শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ | ৫ আশ্বিন, ১৪৩১ | ১৬ রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

মূলপাতা রাজধানী

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে চোর সন্দেহে যুবককে পিটিয়ে হত্যা


রাজনীতি সংবাদ প্রতিবেদক, ঢাকা প্রকাশের সময় :১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১:২৯ : পূর্বাহ্ণ
চোর সন্দেহে এই যুবককে হলের ডাইনিংয়ে ভাতও খাওয়ানো হয়, পরে আবার মারধর করা হয়। ছবি: সংগৃহীত
Rajnitisangbad Facebook Page

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ফজলুল হক মুসলিম হলে চোর সন্দেহে গণপিটুনির শিকার হয়েছেন এক যুবক। গতকাল বুধবার রাতে কয়েক ঘণ্টা ধরে দফায় দফায় মারধরে ওই যুবকের মৃত্যু হয়। গতকাল দিবাগত রাত ১২টার দিকে কয়েকজন শিক্ষার্থী তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

নিহত যুবকের নাম তোফাজ্জল হোসেন। তার বাড়ি বরিশালের বরগুনা জেলার পাথরঘাটা উপজেলার কাঁঠালতলী ইউনিয়নে। তার বাবা-মা কেউ বেঁচে নেই বলে জানা গেছে।

এ ঘটনায় আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে শাহবাগ থানায় মামলা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেট অফিসের সুপারভাইজার মোহাম্মদ আমানুল্লাহ বাদী হয়ে এ মামলা করেন।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, গত ১৮ সেপ্টেম্বর রাত ৭টা ৪৫ মিনিটে একজন যুবক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলের গেটে সন্দেহজনকভাবে ঘোরাফেরা করতে থাকলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু ছাত্র তাকে আটক করেন। পরে তাকে প্রথমে হলের মূল ভবনের গেস্ট রুমে নিয়ে তিনি মোবাইল ফোন চুরি করেছে বলে এলোপাতাড়ি চড়-থাপ্পড় ও কিলঘুষি মারে। এ সময় তাকে জিজ্ঞাসা করলে তার নাম তোফাজ্জল বলে জানান। তিনি মানসিক ভারসাম্যহীন বুঝতে পেরে তাকে হলের ক্যান্টিনে খাবার খাওয়ানো হয়। পরে হলের গেস্টরুমে নিয়ে জানালার সঙ্গে হাত বেঁধে স্ট্যাম্প, হকিস্টিক ও লাঠি দিয়ে উচ্ছৃঙ্খল কিছু ছাত্র বেধড়ক মারধর করলে তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন আবাসিক শিক্ষককে জানানো হলে তারা সহায়তা করে অচেতন যুবককে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে যান। পরে রাত ১২টা ৪৫ মিনিটে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, রাত সাড়ে ৮টা-৯টার দিকে ফজলুল হক হলে চোর সন্দেহে তোফাজ্জলকে আটক করেন শিক্ষার্থীরা। আটকের পর রাত ১০টা পর্যন্ত হলের গেস্টরুমে কয়েক দফা মারধর করা হয়। একপর্যায়ে ক্যান্টিনে বসিয়ে ভাতও খাওয়ানো হয়। এরপর আবারও মারধর করা হয়। দীর্ঘ জেরায় তার অবস্থার অবনতি ঘটলে রাত ১২টার দিকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা।

এ দিকে বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে পরে জানা যায়, তোফাজ্জল মানসিক ভারসাম্যহীন। ক্যাম্পাসে চলাফেরা থাকায় হলে ঢুকে পড়েছিলেন তিনি।

গতকাল মধ্যরাতে শিক্ষার্থীদের পিটুনিতে ওই যুবকের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক ফেসবুক গ্রুপ ও নিজেদের ব্যক্তিগত প্রোফাইলে দেওয়া বিভিন্ন পোস্টে শিক্ষার্থীদের অনেকেই বিচারবহির্ভূত এই হত্যাকাণ্ডের বিচার ও দোষী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন। হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে কিছু শিক্ষার্থী আজ ভোরে টিএসসি এলাকায় বিক্ষোভও করেছেন।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক সাইফুদ্দিন আহমদ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ফজলুল হক মুসলিম হলে পিটিয়ে একটি হত্যার ঘটনা শোনার পর ভোরেই আমি প্রক্টরিয়াল টিম নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যাই। আমি ফজলুল হক মুসলিম হলে প্রভোস্টের সঙ্গে কথা বলে সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহের জন্য বলেছি। সেগুলো দেখে কারা দোষী, তা শনাক্ত করা হবে। তারপর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা বিষয়টাকে খুব গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছি।’

এ ঘটনায় সুষ্ঠু বিচারের দাবি জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার।

বিবৃতিতে আবু বাকের মজুমদার বলেন, এসব ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক এবং মানবাধিকারের মৌলিক নীতিগুলির প্রতি সম্পূর্ণ অবজ্ঞা প্রদর্শন করে। গত ১৫ বছর ধরে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও নির্যাতনের যে নজির দেখা গেছে, তা আমাদের সমাজের বিচার ব্যবস্থা ও আইনের শাসনের গুরুতর অভাবকে প্রতিফলিত করে। এই পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান জরুরি ছিল এবং নতুন বাংলাদেশে আইন ও মানবাধিকারের শাসন প্রতিষ্ঠা আমাদের প্রধান লক্ষ্য। আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এবং বাংলাদেশের ছাত্র-জনতার প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি যে, এসব বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, নির্যাতন এবং মব জাস্টিসের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ এবং সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলা উচিত।

তদন্ত কমিটি গঠন
পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে হল প্রশাসন। সাত সদস্যের কমিটিকে আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ছয়টার মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

আজ সকালে ফজুলল হক হলের আবাসিক শিক্ষক আলমগীর কবিরকে আহ্বায়ক করে এই কমিটি গঠন করেন হল প্রাধ্যক্ষ শাহ্ মো. মাসুম।

কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন-আবাসিক শিক্ষক মোহাম্মদ শফিউল আলম খান, শেখ জহির রায়হান, মো. মাহাবুব আলম, আছিব আহমেদ, সহকারী আবাসিক শিক্ষক এম এম তৌহিদুল ইসলাম ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর (বিজ্ঞান অনুষদ) এ কে এম নূর আলম সিদ্দিকী।

আরও পড়ুন: সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাসায় মিললো মদ ও ফেনসিডিলের বোতল

মন্তব্য করুন
Rajnitisangbad Youtube


আরও খবর