মঙ্গলবার, ৩ ডিসেম্বর, ২০২৪ | ১৮ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ৩০ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬

মূলপাতা চট্ট-মেট্টো

চট্টগ্রাম চেম্বারের ভোটের লড়াইয়ে নামতে পারেন আলোচিত ৫ ব্যবসায়ী



রাজনীতি সংবাদ প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
প্রকাশের সময় : ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫:১০ অপরাহ্ণ

শতবর্ষী বাণিজ্য সংগঠন চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির আসন্ন নির্বাচনকে ঘিরে ব্যবসায়ী মহলে নানা জল্পনা-কল্পনা চলছে। কারণ দীর্ঘ ১২ বছর পর চেম্বারের প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন হবে। ভোটের লড়াইয়ে জিতে ১১৮ বছরের ঐতিহ্যবাহী এ চেম্বারের নেতৃত্বে কে আসবেন তা নিয়ে ব্যবসায়ীদের মধ্যে কৌতূহল দেখা দিয়েছে।

চট্টগ্রাম চেম্বারের সর্বশেষ ভোটাভুটি হয়েছিল ২০১৩ সালের ৩০ মার্চ। এর পরের পাঁচ মেয়াদের নির্বাচনে কোনো ভোটাভুটি হয়নি। চট্টগ্রাম-১১ আসনের (বন্দর-পতেঙ্গা) আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য এম এ লতিফ দীর্ঘ ১১ বছর চট্টগ্রাম চেম্বারকে কুক্ষিগত করে রাখেন। তিনি গত ৯ বছর চেম্বারে ভোট বন্ধ করে স্বেচ্ছাচারিতা ও স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে পরিবারতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন।

গত বছরের ৮ আগস্ট এম এ লতিফের ছেলে ওমর হাজ্জাজ বিনাভোটে পরিচালক হয়ে চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতির চেয়ারে বসেন।

গত ৫ আগস্ট দেশে ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর চট্টগ্রাম চেম্বার ঘিরে ব্যবসায়ীরা আন্দোলনে নামেন। চেম্বারে স্বেচ্ছাচারিতা ও পরিবারতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করার অভিযোগে নগরীর আগ্রাবাদের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের সামনে বিক্ষোভ করেন ব্যবসায়ীরা। এ পরিস্থিতিতে চাপে পড়ে গত ২ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম চেম্বারের বিনাভোটে নির্বাচিত সকল পরিচালক পদত্যাগ করেন।

নতুন নির্বাচন আয়োজনের লক্ষে গত ৯ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম চেম্বারে প্রশাসক নিয়োগ দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) মুহাম্মদ আনোয়ার পাশাকে প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

প্রশাসককে ১২০ দিনের মধ্যে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্পন্ন করে নতুন নির্বাচিত কমিটির নিকট দায়িত্ব হস্তান্তর করতে বলেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। কিন্তু ১২০ দিনের মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন করা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।

কারণ চট্টগ্রাম চেম্বারের নির্বাচনে নতুন সদস্যদের ভোটের চার মাস আগে ভোটার হতে হয়। ফলে প্রশাসক নিয়োগের পর থেকে চেম্বারের যারা নতুন সদস্য হয়েছেন বা হচ্ছেন তারা ভোট দিতে পারবেন না।

অপরদিকে চেম্বারের পুরাতন সদস্যদের নির্বাচনের তিন মাস আগে সদস্যপদ রিনিউ (নবায়ন) করতে হয়। গত ১ জুলাই থেকে চেম্বারের পুরাতন সদস্যদের সদস্যপদ নবায়ন শুরু হয়েছে। যা শেষ হবে ৩০ সেপ্টেম্বর। ফলে নবায়নের সময় আছে আর মাত্র ৪ দিন।

এ অবস্থায় পুরাতন ও নতুন সদস্যদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে প্রশাসকের মেয়াদ আরও ১২০ দিন বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ব্যবসায়ীরা ১২০ দিনের দাবি জানালেও চট্টগ্রাম চেম্বারের প্রশাসকের মেয়াদ দুই মাস বাড়ানো হতে পারে।

যদি প্রশাসকের মেয়াদ দুই মাস বাড়ানো হয়, সে হিসেবে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি বা মার্চের দিকে চেম্বারের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে।

ব্যবসায়ীদের নতুন সদস্যপদ প্রদান ও পুরনো সদস্যদের নবায়নের সুযোগ দিতে প্রশাসকের মেয়াদ আরও ১২০ দিন বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন ব্যবসায়ী নেতারা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম চেম্বারের প্রশাসক মুহাম্মদ আনোয়ার পাশা রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‘আমি মনে করি, একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য ব্যবসায়ী নেতাদের এ দাবি যৌক্তিক। বিষয়টি চিঠির মাধ্যমে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছে। তবে মন্ত্রণালয় থেকে এ বিষয়ে এখনো কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। আশা করছি, মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে একটা সিদ্ধান্ত দেবে।’

চট্টগ্রাম চেম্বার সূত্রে জানা গেছে, চেম্বারের বর্তমান সদস্য সংখ্যা হলো ৭ হাজার ৫৯৯ জন।

চট্টগ্রাম চেম্বারের নির্বাচনে কেবল ২৪টি পরিচালক পদে নির্বাচন হয়। কিন্তু নির্বাচনে প্রার্থীদের মধ্যে সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় না। প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় প্যানেলভিত্তিক। অবশ্য প্যানেল ছাড়াও স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করতে পারেন প্রার্থীরা।

নির্বাচনে চারটি ক্যাটাগরিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন প্রার্থীরা। ক্যাটাগরিগুলো হলো-অর্ডিনারি, অ্যাসোসিয়েট, গ্রুপ মেম্বার এবং টাউন অ্যাসোসিয়েশন।

নির্বাচনে ২৪ জন পরিচালক নির্বাচিত হওয়ার পর তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে পরিচালনা পর্ষদের একজন সভাপতি, একজন সিনিয়র সহসভাপতি ও একজন সহসভাপতি নির্বার্চিত হয়।

ভোটের লড়াইয়ে নামতে পারেন আলোচিত ৫ ব্যবসায়ী
এখনো নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা না হলেও চট্টগ্রাম চেম্বারের ভোটকে ঘিরে অনেক ব্যবসায়ী ইতিমধ্যে নানামুখী তৎপরতা শুরু করে দিয়েছেন। প্যানেলের মাধ্যমে নির্বাচন করতে ব্যবসায়ীদের মধ্যে তোড়জোড় চলছে। এ নিয়ে ব্যবসায়ী নেতারা দফায় দফায় বৈঠক করছেন। সম্ভাব্য ব্যবসায়ী প্রার্থীদের অনেকে নীরবে চেম্বারের ভোটারদের সঙ্গে যোগাযোগও করছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চট্টগ্রাম চেম্বারের ভোটের লড়াইয়ে নামতে পারেন আলোচিত পাঁচ ব্যবসায়ী। এরা হলেন-মুশমার্ক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এম নুরুল হক, ইস্টার্ন গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাসির উদ্দিন চৌধুরী, ইন্ডিপেন্ডেন্ট অ্যাপারেলস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এম আবু তৈয়ব, প্যাসিফিক জিন্স গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মোহাম্মদ তানভীর এবং রাইজিং গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমজাদ হোসেন চৌধুরী।

এই পাঁচ আলোচিত ব্যবসায়ী পরিচালক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলে তাদের মধ্যে থেকে একজন চেম্বারের নেতৃত্বে আসতে পারেন বলে মনে করছেন সাধারণ ব্যবসায়ীরা।

এই পাঁচ আলোচিত ব্যবসায়ীর মধ্যে এস এম নুরুল হক হলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি এস এম ফজলুল হকের ছোট ভাই। নুরুল হক ২০০২ সালে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) প্রথম সহসভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন। এ ছাড়া তিনি ২০০০ ও ২০০৪ সালে চট্টগ্রাম চেম্বারের সিনিয়র সহসভাপতি ছিলেন।

জানতে চাইলে এস এম নুরুল হক রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‘এম এ লতিফ ও মাহবুবুল আলম চট্টগ্রাম চেম্বারকে কুক্ষিগত করে প্রতিষ্ঠানটি ধ্বংস করে দিয়েছে। চেম্বারের হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে ও ব্যবসায়ীদের অধিকার নিশ্চিত করতে আমি নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

ইস্টার্ন গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাসির উদ্দিন চৌধুরীও চট্টগ্রাম চেম্বারের ভোটের মাঠে নামতে পারেন। তিনি এর আগে তিনবার চট্টগ্রাম চেম্বারের পরিচালক নির্বাচিত হয়েছিলেন। এ ছাড়া তিনি বিজিএমইএ’র প্রথম সহসভাপতি ছিলেন।

জানতে চাইলে নাসির উদ্দিন চৌধুরী রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‘ব্যবসায়ীরা চট্টগ্রাম চেম্বারকে একটি প্রতিনিধিত্বমূলক ব্যবসায়ী সংগঠন হিসেবে দেখতে চায়, যেখানে তৃণমূলের ব্যবসায়ীদের ভোটাধিকার থাকবে, তাদের মতামতের গুরুত্ব থাকবে। দুর্ভাগ্যের বিষয়, ২০১৫ সাল থেকে চট্টগ্রাম চেম্বারে ব্যবসায়ীদের নির্বাচিত প্রতিনিধি ছিল না। দীর্ঘ ১০ বছর পর চট্টগ্রাম চেম্বারে এবার উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট হবে। তাই এবার চেম্বারের নির্বাচনে অংশ নিতে পারি।’

চট্টগ্রাম নগরীর নাসিরাবাদ এলাকার ইন্ডিপেন্ডেন্ট গার্মেন্টসের মালিক এস এম আবু তৈয়বও এবার চেম্বারের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন। এই ব্যবসায়ী নেতা এর আগে চট্টগ্রাম চেম্বারের একবার পরিচালক নির্বাচিত হয়েছিলেন। এ ছাড়া তিনি বিজিএমইএ’র প্রথম সহসভাপতি ছিলেন। এ ব্যবসায়ী নেতা চিটাগাং ক্লাবের চেয়ারম্যানও নির্বাচিত হয়েছিলেন।

জানতে চাইলে এস এম আবু তৈয়ব রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‘দীর্ঘ ১০ বছর পর চট্টগ্রাম চেম্বারের প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন হবে। গত ১০ বছর ধরে নির্বাচন করার সুযোগ ছিল না। যেহেতু চট্টগ্রামে ব্যবসা করি, তাই এবার চেম্বারের নির্বাচন করার আগ্রহ আছে। মূলত চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের দূরবস্থার কথা চিন্তা আমি চট্টগ্রাম চেম্বারে অবদান রাখতে চাই।’

জিন্স রপ্তানির লিজেন্ড খ্যাত দেশের অন্যতম বৃহৎ রপ্তানিকারক শিল্পপ্রতিষ্ঠান প্যাসিফিক জিন্স গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মোহাম্মদ তানভীর আবারও চট্টগ্রাম চেম্বারে ফিরতে পারেন। তিনি চেম্বারের দুইবার পরিচালক ও একবার সহসভাপতি হয়েছেন। চট্টগ্রাম চেম্বারের বিগত পরিচালনা পর্ষদে এম এ লতিফের স্বেচ্ছাচারিতা ও পরিবারতন্ত্রের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে পরিচালক থেকে পদত্যাগ করে ব্যবসায়ী মহলে আলোচিত হয়েছিলেন তিনি। এমন সাহসী সিদ্ধান্তের জন্য তাকে শুধু ব্যবসায়ীরা নয়, চট্টগ্রামের বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষও বাহবা দিয়েছিলেন।

সৈয়দ তানভীর প্রয়াত শিল্পপতি প্যাসিফিক জিন্সের প্রতিষ্ঠাতা নাসির উদ্দিনের বড় ছেলে। ইংল্যান্ডের লিড ইউনিভার্সিটি থেকে তিনি স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছেন এই তরুণ শিল্পপতি।

ব্যবসায়ীদের অনেকে বলছেন, দেশের বিজনেস কমিউনিটিতে তরুণ শিল্পপতি সৈয়দ তানভীরের কোনো দুর্নাম নেই। তিনি একজন শ্রমিকবান্ধব ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত। সততা ও পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির কারণে ব্যবসায়ী মহলে তার গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। চেম্বারের বিগত পরিচালনা পর্ষদ থেকে পদত্যাগ করায় তার গ্রহণযোগ্যতা আরও বেড়েছে। নির্বাচনে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলে ব্যবসায়ীদের সমর্থন পাবেন।

কিন্তু সৈয়দ তানভীর চেম্বারের নির্বাচন করবেন কিনা তা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে রয়েছেন বলে জানিয়েছেন।

সৈয়দ মোহাম্মদ তানভীর রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম চেম্বারে ইতোপূর্বে আমি দুই মেয়াদে পরিচালক ও সহসভাপতির দায়িত্ব পালন করেছি। যেটুকু সুযোগ পেয়েছি চেষ্টা করেছি চেম্বারে ভালো কাজ করার যেন বিজনেস কমিউনিটি উপকৃত হয়। ভবিষ্যতে সুযোগ পেলে চেম্বারে আরও ভালো কাজ করার চেষ্টা করবো। তবে আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবো কিনা তা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে রয়েছি।’

চট্টগ্রামের এক সময়ের জাহাজ ভাঙ্গা শিল্পের অন্যতম প্রতিষ্ঠান রাইজিং গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমজাদ হোসেন চৌধুরী ৯ বছর পর আবার চেম্বারের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন। তিনি বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আসলাম চৌধুরীর ছোট ভাই। তিনি এর আগে ২০১৩ ও ২০১৫ সালে চেম্বারের পরিচালক নির্বাচিত হয়েছিলেন।

চেম্বারের বিগত নির্বাচনে দুইবার পরিচালক নির্বাচিত হলেও এবারের ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলে বেগ পেতে হতে পারে আমজাদ হোসেন চৌধুরীকে। কারণ তার বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ, ঋণ জালিয়াতির অভিযোগে একাধিক মামলা রয়েছে। ২০২২ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামের শাহ আমানত বিমানবন্দর থেকে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করেছিলো। পরে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। অর্থ আত্মসাৎ ও ঋণ জালিয়াতির মামলা কাঁধে নিয়ে চেম্বারের নির্বাচনে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলে ভোটারদের কতটা সমর্থন পাবেন তা নিয়ে ব্যবসায়ী মহলে প্রশ্ন উঠেছে।

জানতে চাইলে আমজাদ হোসেন চৌধুরী রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‘ব্যবসা যেহেতু করি, তাই ব্যবসায়ীদের প্রয়োজনে নির্বাচনে অংশ নিতেই পারি। আমি ইতিপূর্বে দুইবার চেম্বারে নির্বাচন করেছি। ২০১৩ সালের প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচনে আমি পরিচালক পদে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ভোট পেয়েছি।’

প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ ও ঋণ জালিয়াতির অভিযোগে দায়ের করা মামলাগুলো এখনো বিচারাধীন। আদালতে এখনো আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি। চেম্বারের নির্বাচনের আরও ৬ থেকে ৮ মাস সময় আছে। এর মধ্যে এসব মামলার কী অবস্থা হয় দেখা যাক।’

হতে পারে তিন প্যানেলের ত্রিমুখী ভোটযুদ্ধ
চট্টগ্রাম চেম্বারের আসন্ন নির্বাচনে পৃথক তিনটি প্যানেলের মধ্যে ত্রিমুখী ভোটযুদ্ধ হতে পারে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, একটি প্যানেলের নেতৃত্ব দেবেন আমীর হুমায়ুন মাহমুদ চৌধুরী। তবে তিনি নির্বাচনে অংশ নেবেন না। তিনি চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক সভাপতি ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর ছোট ভাই। আরেকটি প্যানেলের নেতৃত্ব দেবেন চট্টগ্রাম-১১ আসনের আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য ও চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক সভাপতি এম এ লতিফ। তিনিও নির্বাচনে অংশ নেবেন না। অপর প্যানেলের নেতৃত্ব দেবেন চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি এস এম নুরুল হক। তিনি নির্বাচনে অংশ নেবেন বলে জানিয়েছেন।

আমীর হুমায়ুন চৌধুরীর প্যানেলে নির্বাচনে অংশ নিতে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করছেন বিভিন্ন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন এশিয়ান ডাফ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আবদুস সালাম, ইন্ডিপেন্ডেন্ট গার্মেন্টসের মালিক এস এম আবু তৈয়ব এবং ইস্টার্ন গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাসির উদ্দিন চৌধুরী।

আমীর হুমায়ুন চৌধুরীর সঙ্গে আবদুস সালামের সাক্ষাৎ করা নিয়ে ব্যবসায়ী মহলে নানা সমালোচনা হচ্ছে। কারণ আবদুস সালাম আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। ২০১৯ সালের ৭ মার্চ তিনি চট্টগ্রাম নগরীর বাগমনিরাম ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সদস্য হন। বাগমনিরাম ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগের সভাপতি গিয়াস উদ্দিনের কাছে তিনি সদস্য ফরম জমা দেন। আবদুস সালামের ছেলে এশিয়ান গ্রুপের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক পরিচালক সাকিফ আহমেদ সালামও আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। তিনি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক উপকমিটির সদস্য। ২০২৩ সালের ৩১ জুলাই তাকে এই কমিটির সদস্য নির্বাচিত করা হয়।

২০১৩ সালে চেম্বারের নির্বাচনে মোরশেদ মুরাদ ইব্রাহীমের প্যানেল থেকে নির্বাচন করেছিলেন আবদুস সালাম। কিন্তু মাহবুবুল আলম-নুরুন নেওয়াজ সেলিমের প্যানেলের কাছে তারা পরাস্ত হন। নির্বাচনে মাহবুব-সেলিম পরিষদ থেকে ২০ জন এবং মোরশেদ-সালাম পরিষদ থেকে মাত্র চারজন পরিচালক নির্বাচিত হন।

আমীর হুমায়ুন চৌধুরীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করার বিষয়ে জানতে আবদুস সালামের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আমীর হুমায়ুন মাহমুদ চৌধুরী রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‘আমি তাকে (আব্দুস সালাম) ডাকিনি। সে নিজ থেকে আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে এসেছিলো। সে আওয়ামী লীগ করলেও আমার কাছে যখন এসেছে আমি তো ফিরিয়ে দিতে পারি না। সে আমার কাছে এসেছে তাই কথা বলেছি।’

আপনার প্যানেলের নেতা কে হবেন-এই প্রশ্নের জবাবে চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক এই সভাপতি বলেন, ‘এটা ব্যবসায়ীরাই ঠিক করবেন। আমি তাদের সহযোগিতা করবো।’

এদিকে এস এম নুরুল হকের সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন চট্টগ্রাম নগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহ ও লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) চট্টগ্রাম মহানগরের সাবেক সভাপতি একরামুল করিম। তবে বিজিএমইএ’র সাবেক প্রথম সহসভাপতি এরশাদ উল্লাহ নির্বাচনে অংশ নেবেন না। তার ছেলে ইমাদ এরশাদ প্রার্থী হবেন বলে জানা গেছে। ছেলের জন্য এরশাদ উল্লাহ চেম্বারের ভোটের মাঠে নামবেন।

প্যানেলের বিষয়ে জানতে চাইলে এস এম নুরুল হক রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‘নির্বাচন করার জন্য ব্যবসায়ীরা সবাই আমাকে সমর্থন করছেন। তাই প্যানেল নিয়ে ভোটের মাঠে নামবো। আমি ১৯৯৬ সাল থেকে ট্রেড পলিটিক্স করে আসছি। কাজেই আমাকে আর পরীক্ষা দিতে হবে না।’

কৌশলে ছদ্মবেশী প্যানেল দিতে পারেন লতিফ
সাবেক সংসদ সদস্য এম এ লতিফ এখন কারাবন্দি। চট্টগ্রাম চেম্বারের নির্বাচনের আগে তিনি মুক্তি পাবেন কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। কিন্তু তিনি মুক্তি না পেলেও কারাগার থেকে চেম্বারের নির্বাচনে লড়াই করতে পারেন।

সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, চেম্বারের মোট ভোটারের এক-চতুর্থাংশ ‘পকেট ভোট’ রয়েছে লতিফের। এই ভোট ব্যাংক নিয়ে তিনি নির্বাচনে প্রতিপক্ষের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সক্ষমতা রয়েছে।

চেম্বারের বিগত পরিচালনা পর্ষদের ২৪ জন পরিচালকের মধ্যে দুই ছেলে ওমর হাজ্জাজ ও ওমর মুক্তাদিরসহ ছয়জন নিকটাত্মীয়কে বিনাভোটে পরিচালক পদে বসিয়েছিলেন লতিফ। যা নিয়ে তিনি বিতর্কিত ও সমালোচিত হয়েছেন।

একটি সূত্র জানিয়েছে, চেম্বারের আসন্ন নির্বাচনে লতিফ কৌশলে হয়তো তার দুই ছেলেকে প্রার্থী করবেন না। চেম্বারে পরিবারতন্ত্র প্রতিষ্ঠা নিয়ে বিতর্কিত হওয়ার কারণে তিনি কৌশলে ছদ্মবেশী প্যানেল দিতে পারেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, লতিফ তার প্যানেল লিডার করতে পারেন চেম্বারের সাবেক পরিচালক ও বিএনপি নেতা আসলাম চৌধুরীর ছোট ভাই আমজাদ হোসেন চৌধুরীকে। প্রভাবশালী বিএনপি নেতার ভাইকে কেন লতিফ প্রার্থী করবেন? কারণ আমজাদ হোসেন তার নিকটাত্মীয়। আমজাদ হোসেনের স্ত্রী হলেন লতিফের আপন চাচাতো বোন। সে হিসেবে লতিফ হলেন আমজাদ হোসেনের সম্বন্ধী। কিন্তু এটা ব্যবসায়ীদের অনেকেই জানেন না। তাই ভোটের মাঠে বিএনপিপন্থি ব্যবসায়ীদের দুটি প্যানেলকে পরাস্ত করতে লতিফ বিএনপি নেতার ভাইকে দিয়ে দাবার চাল দিতে পারেন।

লতিফের প্যানেল থেকে নির্বাচন করবেন কি না জানতে চাইলে আমজাদ হোসেন চৌধুরী রাজনীতি সংবাদকে এক কথায় জবাব দেন-‘এটা সময় বলে দিবে।’

দুই বিএনপি নেতার দ্বন্দ্বের ঢেউ লাগতে পারে নির্বাচনে
চট্টগ্রাম চেম্বারের আসন্ন নির্বাচনে বিএনপির দুই শীর্ষ নেতার দ্বন্দ্বের ঢেউ লাগতে পারে। এই দুই নেতা হলেন-আসলাম চৌধুরী ও এস এম ফজলুল হক। তারা দুজনই বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা। তাদের মধ্যে সাপে-নেউলে সম্পর্ক। ১১ বছর আগে আসলাম চৌধুরী চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক থাকাকালে সংগঠনের সহসভাপতি এস এম ফজলুল হকের সঙ্গে সাংগঠনিক নানা বিষয় নিয়ে চরম বিরোধ সৃষ্টি হয়েছিল।

২০১৩ সালের ১৭ আগস্ট চট্টগ্রামের মুসলিম হলে উত্তর জেলা বিএনপির কর্মী সমাবেশে আসলাম চৌধুরী ও ফজলুল হকের মধ্যে তীব্র বাগবিতণ্ডা হয়। সমাবেশের মঞ্চে দুই নেতার বাগবিতণ্ডার একপর্যায়ে আসলাম চৌধুরীর দিকে তেড়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন ফজলুল হক।

চট্টগ্রাম চেম্বারের আসন্ন নির্বাচনে আসলাম চৌধুরীর ভাই আমজাদ হোসেন চৌধুরী ও ফজলুল হকের ভাই নুরুল হক ভোটের লড়াইয়ে নামছেন।

ব্যবসায়ীদের অনেকে মনে করছেন, আসলাম চৌধুরীর সঙ্গে ফজলুল হকের দ্বন্দ্বের জেরে নুরুল হককে ঠেকাতে আমজাদ হোসেন ভোটের মাঠে নামবেন।

আমজাদ হোসেন ও নুরুল হকের নেতৃত্বে পৃথক প্যানেল হলে চেম্বারের নির্বাচনে চরম উত্তেজনা বিরাজ করবে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।

আরও পড়ুন:

‘স্বেচ্ছাচারিতা ও পরিবারতন্ত্রের’ কবল থেকে মুক্ত হলো চট্টগ্রাম চেম্বার

চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি ওমর হাজ্জাজের কর ফাঁকি!

‘চাপে’ পড়ে ২ কোটি ১৫ লাখ টাকা ট্যাক্স দিলো চট্টগ্রাম চেম্বার

চট্টগ্রাম চেম্বারে এমপি লতিফের পরিবারতন্ত্রের জালে সৈয়দ নজরুল

মন্তব্য করুন
Rajniti Sangbad


আরও খবর