রাজনীতি সংবাদ ডেস্ক প্রকাশের সময় :২৮ অক্টোবর, ২০২৪ ৩:১৪ : অপরাহ্ণ
ব্যাংকখাত থেকে ১৭ বিলিয়ন ডলার পাচার করেছেন ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ধনকুবেররা। লুট করা এই অর্থের পরিমাণ বাংলাদেশি মুদ্রায় ২ লাখ কোটি টাকারও বেশি। আর এ কাজে তারা সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআইয়ের সহায়তা পেয়েছেন।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর এমন তথ্য তুলে ধরেছেন।
আজ সোমবার সাক্ষাৎকারটি প্রকাশ করা হয়।
সাক্ষাৎকারে আহসান এইচ মনসুর দাবি করেন, শীর্ষস্থানীয় ব্যাংকগুলোকে জোরপূর্বক দখল করতে সাহায্য করেছে ডিজিএফআই। তিনি বলেন, ব্যাংকগুলো অধিগ্রহণের সময় নতুন অংশীদারদের ঋণ ও আমদানি খরচ বেশি দেখিয়ে বাংলাদেশ থেকে দুই লাখ কোটি টাকা পাচার করা হয়েছে।
গভর্নর বলেন, আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে এটিই সবচেয়ে বড় পরিসরের ব্যাংক ডাকাতির ঘটনা। এরকম ব্যাংক ডাকাতি অন্য কোথাও হয়নি। এটি রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় হয়েছে। ব্যাংকের সাবেক প্রধান নির্বাহীদের ওপর গোয়েন্দা কর্মকর্তারা চাপ না দিলে এরকম কিছু সম্ভব হতো না।
বিশেষ করে এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলম ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে আহসান এইচ মনসুর অভিযোগ করে বলেন, ডিজিএফআইয়ের সহায়তায় ব্যাংকগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে তারা দেশের ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে অন্তত ১০ বিলিয়ন ডলার পাচার করেছে।
ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, যোগাযোগ করা হলেও আইএসপিআর এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করেনি। ডিজিএফআই থেকেও কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
টানা দেড় দশকের বেশি সময় বাংলাদেশের ক্ষমতায় ছিলেন শেখ হাসিনা। তবে তার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের শাসনামলে ভোট কারচুপি, বিরোধীদের কারাদণ্ড ও দমন-পীড়ন এবং ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগে ওঠে বারবার। ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্টে ভারতে পালিয়ে যান সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী।
নোবেলবিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর লোপাট হওয়া অর্থের সন্ধান পেতে এবং অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনের আওতায় আনতে উদ্যোগ নেওয়া হয়।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সাবেক কর্মকর্তা আহসান এইচ মানসুর গত মাসে ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে বলেছিলেন, শেখ হাসিনার সহযোগীদের বিদেশে থাকা সম্পদের তদন্তে যুক্তরাজ্যের সহায়তা চেয়েছেন তিনি।
হাসিনার শাসনামলে শীর্ষস্থানীয় ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছিল বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
আহসান এইচ মনসুর বলেন, হাসিনার শাসনামলে ব্যাংকের পর্ষদ সদস্যদেরকে বাড়ি থেকে তুলে এনে হোটেলসহ বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যেতেন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। তারপর ‘বন্দুকের মুখে’ তাদের ব্যাংকের সমস্ত শেয়ার ‘এস আলমের কাছে’ বিক্রি করতে এবং পরিচালকের পদ থেকে ইস্তফা দিতে বলতেন। একের পর এক ব্যাংকে তারা এ কাজ করেছে।
একটি ব্যাংকের সাবেক সিইও ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে বলেন, জোরপূর্বক ব্যাংক দখলের অংশ হিসেবে তাকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়েছিল। দেশের অন্যতম বৃহৎ ব্যাংক ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের সাবেক সিইও মোহাম্মদ আবদুল মান্নান বলেন, ২০১৩ সাল থেকে তিনি ‘তৎকালীন সরকারের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা’ তাকে চাপে রেখেছিলেন।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সুপারিশ করা ব্যক্তিদের পর্ষদ সদস্য করতে তাকে চাপ দেওয়া হয়। এছাড়া ‘সরকারি সংস্থার সঙ্গে যুক্ত লোকজন’ ব্যাংকটির একজন বিদেশি পরিচালকের হোটেল রুমে তল্লাশি চালান।
আহসান এইচ মানসুর বলেন, শেখ হাসিনার শাসনামলে দেউলিয়া হওয়া প্রায় ডজনখানেক ব্যাংকের অডিট শেষ করার পর পাচার হওয়া অর্থ পুনরুদ্ধারের লক্ষ্য নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
আরও পড়ুন: ‘পৃথিবীতে এস আলমের মতো কেউ ব্যাংক ডাকাতি করেনি’