রাজনীতি সংবাদ ডেস্ক প্রকাশের সময় :৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১০:০১ : পূর্বাহ্ণ
দীর্ঘ অপেক্ষা শেষে আজ মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী কমলা হ্যারিস, নাকি রিপাবলিকান পার্টির ডোনাল্ড ট্রাম্প-কে পাচ্ছেন হোয়াইট হাউসের টিকিট, তা নির্ধারণে ভোট দেবেন মার্কিন নাগরিকেরা। রিপাবলিকান প্রতীক হাতি ও ডেমোক্রেটিক প্রতীক গাধার মধ্যে চলবে এ ভোটযুদ্ধ।
নির্বাচনে প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বী কমলা হ্যারিস এবং ডোনাল্ড ট্রাম্প ছাড়াও আরও চারজন প্রার্থী লড়াই করছেন। তারা হলেন-গ্রিন পার্টির জিল স্টেইন, লিবার্টারিয়ান পার্টির চেজ অলিভার, স্বতন্ত্র প্রার্থী কর্নেল ওয়েস্ট ও রবার্ট কেনেডি জুনিয়র। তবে নির্বাচনে তারা তেমন বড় কোনো পার্থক্য করতে পারবেন না বলেই মনে করেন বিশ্লেষকরা।
যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি অঙ্গরাজ্য ও ওয়াশিংটন ডিসির ভোটাররা ভোট দেবেন। বিশাল বড় দেশ যুক্তরাষ্ট্রে ছয়টি টাইম জোন রয়েছে। ফলে বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে সময়ের ব্যবধান রয়েছে। সেটি সমন্বয় করেই ভোট শুরু এবং শেষ হবে। ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে ৭ কোটি ৮০ লাখ ভোটার আগাম ভোট দিয়েছেন।
বিশ্বের একক ক্ষমতাধর এই দেশটির অভ্যন্তরীণ ও পররাষ্ট্রনীতির ওপর বিশ্ব রাজনীতি ও অর্থনীতি অনেকটা নির্ভরশীল হওয়ায় এই নির্বাচনের দিকে পুরো পৃথিবীর মানুষের নজর থাকবে, তা বলা বাহুল্য।
এবার মার্কিন মুলুকে ৬০তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোট হতে যাচ্ছে। মূল লড়াইটা হচ্ছে ডেমোক্রেটিক পার্টির কমলা হ্যারিস এবং রিপাবলিকান পার্টির ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে। তবে তারা ছাড়াও আরও চারজন প্রার্থী নির্বাচনে লড়াই করছেন। তবে তারা নির্বাচনে তেমন বড় কোনো প্রার্থক্য করতে পারবেন না বলেই মনে করেন বিশ্লেষকরা।
এবারের নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রে নতুন এক ইতিহাস রচিত হবে। কারণ যদি কমলা হ্যারিস জয়ী হন, তাহলে তিনি হবেন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট। অন্যদিকে দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যদি জয়ী হন, সেক্ষেত্রে ইতিহাসে প্রথমবারের মতো এমন একজন ব্যাক্তিকে রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান হিসেবে পাবে যুক্তরাষ্ট্র-যিনি ইতোমধ্যে ফৌজদারি মামলায় দোষীসাব্যস্ত হয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি অঙ্গরাজ্যের ৪৩টিতে কমলা নাকি ট্রাম্প-কে জিতবেন, তা অনেকটা নিশ্চিত। সমস্যা দোদুল্যমান সাত অঙ্গরাজ্য-পেনসিলভানিয়া, অ্যারিজোনা, নেভাদা, উইসকনসিন, নর্থ ক্যারোলাইনা, মিশিগান ও জর্জিয়াকে নিয়ে। এই সাত অঙ্গরাজ্যের ফল কমলা–ট্রাম্পের ভাগ্য নির্ধারণ করে দেবে।
এসব রাজ্যগুলোতে ডেমোক্রেট ও রিপাবলিকান প্রার্থীর সমর্থন প্রায় সমান। তাই দোদুল্যমান এই অঙ্গরাজ্যগুলোর দিকেই সবার নজর। আর দুই প্রার্থীও ব্যস্ত এই অঙ্গরাজ্যগুলো ঘিরেই ব্যস্ত সময় পার করছেন।
গত ৩ নভেম্বর মিশিগানে প্রচারণার সময় গাজায় যুদ্ধ বন্ধের প্রতিশ্রুতি দেন কমলা হ্যারিস। মূলত আরব-আমেরিকান ভোটারদের সমর্থন পেতেই এই ধরনের প্রতিশ্রুতি দিলেন তিনি।
অন্যদিকে একই দিন পেনসিলভানিয়া ও নর্থ ক্যারোলিনায় প্রচারণায় অংশ নেন ট্রাম্প। জো বাইডেনের শাসনামলে যুক্তরাষ্ট্র একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ব্যর্থতার জন্য ডেমোক্র্যাটদের লজ্জিত হওয়া উচিত। রিপাবলিকান পার্টি জিতলে আগামী চার বছর স্বর্ণযুগে পরিণত করার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনী প্রচারণার শুরুতে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী ছিলেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট ৮১ বছর বয়সী জো বাইডেন। তবে ট্রাম্পের সঙ্গে বিতর্কে খারাপ করার পর বয়সজনিত কারণে দলীয় চাপে তাকে সরে দাঁড়াতে হয়। গত জুলাইয়ে তার স্থানে আসেন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস।
গতকাল সোমবার নিউইয়র্ক টাইমস-এর জনমত জরিপে দেখা গেছে, দেশজুড়ে ৪৯ শতাংশ মানুষ কমলা ও ৪৮ শতাংশ ট্রাম্পের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। এ ছাড়া দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যগুলোর মধ্যে পেনসিলভানিয়ায় ট্রাম্প ১ শতাংশ, অ্যারিজোনায় ৪ শতাংশ, নেভাদায় ১ শতাংশ, নর্থ ক্যারোলাইনা ও জর্জিয়ায় ১ শতাংশ ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছেন। কমলা উইসকনসিনে ১ শতাংশ ও মিশিগানে ১ শতাংশ ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছেন।
সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে স্থানীয় সময় ৫ নভেম্বর রাত বা ৬ নভেম্বর দিনের মধ্যে নির্বাচনের চূড়ান্ত ফলাফল জানা যাবে। তবে ঝামেলা হলে চূড়ান্ত ফল জানতে কয়েক দিন লাগতে পারে। যেমন ২০২০ সালের নির্বাচনে চার দিন পর চূড়ান্ত ফল জানা গিয়েছিল। সে বছর কয়েকটি অঙ্গরাজ্যে বাইডেন ও ট্রাম্পের মধ্যে তুমুল লড়াই হয়েছিল। আবার ২০১৬ সালে ৫ নভেম্বর রাতের মধ্যেই ফল জানা গিয়েছিল।
ভোটাররা মূলত ইলেকটোরাল কলেজ নির্বাচিত করবেন। আগামী ১৭ ডিসেম্বর তাদের ভোটে প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবেন। যুক্তরাষ্ট্রে মোট ইলেকটোরাল কলেজের ভোটের সংখ্যা ৫৩৮। প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে একজন প্রার্থীকে ২৭০টি ভোট পেতে হয়।
আরও পড়ুন: মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন: শেষ হাসি ট্রাম্প না কমলার?