যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে শেষ পর্যন্ত রাজকীয় প্রত্যাবর্তনই হলো ৭৮ বছর বয়সী ডোনাল্ড ট্রাম্পের। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) ক্ষমতাসীন ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী কমলা হ্যারিসকে হারিয়ে তিনি দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর দেশটির ৪৭তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন। ঐতিহাসিক এই জয়ের মধ্য দিয়ে চার বছর পর আবারও হোয়াইট হাউসে ফিরলেন রিপাবলিকান প্রার্থী ট্রাম্প।
একই সঙ্গে ভূমিধস এই জয়ের মাধ্যমে ১৩২ বছরের রেকর্ড ভেঙেছেন ট্রাম্প। মার্কিন প্রেসিডেন্ট গ্রোভার ক্লিভল্যান্ড প্রথম মেয়াদের পর দ্বিতীয় মেয়াদে নির্বাচন করে পরাজিত হন। এর চার বছর পর নির্বাচন করে ১৮৯২ সালে তিনি জয়ী হন। সেই রেকর্ড ভেঙে ১৩২ বছর পরে হোয়াইট হাউসের চাবি হাতে আসছে ট্রাম্পের।
মার্কিন নির্বাচনে মোট ৫৩৮টি ইলেক্টোরাল কলেজ ভোটের মধ্যে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার জন্য ২৭০টির প্রয়োজন।
যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যমে প্রকাশিত নির্বাচনী ফল অনুযায়ী, এখনো পর্যন্ত ৫৩৮টি ইলেক্টোরাল কলেজ ভোটের মধ্যে ট্রাম্প ২৭৯টি এবং কমলা ২২৩টি পেয়েছেন।
নির্বাচনী প্রচারণার সময় থেকেই ট্রাম্প অর্থনীতি, অভিবাসন ও জাতীয় নিরাপত্তা নিয়ে জোরালো বক্তব্য দিয়ে আসছিলেন, যা মূলত তার সমর্থকদের আরও শক্তিশালী করে। মার্কিন অর্থনীতির নিম্নগতি, মুদ্রাস্ফীতি এবং সীমান্ত নিরাপত্তার ইস্যুগুলোতে ট্রাম্পের অবস্থান অনেক ভোটারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। পাশাপাশি, ইউক্রেনের মতো বাইরের দেশের জন্য বড় অংকের অর্থ ব্যয় নিয়ে আমেরিকানদের মধ্যেও অসন্তোষ তৈরি হয়। এ বিষয়ে ট্রাম্পের সমালোচনামূলক দৃষ্টিভঙ্গি ও নিজ দেশের অগ্রাধিকার নিশ্চিতের প্রতিশ্রুতি অনেকের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়েছে।
বিশেষ করে নির্ধারণী সুইং স্টেটগুলোর জয়ই হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পের ফেরার ক্ষেত্রে মূল ভূমিকা রাখে। জর্জিয়া, নর্থ ক্যারোলিনা, ফ্লোরিডা, পেনসিলভানিয়া এবং উইসকনসিনের মতো ব্যাটেলগ্রাউন্ড রাজ্যগুলোতে ট্রাম্পের জয় দেখিয়ে দেয় যে, অনেক আমেরিকান ভোটার অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং সীমান্ত নিরাপত্তাকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন। নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশের সময় পর্যন্ত বিভিন্ন ব্যাটেলগ্রাউন্ড রাজ্যে এগিয়ে থাকলেও শেষ পর্যন্ত কমলা হ্যারিস সেই সমর্থন ধরে রাখতে পারেননি।
ধারণা করা হয়, এবার গাজা যুদ্ধের কারণে ডেমোক্রেটদের দিক থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছেন মুসলিমরা। তারা এবার ব্যাপকভাবে ট্রাম্পকে ভোট দিয়েছেন।
এবারের নির্বাচনের আরও একটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, গণমাধ্যম ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রাথমিক জরিপে ট্রাম্পের পিছিয়ে থাকার চিত্র উঠে আসা সত্ত্বেও ফলাফল ভিন্নভাবে প্রকাশ পায়। জরিপগুলোর অধিকাংশই ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থী হ্যারিসের পক্ষে ইঙ্গিত দিলেও ট্রাম্পের সমর্থকরা শেষ মুহূর্তে বিপরীত সিদ্ধান্ত নিয়ে আসেন।
ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের অভিজাত পরিবারের সন্তান। তার বাবা দেশটির অন্যতম ধনী ব্যক্তি। নিউইয়র্কের রিয়েল এস্টেট টাইকুন ট্রাম্পের বর্ণাঢ্য জীবন কয়েক দশক ধরেই বিভিন্ন ট্যাবলয়েডের পাতায় এবং টেলিভিশনের পর্দায় ঘোরাফেরা করেছে।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের জন্ম ১৯৪৬ সালের ১৪ জুন। স্কুলে দুষ্টমি ও উচ্ছৃঙ্খল আচরণের জন্য ১৩ বছর বয়সে তাকে সামরিক একাডেমিতে পাঠিয়ে দেয়া হয়। তিনি পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন। বিয়ে করেছেন তিনবার। সবশেষ ২০০৫ সালে বর্তমান স্ত্রী মেলানিয়ার সঙ্গে বিয়েবন্ধনে আবদ্ধ হন তিনি। ব্যারন উইলিয়াম ট্রাম্প নামে তাদের একটি ছেলে রয়েছে।
ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট পদে লড়ার প্রথম আগ্রহ প্রকাশ করেন ১৯৮৭ সালে। এমনকি রিফর্ম পার্টির প্রার্থী হিসেবে তিনি ২০০০ সালে প্রতিদ্বন্দ্বিতাও করেন। তবে ২০১৬ সালে হিলারি ক্লিনটনকে হারিয়ে তিনি প্রথমবার মতো প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। পরে ২০২০ সালে জো বাইডেনের কাছে হেরে হোয়াইট হাউস থেকে বিদায় নেন। তবে এবার ২০২৪ সালে কমলাকে হারিয়ে আবারও চার বছরের জন্য মার্কিন মুলুকের সিংহাসনে বসলেন ৭৯ বছর বয়সী ট্রাম্প।
আরও পড়ুন: বিজয় ঘোষণা করে ট্রাম্প বললেন, আমরা ইতিহাস সৃষ্টি করেছি