বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে রাজধানীর আশুলিয়ায় ৪৬ জনকে গুলি করে হত্যার পর পিকআপ ভ্যানে সাতজনের লাশ পোড়ানোর ঘটনায় পুলিশ কর্মকর্তা এ এফ এম সায়েদকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি আশুলিয়া থানার তৎকালীন ওসি ছিলেন।
গতকাল বুধবার রাতে তাকে কক্সবাজার থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার নামে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ছিল। বর্তমানে সায়েদকে শাহবাগ থানায় রাখা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার তাকে আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হবে।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, নিজেকে আড়াল করতে নানা কৌশল খাটিয়েও শেষ রক্ষা না হওয়ায় যে কোনো মুহূর্তে অবৈধ পথে দেশত্যাগের পরিকল্পনা করেন সায়েদ। বিষয়টি আঁচ করতে পেরে ইমিগ্রেশনসহ আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে তার বিষয়ে নজরদারি বাড়াতে বলা হয়। এরই জেরে গতকাল রাতে কক্সবাজার থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
পুলিশ সদর দপ্তরের সূত্রমতে, এ এফ এম সায়েদ ২০০৬ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি এসআই (নিরস্ত্র) পদে পুলিশে যোগ দেন। তিনি খুলনা নগরীর ৪ নম্বর মিয়াপাড়া মহল্লার মো. ইসমাইলের ছেলে।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের দাপটে এএফএম সায়েদ ঢাকা জেলায় একটানা চাকরি করেছেন একটানা ১০ বছর ১০ মাস ৬ দিন। এ সময়টাতে তিনি ঘুরেফিরে আশুলিয়া থানার সেকেন্ড অফিসার, গোয়েন্দা পুলিশ ঢাকা উত্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, আশুলিয়া ও সাভার থানার ওসির দায়িত্ব পালন করেছেন।
গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশ ছেড়ে পালানোর মধ্য দিয়ে পতন ঘটে আওয়ামী লীগ সরকারের।
ওই দিন বিকেলেই লাশের স্তূপে আরও লাশ তোলা এবং পরে লাশ পোড়ানোর একটি ভিডিও প্রকাশ্যে এলে সারাদেশে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। গত ৩০ আগস্ট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই ভিডিও ভাইরাল হয়।
ভাইরাল হওয়া ১ মিনিট ১৪ সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা যায়, দুজন পুলিশ সদস্য একজন হাত ও একজন পা ধরে লাশ ভ্যানে নিক্ষেপ করছেন। এরপর ভ্যানে লাশের স্তূপ করে কাপড় দিয়ে ঢেকে দেন তারা। সর্বশেষ লাশটি তুলে একটি ব্যানার দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়। শেষে পুলিশ সদস্যদের উপস্থিতি দেখা মেলে।
জানা গেছে, রাজধানীর আশুলিয়ায় বীভৎস ও নারকীয় ওই ঘটনার নির্দেশদাতা হিসেবে প্রত্যক্ষভাবে অংশ নিয়েছিলেন ওসি সায়েদ। ওই সময় তিনি ডিউটি করছিলেন সিভিল ড্রেসে। পরনে ছিল নীল রঙের পোলো শার্ট, কালো রঙের ট্রাউজার। এক হাতে ব্যান্ডেজ। ট্রাউজারের পকেটে ছিল ওয়্যারলেস সেট। প্রচণ্ড টেনশনে খেয়েছেন একের পর এক সিগারেট।
সেদিন ঘটনাস্থলে থাকা এসআই , এএসআই এবং কনষ্টেবল পদের প্রত্যক্ষদর্শী ৪ পুলিশ কর্মকর্তার সাথে কথা হয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা জানান, লাশ ভ্যানে তোলার পূর্বপর ঘটনা জুড়ে যা কিছু ঘটেছে সকল কিছুর নেতৃত্বে ছিলেন আশুলিয়া থানার তৎকালীন ওসি এ এফ এম সায়েদ।
তার নির্দেশেই লাশ পড়ানোর জন্য পেট্রোল জোগাড় করেছিলেন আশুলিয়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের তৎকালীন ইনচার্জ এসআই আরাফাত উদ্দিন ও আশুলিয়া থানার এএসআই মনির। প্লাস্টিকের বোতলে করে আনা হয়েছিলো পেট্রোল। ৩ দফায় গাড়িটিতে ছিটানো হয় পেট্রোল।
আরও পড়ুন: পিকআপ ভ্যানে ৭ শিক্ষার্থীর লাশ তুলে আগুনে পুড়িয়ে ফেলে পুলিশ!