রাজনীতি সংবাদ প্রতিবেদক, ঢাকা প্রকাশের সময় :২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১:১৫ : পূর্বাহ্ণ
হত্যা-গণহত্যার অভিযোগে পালিয়ে বেড়ানো আওয়ামী লীগের নেতাদের মধ্যে এবার আটক হলেন ঢাকা-৭ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতা হাজী মো. সেলিম।
রোববার রাত ১২টার দিকে ডিবি পুলিশ তাকে আটক করে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে ঢাকা মেট্টোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের যুগ্ম কমিশনার (উত্তর) রবিউল হোসেন ভুঁইয়া বলেন, ডিবি পুলিশের একটি দল সাবেক সংসদ সদস্য হাজী সেলিমকে আটক করেছে। তার বিরুদ্ধে হত্যাসহ একাধিক মামলা রয়েছে।
ডিবি সূত্রে জানা গেছে, আজ সোমবার কোনো এক মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাকে আদালতে সোপর্দ করা হবে।
গত ১৬ জুলাই কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় রাজধানীর সায়েন্সল্যাব মোড়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে পড়েছিলেন হাজী সেলিম। আন্দোলনকারীদের ধাওয়ায় তিনি পালিয়ে ল্যাবএইড হাসপাতালের ভেতরে ঢুকে পড়েছিলেন।
হাজী সেলিম বরাবরই নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে আলোচিত-সমালোচিত। ২০১৯ সালে ঢাকা নদীবন্দর এলাকায় বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) অভিযান চালায়। অভিযানে সামনে আসে ঢাকা-৭ আসনের এই এমপির অনেক অবৈধ স্থাপনা। যা নদীর জায়গা দখল করে গড়া হয়েছিল।
২০২০ সালের হাজী সেলিমের ছেলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ইরফান সেলিম গ্রেপ্তার হন। এক নৌ কর্মকর্তাকে মারধরের পর তার বাসায় অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করা হয় হাজী সেলিম পুত্র ইরফানকে। এরপর আলোচনায় আসে হাজী সেলিমের অবৈধ সম্পদ ও দখলের নানা প্রসঙ্গ।
স্থানীয়দের কেউ তার দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস পান না। ফলে সরকারি-বেসরকারি বা কারও ব্যক্তিগত জমি পছন্দ হলেই তাতে নিজের বা নিজের স্ত্রীর নামে সাইনবোর্ড সেঁটে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে হাজী সেলিমের বিরুদ্ধে।
জানা গেছে, পুরান ঢাকা, কামরাঙ্গীর চর, কেরানীগঞ্জসহ ঢাকার বাইরেও ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে হাজী সেলিমের সম্পদ। আর এই সম্পদের একটি বড় অংশ দখল করা।
উল্লেখ্য, ২০০৭ সালের ২৪ অক্টোবর সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে জরুরি অবস্থার মধ্যে হাজী সেলিমের বিরুদ্ধে লালবাগ থানায় অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
এ মামলায় ২০০৮ সালের ২৭ এপ্রিল হাজী সেলিমকে ১০ বছরের কারাদণ্ড এবং ১০ লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ১ বছর কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এছাড়া তাকে সম্পদের তথ্য গোপনের দায়ে তিন বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
ওই রায়ের বিরুদ্ধে তিনি হাইকোর্টে আপিল করেন। ২০২১ সালের ৯ মার্চ আপিলের রায়ে হাইকোর্ট বেঞ্চ বিচারিক আদালতের দেয়া ১৩ বছর সাজা কমিয়ে ১০ বছর কারাদণ্ড বহাল রাখেন।
উল্লেখ্য, ১৯৯৬ সালে ঢাকা-৮ আসন (তৎকালীন) থেকে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন হাজী সেলিম। ২০০১ সালের নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলেও বিএনপি প্রার্থী নাসির উদ্দিন আহমেদ পিন্টুর কাছে পরাজিত হন। ২০১৪ সালের নির্বাচনে ঢাকা-৭ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয় না পাওয়ায় তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন। সে নির্বাচনে তিনি নৌকার প্রার্থী মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিনকে পরাজিত করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০১৮ সালের নির্বাচনে হাজী সেলিম আবার নৌকার মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচিত হন। তবে ২০২৪ সালের জানুয়ারির নির্বাচনে তিনি মনোনয়ন পাননি। তার স্থলে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন ছেলে সোলায়মান সেলিম।
আরও পড়ুন: ডিবি প্রধান হলেন রেজাউল করিম মল্লিক