রাজনীতি সংবাদ প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম প্রকাশের সময় :১১ অক্টোবর, ২০২৪ ৮:১৬ : পূর্বাহ্ণ
চট্টগ্রাম নগরীতে পূজামণ্ডপের অনুষ্ঠানের মঞ্চে বৃহস্পতিবার ইসলামী সঙ্গীত পরিবেশন করেছেন একটি সাংস্কৃতিক সংগঠনের শিল্পীরা। এ ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক বিতর্ক ও সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে।
নগরীর রহমতগঞ্জের জে এম সেন হলে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে ঘটনাটি ঘটেছে।
কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন, চট্টগ্রাম কালচারাল একাডেমি নামের একটি সাংস্কৃতিক সংগঠনের ছয় সদস্য অনুষ্ঠানে দুটি গান পরিবেশন করেন। তার মধ্যে একটি গান ছিল ‘শুধু মুসলমানের লাগি আসেনিকো ইসলাম’।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া প্রায় ৩ মিনিটের ভিডিওটিতে দেখা যায়, ছয়জন তরুণ মঞ্চে গান পরিবেশন করছেন। এ সময় তারা একটি ইসলামী সঙ্গীত পরিবেশন করছেন। আশপাশে উপস্থিত কয়েকজনকে সেটি মোবাইল ফোনে ধারণ করতে দেখা যায়।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, সন্ধ্যায় মঞ্চে নাচের অনুষ্ঠান হচ্ছিল। এ সময় কয়েকজন তরুণ এসে দেশাত্মবোধক গান পরিবেশন করবেন বলে মঞ্চে ওঠেন। তারা দুটি গান পরিবেশন করেন। পরে তারা ‘ধন্যবাদ’ দিয়ে নেমে চলে যান। তারা গান গাওয়ার সময় কেউ তাদের নামায়নি বা প্রতিবাদ করেনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম কালচারাল একাডেমির সভাপতি সেলিম জামান বলেন, পূজা উদযাপন পরিষদের যুগ্ম সম্পাদক সজল দত্তের আমন্ত্রণেই সেখানে সংগীত পরিবেশন করতে গেছেন তারা। সেখানে দুটো গান পরিবেশন করা হয়েছে, দুটোই সম্প্রীতির সংগীত। কেউ কেউ ভিডিও এডিট করে অপপ্রচার চালাচ্ছে।
এদিকে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে অনেকে দাবি করেছেন, চট্টগ্রাম কালচারাল একাডেমি নামের সংগঠনটি ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত।
চট্টগ্রাম কালচারাল একাডেমির বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম নগর (উত্তর) ছাত্রশিবিরের সভাপতি ফখরুল ইসলাম বলেন, এটি ছাত্রশিবিরের কোনো সংগঠন নয়।
পূজামণ্ডপে অনুষ্ঠানের মঞ্চে ইসলামী সঙ্গীত গাওয়ার সঙ্গে ছাত্রশিবিরকে জড়ানোর প্রতিবাদ জানিয়ে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি জেনারেল জাহিদুল ইসলাম
প্রতিবাদ জানিয়ে এ ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানিয়েছেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে নিজের ভেরিফাইড ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে এক পোস্টের মাধ্যমে ইসলামী ছাত্রশিবিরের অবস্থান তুলে ধরে এ দাবি জানান তিনি।
ফেসবুক পোস্টে জাহিদুল ইসলাম লিখেন, ‘এই ঘটনার সঙ্গে অনেকেই ছাত্রশিবিরকে জড়িয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখছেন। আমি দায় নিয়ে বলছি, এর সঙ্গে ছাত্রশিবিরের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। শিবির কারও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে, এমন কাজ কখনোই সমর্থন করে না। তাই এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।’
ছাত্রশিবিরের এই সেক্রেটারি আরও লিখেছেন, ‘ছাত্রশিবিরের পক্ষ থেকে স্পষ্ট দাবি জানাচ্ছি, একটি নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটির মাধ্যমে প্রকৃত সত্য সবার সামনে উঠে আসুক। কেউ দোষী হলে তাকে অবশ্যই আইনের আওতায় নিয়ে এসে শাস্তি দেওয়া হোক।’
সত্যতা যাচাই না করেই বিভিন্ন সময় শিবিরকে জড়িয়ে মিথ্যা প্রচারণা চালানো হয় জানিয়ে ফেসবুক পোস্টে জাহিদুল ইসলাম লিখেন, ‘সত্যতা যাচাই না করেই যারা শিবিরকে জড়িয়ে মিথ্যা প্রচারণা চালায়, তারা একটা সময় গিয়ে নিজেদের বিবেকের কাছেই প্রশ্নবিদ্ধ হবেন। এ ধরনের কাজ থেকে ভবিষ্যতে বিরত থাকার অনুরোধ করছি।’
এদিকে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম রাতেই ওই পূজামণ্ডপে গিয়ে এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তারের আশ্বাস দিয়েছেন।