয়, ‘স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায়, গণতন্ত্র ও সুবিচার প্রতিষ্ঠায় দলে দলে ঢাকায় আসুন।’ পোস্টে বিকেল ৩টায় কর্মসূচি শুরু হবে বলে জানানো হয়।

এদিকে আওয়ামী লীগের কর্মসূচি ঘোষণার পর পাল্টা কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এই আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ নিজের ভেরিফায়েড প্রোফাইলে করা পোস্টে রোববার গণজমায়েতের ডাক দিয়ে লিখেছেন-‘পতিত স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের বিচারের দাবিতে গণজমায়েত’।

এর আগে অন্তবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলমও আওয়ামী লীগের কর্মসূচি নিয়ে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।

গতকাল নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেওয়া এক পোস্টে তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ বর্তমানে যে রূপে আছে তাতে এটি একটি ফ্যাসিবাদী দল। এই ফ্যাসিবাদী দলের বাংলাদেশে বিক্ষোভ করার কোনো সুযোগ নেই। গণহত্যাকারী ও স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার নির্দেশে কেউ সমাবেশ, মিছিল করার চেষ্টা করলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পূর্ণশক্তি দিয়ে সেগুলো মোকাবিলা করবে। অন্তর্বর্তী সরকার সহিংসতা বা আইনশৃঙ্খলা ভঙ্গের কোনো প্রচেষ্টাকেই বরদাশত করবে না।’

প্রসঙ্গত, গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে ক্ষমতা ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। তার পতনের পর আর মাঠে নামতে পারেনি দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। ১৫ আগস্ট ও জেল হত্যা দিবসেও কর্মসূচি পালন করতে পারেনি দলটি। গত ১৫ আগস্ট ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে ছাত্র-জনতার রোষানলে পড়তে হয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের। এর মধ্যে আবার ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

আরও পড়ুন: বিএনপির র‍্যালিতে খাঁচায় বন্দি শেখ হাসিনা!

মন্তব্য করুন
Rajniti Sangbad


আরও খবর