চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) পদ থেকে এ কে এম ফজলুল্লাহকে অপসারণ করা হয়েছে। একটানা ছয় মেয়াদে চুক্তিভিত্তিক ১৫ বছর দায়িত্ব পালনের পর বিতর্কিত এই কর্মকর্তাকে অপসারণ করা হয়।
গতকাল বুধবার এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগ। তবে বিষয়টি জানাজানি হয় আজ বৃহস্পতিবার। এই পদে সাময়িকভাবে স্থানীয় সরকার চট্টগ্রাম বিভাগের পরিচালক মুহাম্মদ আনোয়ার পাশাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
ফজলুল্লাহ চট্টগ্রাম ওয়াসার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হিসেবে অবসর নেন ২০০০ সালে। এর ৯ বছরের মাথায় আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সালের ৬ জুলাই প্রথমবার চট্টগ্রাম ওয়াসা বোর্ডের চেয়ারম্যান পদে এক বছরের জন্য নিয়োগ পান তিনি। এরপর আরও এক বছর চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন।
২০১১ সালে ঢাকা ওয়াসার আদলে চট্টগ্রাম ওয়াসাতেও ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ তৈরি করা হয়। ওয়াসা বোর্ডও পুনর্গঠন করা হয়। তখন এমডি পদে নিয়োগ পান তৎকালীন চেয়ারম্যান এ কে এম ফজলুল্লাহ। সেই থেকে এমডি পদে বারবার পুনরায় নিয়োগ পেয়ে এসেছেন তিনি।
দীর্ঘ দায়িত্ব পালনকালে ফজলুল্লাহ বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ ওঠে। তার আমলে পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশনের জন্য একের পর এক প্রকল্প নেওয়া হলেও কোনোটিই তিনি নির্ধারিত সময়ে শেষ করতে পারেননি। প্রকল্পের ব্যয়ও বেড়েছে দফায় দফায়।
ফজলুল্লাহর আমলে পানি সরবরাহ ও পয়োনিষ্কাশনব্যবস্থা গড়ে তুলতে অন্তত ১০টি প্রকল্প নেওয়া হয়। আটটি প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে। দুটি বড় প্রকল্পের কাজ এখনো চলছে। শেষ হওয়া আট প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে ৮ হাজার ২৫৭ কোটি টাকা। আর চলমান দুই প্রকল্পে ব্যয় হচ্ছে ৫ হাজার ৮০২ কোটি টাকা। একের পর এক প্রকল্প নিলেও নগরে পানির সংকট কাটেনি। প্রকল্পের সুফল নিয়েও রয়েছে নানা প্রশ্ন।
পানি চুরি, বছর বছর দাম বাড়ানো, অপচয় কমাতে না পারা, স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতির অভিযোগ আসায় বারবার সমালোচিত হন আওয়ামী লীগঘনিষ্ঠ ৮২ বছর বয়সী এই প্রকৌশলী।
২০২০ সালের ১১ সেপ্টেম্বর ফজলুল্লাহর নামে দুদক চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক বরাবর দুর্নীতি, অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ করেছিলেন চট্টগ্রামের বাসিন্দা হাসান আলী। পরে ২৩ সেপ্টেম্বর অভিযোগের বিষয়ে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়, তা জানতে চেয়েছিলেন হাইকোর্ট। আদালতের ওই পদক্ষেপের পর ওয়াসা ভবনের একটি কক্ষে রহস্যজনকভাবে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। আগুনে কম্পিউটার, গুরুত্বপূর্ণ নথি পুড়ে যায়। এরপর অভিযোগ ওঠে, এমডির দুর্নীতি ঢাকতে ইচ্ছাকৃতভাবে ওই আগুন লাগানো হয়েছিল।
ওয়াসার কর্মকর্তারা বলছেন, ফজলুল্লাহর সঙ্গে বিগত সরকারের বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী নেতার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। তাদের নানাভাবে কাজে লাগিয়ে তিনি বছরের পর বছর এই পদে ছিলেন। এ ছাড়া ওয়াসা বোর্ডও তার নিয়ন্ত্রণ ছিল।
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলেও সরানো হয়নি ফজলুল্লাহকে। তার পদত্যাগের দাবিতে দফায় দফায় আন্দোলন হলেও তিনি সরে যাননি। অবশেষে সরকারই তাকে অপসারণ করলো।
আরও পড়ুন: প্রশাসক হওয়ার ‘প্রস্তাব ফিরিয়ে’ মেয়রের চেয়ারে বসছেন ডা. শাহাদাত