রাজনীতি সংবাদ প্রতিবেদক, ঢাকা প্রকাশের সময় :১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১১:৩১ : অপরাহ্ণ
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের এক মাসের কার্যক্রম আশানুরূপ নয় বলে মনে করছে জাতীয় নাগরিক কমিটি। ড. মুহাম্মদ ইউনূস সরকারের তৎপরতাকে ‘মন্থর এবং ধীরগতির’ আখ্যা দিয়ে কমিটির নেতারা বলেছেন, সংবিধান পুনর্লিখন করতে হবে। সংস্কার দ্রুত সম্পন্ন করতে হবে।
আজ শনিবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেছেন জাতীয় কমিটির নেতারা।
তারা জেলা-উপজেলায় নাগরিক কমিটি গঠনের ঘোষণা দিয়েছেন।
অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের নিয়ে গত ৮ সেপ্টেম্বর গঠিত হয় ৫৫ সদস্যের নাগরিক কমিটি।
সংবাদ সম্মেলনে তাদের চার পৃষ্ঠার লিখিত বক্তব্যে মন্দির, মাজারে হামলা, উন্মত্ত জনতার আইন হাতে তুলে নেওয়া, অভ্যুত্থানের শহীদদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরি এবং আহতদের সুচিকিৎসা নিশ্চিতে সরকারের নিষ্ক্রিয়তায় হতাশা প্রকাশ করা হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ঠিকমতো কাজ করছে না জানিয়ে এজন্য সরকারের কাছে জবাব চাওয়া হয়েছে।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, নাগরিক কমিটি রাজনৈতিক দল নয়, তবে তাদের উদ্যোগ রাজনৈতিক। জুলাইয়ে গণঅভ্যুত্থানে হাজারের কাছাকাছি ছাত্র-জনতা শহীদ হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৩০ হাজারের বেশি। তাদের আত্মত্যাগ যেন বৃথা না যায়, সে জন্য জাতীয় নাগরিক কমিটির আত্মপ্রকাশ।
সরকারের কাজে সন্তুষ্ট কিনা-প্রশ্নে জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, ‘এক মাস পর্যালোচনা করলে, আশানুরূপ এখনও দেখতে পাচ্ছি না। শহীদ এবং আহতদের তালিকা এখনও না হওয়া হতাশার।’
অন্তর্বর্তী সরকারকে কতদিন সময় দেওয়া হবে-জানতে চাইলে জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক বলেন, ‘শুধু সহায়তা নয় সরকারের কাজের পর্যালোচনাও করতে হবে সবাইকে। সংস্কার দ্রুত হোক। সংস্কারের জন্য ছয়টি কমিশন হয়েছে, তারা কাজ শুরু করলে না হয় বলতে পারব ছয় মাস, এক বছর, দুই বছর, আড়াই বছর বা তিন বছর সময় দেবে। এই সরকার তত্ত্বাবধায়ক নয় যে নির্বাচন দিয়ে চলে যাবে। শহীদদের আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে হবে।’
সংবিধান পুনর্গঠন নাকি সংশোধন করা হবে-এই প্রশ্নের জবাবে নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, ‘বর্তমান সংবিধান একদলীয় সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়নের। এতে গণমানুষের অভিপ্রায় নেই। সংবিধান পুনর্গঠন নাকি সংশোধন করা উচিত, তা নির্ধারণে গণআলোচনার আয়োজন করা হবে। জনগণের অভিপ্রায়ে সংবিধান লেখা হবে।’
জেলা, উপজেলা ও পাড়া-মহল্লাতেও নাগরিক কমিটি হবে জানিয়ে জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক বলেন, ‘সার্চ কমিটি করা হয়েছে। নারী ও সংখ্যালঘুদের প্রতিনিধিত্ব থাকবে। প্রাসঙ্গিক আলোচনা হলো, সংবিধান নতুন করে লিখব। যে জনরায় আসবে, তা নিয়ে নতুন করে লিখব। সংসদ, গণপরিষদ নাকি গণভোটের মাধ্যমে নতুন সংবিধান হবে, তা ঠিক হবে গণআলোচনায়।’
নাগরিক কমিটি গঠনের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলন, ‘ছাত্ররা ঐক্যবদ্ধ আছে। জনতাকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। বিএনপি বলছে, তাদের ২০০ নেতাকর্মী শহীদ হয়েছে, জামায়াত বলছে, তাদেরও ২০০ জন শহীদ হয়েছে। তাহলে সাধারণ যে নাগরিক শহীদ হয়েছে, তাদের কী হবে! নাগরিকদের এক প্ল্যাটফর্মে ঐক্যবদ্ধ করার লক্ষ্যে জাতীয় নাগরিক কমিটি গঠন করা হয়েছে।’
জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখপাত্র সামান্তা শারমিন বলেন, ‘ফ্যাসিস্ট পতনের এক মাসের বেশি হয়েছে। এখনও শহীদদের তালিকা সম্পূর্ণ হয়নি। এ বিলম্ব গ্রহণযোগ্য নয়। আহত অনেকে সুচিকিৎসা পাচ্ছেন না বলে পত্রপত্রিকায় খবর আসছে। সরকারের অবিলম্বে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। সব শহীদ ও আহতদের নামের তালিকা দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রকাশ করতে হবে।’
মন্দির-মাজার হামলার বিষয়ে জাতীয় নাগরিক কমিটির এই মুখপাত্র বলেন, ‘অনেক দিন ধরেই এসব ঘটনা ঘটলেও সরকারের নিষ্ক্রিয়তা অবাক করেছে। নিরাপত্তা দেওয়ার কথা বলা হলেও সরকার যথাযথ ভূমিকা নিতে পারেনি। এসব ঘটনায় মানুষ সরকারের কাছ থেকে যে প্রতিক্রিয়া আশা করেছিল, তা পূরণ হয়নি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কেন কাজ করছে না, এর জবাব সরকারের কাছ থেকে পাওয়া যায়নি। যে কোনো ইস্যুতে সরকার খুবই মন্থর। আশা করি, সরকার দ্রুত এসব রুখে দিতে ব্যবস্থা নেবে। না হলে তা সরকার এবং দেশ উভয়ের জন্য ক্ষতির কারণ হবে।’
সামান্তা শারমিন বলেন, ‘ছাত্র-জনতার আত্মত্যাগই বাংলাদেশের সামনে এগিয়ে যাওয়ার নতুন সুযোগ এনে দিয়েছে। আগামীতে যাতে কোনো সরকারপ্রধানকে শেখ হাসিনার মতো পালিয়ে যেতে না হয়। বিভিন্ন রাজনৈতিক, প্রশাসনিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের ব্যানারে ফ্যাসিবাদী শক্তির পুনর্বাসন প্রক্রিয়া চলছে। এ বিষয়ে আমরা সজাগ আছি।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মূল নেতারা ছিলেন গত অক্টোবরে গঠিত গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তির প্রতিষ্ঠাতা। সরকারের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম ছাত্রশক্তির সদস্য সচিব এবং আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক। ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি বন্ধের দাবিতে অনড় রয়েছেন শিক্ষার্থীরা। এ পরিস্থিতিতে ছাত্রশক্তির সব কমিটি এবং কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক এবং নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন।
তিনি সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীরা ছাত্র রাজনীতি চায় না। তাই ভবিষ্যতে কী হবে তা পরবর্তী সময়ে জানানো হবে। তবে আমরা চাই, শিক্ষার্থীদের একটা অংশ ছাত্র রাজনীতিতে সক্রিয় থাকবে। কারণ, তারাই ভবিষ্যতে দেশ গঠনে ভূমিকা রাখবে।’ তবে তিনি লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র রাজনীতি চান না।’
আরও পড়ুন: রাষ্ট্র সংস্কারে ৬ বিশিষ্ট নাগরিককে নিয়ে কমিশন গঠন