দীর্ঘদিন ধরে জাতীয় চার নেতাকে হত্যার দিনটিকে রাষ্ট্রীয়ভাবে পালনের দাবি জানিয়ে আসছেন সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ও দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমেদের ছেলে তানজিম আহমেদ সোহেল তাজ। তার দাবি পূরণের আশ্বাস মিলেছে। সোহেল তাজকে ফোন করে সেই আশ্বাস দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
আজ সোমবার নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে পোস্ট করে এ তথ্য জানিয়েছেন তিনি।
সোহেল তাজ ফেসবুকে লেখেন, ‘৩ দফা দাবি আপডেট: আপনারা সবাই শুনে আনন্দিত হবেন যে আজকে সকালে মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস আমাকে ফোন করেছিলেন এবং ওনার সঙ্গে আমার বেশ কিছুক্ষণ কথা হয়। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে তাজউদ্দীন আহমদ এবং জাতীয় চার নেতার অবদানের কথা তিনি শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন এবং তিনি আমাকে আশ্বস্ত করেন যে, তিনি পদক্ষেপ নিবেন যাতে নতুন প্রজন্ম আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস জানতে পারে।’
তিন দাবিতে গতকাল রোববার পদযাত্রা কর্মসূচি ডেকেছিলেন সোহেল তাজ। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনা অভিমুখে পদযাত্রা করার কথা ছিল তার।
তবে পদযাত্রা করতে হয়নি। পদযাত্রা শুরুর আগেই প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে তার স্মারকলিপি সংগ্রহ করে নিয়ে যাওয়া হয়।
এর আগে বিকেল ৪টায় তিন দফা দাবিতে রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল সংলগ্ন সাকুরা রেস্টুরেন্টের সামনে উপস্থিত হন সোহেল তাজ। সেখানে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।
পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী, প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনা অভিমুখে পদযাত্রা কর্মসূচি শুরুর আগেই বিকাল ৫টায় প্রধান উপদেষ্টা কার্যালয়ের প্রতিনিধি এসে দাবি সংবলিত স্মারকলিপি নিয়ে যায়। ফলে আর পদযাত্রা করার প্রয়োজন হয়নি তার।
এ সময় সাকুরা রেস্টুরেন্টের উল্টো পাশে শতাধিক পুলিশকে রাস্তা ব্যারিকেড দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।
গতকালের পদযাত্রা নিয়ে সোহেল তাজ বলেছিলেন, ‘আজকের এই পদযাত্রা আমার শেষ পদযাত্রা। ব্যক্তিগতভাবে আমি লজ্জিত। আমার পথে নামতে হচ্ছে এই দাবিগুলো নিয়ে। এটা রাষ্ট্রের বাস্তবায়ন করার কথা।’
সাবেক এই স্বরাষ্ট্রপ্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘কোনো পরিবার বা আমার পিতার জন্য এই আন্দোলন না। এই পদযাত্রা করেছি বাংলাদেশকে ভালোবেসে। আমি চাই আমার সন্তান, আপনাদের সন্তান যেন সুন্দর বাংলাদেশ পায়।’
১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী জাতীয় চার নেতাকে (সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী, এ এইচ এম কামারুজ্জামান) ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ভেতরে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। এই কলঙ্কিত দিনকে রাষ্ট্রীয়ভাবে পালনসহ তিন দফা দাবি করেছেন সোহেল তাজ।
প্রধান উপদেষ্টার কাছে তুলে ধরা সোহেল তাজের ৩ দফা দাবিগুলো হলো:
১. যেহেতু ১০ এপ্রিল, ১৯৭১ স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রথম সরকার গঠিত হয়, সেহেতু বাংলাদেশ স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র (প্রজাতন্ত্র) হিসেবে জন্ম লাভ করে। তাই এ দিনটিকে ‘প্রজাতন্ত্র দিবস’ ঘোষণা করতে হবে।
২. ৩রা নভেম্বর’ জেল হত্যা দিবসকে রাষ্ট্রীয় ভাবে পালন করতে হবে।
৩. জাতীয় চার নেতাসহ মহান মুক্তিযুদ্ধের সব বেসামরিক ও সামরিক সংগঠক, পরিচালক, অমর শহীদ ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নাম, অবদান ও জীবনীসহ মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ও পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস যথাযথ মর্যাদা ও গুরুত্বের সঙ্গে সর্বস্তরের পাঠ্যপুস্তকে ও পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
উল্লেখ্য, সোহেল তাজ সাবেক সংসদ সদস্য এবং আওয়ামী লীগ সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। পরে অবশ্য পদত্যাগ করেন।
আরও পড়ুন: শেখ হাসিনাসহ পাঁচ রাজনীতিবিদের প্রতীকী ফাঁসি
