ঢাকায় মহাসমাবেশ কর্মসূচি থেকে জাতীয় পার্টি সরে আসবে না বলে জানিয়েছেন দলটির চেয়ারম্যান জি এম কাদের। তিনি বলেছেন, জীবন দিয়ে হলেও জাতীয় পার্টি আগামীকাল শনিবার রাজধানীর কাকরাইলে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মহাসমাবেশ করবে।
আজ শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে রাজধানীর বনানীতে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন তিনি এ কথা বলেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর কাকরাইলে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা প্রসঙ্গে জি এম কাদের বলেন, ‘আমরা আগামীকাল (২ নভেম্বর) একটি সমাবেশ আহ্বান করেছিলাম। সেই আয়োজনকে ঘিরে গতকাল রাতে ছাত্রজনতার ব্যানারে ছাত্র অধিকার পরিষদের একজন নেতা বেনিয়ামিন মোল্লার নেতৃত্বে একটি দল জাতীয় পার্টি অফিসে ভাঙচুর করেছে, আমরা এর তীব্র নিন্দা প্রতিবাদ জানাই। আমরা জানতে পারি পরে নাগরিক কমিটির ব্যানারে মনির, ইসমাইল, আনোয়ারের নেতৃত্বে আরেকটি দল আমাদের পার্টি হয়েছে হামলা করে।’
জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমরা দেশের একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দল। আমরা মহাসমাবেশ করার জন্য ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কাছ থেকে বৈধভাবে অনুমতি নিয়ে সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। একটি কুচক্রী মহল আগামীকালের যে মহাসমাবেশ নির্ধারিত আছে সেটাকে নস্যাৎ করতে পরিকল্পিতভাবে এই হামলা করেছে।’
জি এম কাদের বলেন, ‘একটি গোষ্ঠি অপবাদ দেওয়ার চেষ্টা করছে, আমাদেরকে বলা হয় আওয়ামী লীগের দোসর। এসব অপবাদের সত্যতা নেই। এর পেছনে ষড়যন্ত্র চলছে, এসবের সঙ্গে কিছু বুদ্ধিজীবীও জড়িত। আমরা আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে সবচেয়ে বেশি সমালোচনা, তাদের দুর্নীতি নিয়ে কথা বলেছি। এক্সট্রা জুডিশিয়াল কিলিং নিয়ে কথা বলেছি। তাহলে আমরা কী করে দোসর!’
জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান বলেন, ‘কীভাবে ২০০৮ সালে নির্বাচনে আমরা আওয়ামী লীগের সঙ্গে মহাজোট করে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলাম। সেই শেখ হাসিনার সরকারে আমি মন্ত্রী ছিলাম। তাই বলে আমরা শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদ ও অন্যায়ের ভাগিদার হবো কেন? সেই সরকারের বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রী থাকাকালে হজযাত্রীদের খারাপ বিমানে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে তার প্রতিবাদে আমি পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছিলাম।’
জি এম কাদের অভিযোগ করে বলেন, ২০১৪ ও ২০২৪ সালের সংসদ নির্বাচনে হাসিনা সরকার জাতীয় পার্টিকে ব্ল্যাকমেইল করে নির্বাচন করতে বাধ্য করেছিলো। ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে সব রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগকে বৈধতা দিয়েছিলো। আওয়ামী লীগের আমলে জাতীয় পার্টি যেসব নির্বাচনে অংশ নিয়েছে, সেগুলো স্বতঃস্ফূর্ত ছিল না। শেখ হাসিনা গায়ের জোরে আমাদের নির্বাচনে নিয়েছিলো।
জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমাদের ধ্বংস করার যে ষড়যন্ত্র, সেটা ১৯৯০ সাল থেকে শুরু হয়েছে। এটা সেই ষড়যন্ত্রেরই অংশ। মনে করেছিলাম অন্তর্বর্তী সরকার আসার পর এটা হয়ত শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু সেই ষড়যন্ত্র এখনো চলছে।’
জি এম কাদের বলেন, ‘যারা এখনো পানিতেই নামেনি, তারা এখন আমাদের বিরুদ্ধে নানা কথা বলছে। তাদের ধারণা, জাতীয় পার্টির ধ্বংস হলে তাদের ভোটগুলো আমরা পাবো। পলিটিক্সে তাদের ম্যাচুরিটি আসেনি, যারা এ কথা বলে।’
বিগত সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট করা এবং সেই সরকারের অংশীদার হওয়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দাবির মুখে চলমান রাষ্ট্র সংস্কার সংলাপে জাতীয় পার্টিকে ডাকছে না অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এ নিয়ে রংপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছেন জাতীয় পার্টির স্থানীয় নেতারা।
এমন পরিস্থিতিতে ২ নভেম্বর ঢাকায় দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশের ডাক দেয় জাতীয় পার্টি। এর প্রতিবাদে গতকাল সন্ধ্যার দিকে জাতীয় পার্টির দলীয় কার্যালয় অভিমুখে যাত্রা করে ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতৃত্বে ছাত্র-জনতা।
সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্য থেকে মশাল মিছিল নিয়ে জাতীয় পার্টির অফিসের সামনে যান তারা। মিছিলটি জাতীয় পার্টি অফিসের সামনে এলে দলটির নেতাকর্মীদের বাধার মুখে পড়েন তারা। এ সময় সেখানে ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে ছাত্র-জনতা জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের ধাওয়া দিলে তারা পালিয়ে যান। এরপর আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতা জাতীয় পার্টির অফিসে আগুন লাগিয়ে দেয়, ভাঙচুর করে এবং এরশাদের ছবিসহ লোগো খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে তুলে ফেলে।
আরও পড়ুন: জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আগুন দিলো ছাত্র-জনতা