বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে রাজধানীর দুই স্থানে দুই ব্যবসায়ীকে গুলি করে হত্যার অভিযোগে করা মামলায় গ্রেপ্তার পুলিশের সাবেক আইজি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন ও এ কে এম শহীদুল হককে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিয়েছেন আদালত।
রাজধানীর মোহাম্মদপুরের মুদিদোকানি আবু সায়েদ হত্যা মামলায় চৌধুরী আবদুল্লাহ আল–মামুনের ৮ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়। অন্যদিকে রাজধানীর নিউমার্কেটের ব্যবসায়ী আবদুল ওয়াদুদ হত্যা মামলায় শহীদুল হকের ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়।
শুনানি শেষে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত আজ বুধবার সকাল সাড়ে সাতটার দিকে এসব আদেশ দেন।
এর আগে আজ ভোর ৬টা ৪৫ মিনিটে দুই আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়। এ সময় মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তাদের ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। অপরদিকে দুই আসামির আইনজীবী রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন নাকচ করে তাদের জামিন চান।
গতকাল মঙ্গলবার মধ্যরাতে রাজধানীর উত্তরা ১৬ নম্বর সেক্টর থেকে পুলিশের সাবেক আইজি শহীদুল হককে আটক করা হয়। অন্যদিকে চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন সেনা হেফাজতে ছিলেন। তার বিরুদ্ধে মামলা হওয়ায় তিনি সেনা হেফাজতে থাকা অবস্থায় আত্মসমর্পণের ইচ্ছা প্রকাশ করেন। রাতে তাকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়।
আবু সায়েদ হত্যা মামলার প্রধান আসামি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ মামলায় চৌধুরী আবদুল্লাহ আল–মামুনকে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদনে বলা হয়, শেখ হাসিনা শক্ত হাতে ছাত্র–জনতার আন্দোলন দমন করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। মামলার আরেক আসামি ওবায়দুল কাদের গণমাধ্যমে আন্দোলন দমনের নির্দেশ দেন। মামলার ৩ নম্বর আসামি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল–মামুনসহ অন্যরা ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে অধীনস্থ পুলিশ সদস্যদের নির্দেশ দিয়েছিলেন। মামলার ৫ নম্বর আসামি সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান পুলিশকে ছাত্র-জনতার মিছিলে গুলি করার নির্দেশ দেন। সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রী ও পুলিশ কর্মকর্তার নির্দেশে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।
অপরদিকে শহীদুল হকের রিমান্ডের আবেদনে বলা হয়, নিউমার্কেটের ব্যবসায়ী আবদুল ওয়াদুদ হত্যা মামলায় তার জড়িত থাকার তথ্য পাওয়া গেছে। এই হত্যার রহস্য উদঘাটনে তাকে রিমান্ডে নেওয়া প্রয়োজন।
এ সময় আদালতে সাবেক আইজিপি শহীদুল হক নিজেকে নির্দোষ দাবি করে বলেন, ‘আমি পুলিশ প্রধান থাকতে কোনো মিথ্যা মামলা দিয়ে কাউকে হয়রানি করিনি। পুলিশকে জনগণের কাছে নিয়ে গেছি। আমি যতদিন চাকরি করেছি মানুষের সেবা করেছি। আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে তার কোনোটাই সত্য নয়। আমি সম্পূর্ণ নির্দোষ।’
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। এই সরকারে আইজিপির দায়িত্বে ছিলেন চৌধুরী আবদুল্লাহ আল–মামুন। সরকার পতনের পরদিন তার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করা হয়। গত দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে সুনামগঞ্জ-১ আসন থেকে চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনের ছোট ভাই চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছিলেন। কিন্তু স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাছে পরাজিত হন। এর আগে তিনি শাল্লা উপজেলার চেয়ারম্যান ছিলেন।
অন্যদিকে শহীদুল হক ২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর আইজিপি হিসেবে নিয়োগ পান। তিনি ২০১৮ সালের ৩১ জানুয়ারি অবসরে যান। শহীদুল হকের বাড়ি শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার নরবালাখানা গ্রামে। তার ছোট ভাই ইসমাইল হক জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও নড়িয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান। আরেক ভাই নুরুল হক ব্যাপারী নড়িয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য।
আরও পড়ুন: পুলিশের সাবেক আইজি শহীদুল হক ও আবদুল্লাহ মামুন আটক
