রাজনীতি সংবাদ প্রতিবেদক, ঢাকা প্রকাশের সময় :১১ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ৩:২১ : অপরাহ্ণ
দেশের ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সভাপতি মাহবুবুল আলম পদত্যাগ করায় সংগঠনটির পরিচালনা পর্ষদ বাতিল করে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
আজ বুধবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের সদস্য ও অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিব মো. হাফিজুর রহমানকে প্রশাসক নিয়োগ দিয়েছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পরিচালক বাণিজ্য সংগঠনের (ডিটিও) মহাপরিচালক ড. নাজনীন কাউসার চৌধুরী সই করা এক আদেশে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
আদেশে নবনিযুক্ত প্রশাসককে ১২০ দিনের মধ্যে এফবিসিসিআই বোর্ডের সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করে নির্বাচিত কমিটির কাছে নেতৃত্ব হস্তান্তর করতে বলা হয়েছে।
সিঙ্গাপুরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এফবিসিসিআইয়ের সদ্য বিদায়ী সভাপতি মাহবুবুল আলম গত ৯ আগস্ট ই-মেইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডিটিও মহাপরিচালক বরাবর পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন। তিনি স্বাস্থ্যগত কারণে পদত্যাগ করেছেন বলে উল্লেখ করেছেন।
তার পদত্যাগের পর এফবিসিসিআইয়ের সিনিয়র সহসভাপতি মো. আমিন হেলালী ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে নিজেকে দাবি করেন। যদিও আমিন হেলালীর এই দাবির পেছনে পর্ষদ পুনর্গঠনসংক্রান্ত তথ্যপ্রমাণ দেওয়া হয়নি। সেই সঙ্গে এ–সংক্রান্ত যে পত্র বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়, তা তারিখের দিক থেকে ত্রুটিপূর্ণ ছিল।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় মনে করছে, নির্বাচিত পরিচালকদের সঙ্গে এফবিসিসিআইয়ের বর্তমান পর্ষদের সমন্বয়হীনতার কারণে বাণিজ্য সংগঠন আইন-২০২২–এর ১৭ (১) ধারা অনুযায়ী ‘ব্যবসা, শিল্প, বাণিজ্য, সেবা খাতের স্বার্থে’ সংগঠনটি সার্বিকভাবে পরিচালিত হচ্ছে না। সে কারণে বাণিজ্য সংগঠন আইন-২০২২–এর ১৭ (১) ধারা অনুযায়ী বর্তমান পর্ষদ ভেঙে দেওয়া আবশ্যক। সংগঠনের সব কার্যক্রমের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে সংশ্লিষ্ট আইন, সংগঠনের সংঘস্মারক ও সংঘবিধি অনুযায়ী এফবিসিসিআই পরিচালিত হওয়া আবশ্যক বলে মনে করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এই বাস্তবতায় সরকার এফবিসিসিআইয়ে প্রশাসক নিয়োগ দিয়েছে।
গত ৫ আগস্ট দেশে ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর এফবিসিসিআই ঘিরে ব্যবসায়ীদের ক্ষোভ প্রকাশ্যে আসে।
এফবিসিসিআইয়ের বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ বাতিল করে প্রশাসক নিয়োগ করার দাবি জানিয়ে গত ১৮ আগস্ট অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদকে চিঠি দেন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সহসভাপতি আবুল কাসেম হায়দারসহ বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী।
ওই চিঠিতে বলা হয়, গত ১৫ বছরে এফবিসিসিআইয়ের কার্যক্রম ব্যবসা, শিল্প-বাণিজ্য ও সেবা খাতের স্বার্থে পরিচালিত হয়নি। বরং অনির্বাচিত, একদলীয় স্বৈরাচারী সরকারের তোষামোদি, ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলসহ রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নে তৎপর ছিল। রাজনৈতিক মদদপুষ্ট কিছু অসাধু, অব্যবসায়ী পর্ষদের নেতৃত্বে এসে এফবিসিসিআই অফিসকে দলীয় কার্যালয়ে পরিণত করেছে। বিভিন্ন বাজার সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মূল্য অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি করে তারা দেশের সাধারণ মানুষের জীবন দুর্বিষহ করে তুলেছিল।
এ ছাড়া গত ৪ সেপ্টেম্বর ও ২১ আগস্ট এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মাহবুবুল আলমসহ পরিচালনা পর্ষদের পদত্যাগের দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি ও মানববন্ধন পালন করেছেন ফেডারেশনের সদস্যদের একাংশ।
এফবিসিসিআইয়ের একাংশের সদস্যদের প্রশাসক নিয়োগের আবেদনের প্রেক্ষিতে গতকাল মঙ্গলবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডিটিও কার্যালয়ে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। শুনানিতে অংশ নিতে এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম বরাবর নোটিশ পাঠানো হয়। এ ছাড়া আবেদনকারী এফবিসিসিআইয়ের একাংশের ৮ জন সদস্যকে নোটিশ দেওয়া হয়।
শুনানিতে এফবিসিসিআইয়ের একাংশের ৮ জন সদস্য অংশ নেন। অপরদিকে এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলমের প্রতিনিধি হিসেবে ৮ জন পরিচালক হাজির হয়েছিলেন। কিন্তু এসব পরিচালকদের নামে নোটিশ ইস্যু না হওয়াতে তাদের অংশগ্রহণ নিয়ে আপত্তি জানায় এফবিসিসিআইয়ের একাংশের সদস্যরা। ফলে এসব পরিচালকদের ছাড়া এফবিসিসিআইয়ের একাংশের সদস্যদের নিয়ে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।
শুনানিতে এফবিসিসিআইয়ের একাংশের সদস্যরা ডিটিও মহাপরিচালককে বলেন, এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম ইতিমধ্যে পদত্যাগ করেছেন। পরিচালনা পর্ষদের বাকি ৭৯ জন পরিচালক এফবিসিসিআইয়ের কার্যালয়ে আসছেন না। এতে এফবিসিসিআইয়ের কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে এর প্রভাব পড়েছে। ব্যবসায়ীরা নানা প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হচ্ছেন। এ অবস্থায় এফবিসিসিআইয়ের বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ বাতিল করে একজন প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হোক।
উল্লেখ্য, গত বছরের ২ আগস্ট ২০২৩-২০২৫ মেয়াদের পরিচালনা পর্ষদে সম্মিলিত ঐক্য পরিষদের একক প্রার্থী হিসেবে এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি নির্বাচিত হন মাহবুবুল আলম।
আরও পড়ুন: পদত্যাগ করেছেন এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম