রাজনীতি সংবাদ প্রতিবেদক, ঢাকা প্রকাশের সময় :২৮ আগস্ট, ২০২৪ ১১:২৭ : অপরাহ্ণ
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, এস আলম ইতিহাসের প্রথম ব্যক্তি, যিনি সুপরিকল্পিতভাবে ব্যাংক ডাকাতি করেছেন। এমন সুপরিকল্পিতভাবে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে পৃথিবীতে কেউ ব্যাংক ডাকাতি করেছে কিনা, তা জানা নেই। এটা এমন এক মডেল, যা সব সময় এড়িয়ে যেতে হবে।
বিতর্কিত ব্যবসায়ী গোষ্ঠী এস আলম গ্রুপের সম্পদ বিক্রি করে আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দেওয়া হবে। এজন্য এস আলমের সম্পদ এ মুহূর্তে কাউকে না কেনার আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর।
আজ বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংকে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। এ সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
ব্যাংকে বন্ধক নেই, এমন সম্পত্তি বিক্রির চেষ্টা করছে এস আলম গ্রুপ এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের পদক্ষেপ সম্পর্কে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে গভর্নর বলেন, ‘এটা আইনগত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে করতে হবে। আমরা সরকারকে পদক্ষেপ নিতে বলব। এই গ্রুপের সম্পদ যেন কেউ না কেনে। এ সম্পদ বিক্রি করে আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দেওয়া হবে।’
আহসান এইচ মনসুর আরও বলেন, এখন পর্যন্ত ৬টি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে পুনর্গঠন করা হয়েছে। আরও কয়েকটি করা হবে। এটা হলো প্রাথমিক কাজ। যেন ব্যাংকগুলো ভেঙে না পড়ে। মূল কাজ সামনে আছে। ব্যাংক খাতকে কিভাবে পুরোপরি সংস্কার করা যায় সেটা নিয়ে কাজ হচ্ছে।
ব্যাংক খাত সংস্কার নিয়ে গভর্নর বলেন, ব্যাংকিং কমিশন গঠন করে সেটা করা হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক সেখানে যুক্ত থাকবে। মাসখানেকের মধ্যে এটা করা হবে। বিদেশি বিশেষজ্ঞ নেওয়া হবে। শ্রীলংকা কীভাবে সংস্কার করেছে, সেটাও দেখা হবে।
ইসলামী ব্যাংকের বিষয়ে গভর্নর বলেন, ‘এক সপ্তাহের মধ্যে ইসলামী ব্যাংকের নতুন বোর্ডকে কর্মপরিকল্পনা দিতে বলেছি। এখানে কাজ করতে হবে, বসে থাকার সুযোগ নেই। বাংলাদেশ ব্যাংক সব ধরনের সহায়তা করবে। তারা সহায়ক ভূমিকা পালন না করলে বোর্ড আবার পরিবর্তন করা হবে। সবাইকে নজরদারি করা হচ্ছে। অনিয়ম করলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।’
এস আলম ছাড়া ব্যাংক খাতে আরও মাফিয়া আছে, তাদের বিরুদ্ধে কী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে, জানতে চাইলে গভর্নর বলেন, ‘অন্যদের বিষয়েও খোঁজ নেওয়া হবে। ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।’
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ নিয়ে গভর্নর বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ডলারের দর একটা স্থিতিশীল পর্যায়ে আছে। এমন পর্যায়ে থাকলে আগামী ৬ থেকে ৭ মাসের মধ্যে মূল্যস্ফীতি কমে আসবে; যদিও বন্যা একটু দুশ্চিন্তা তৈরি করছে। তবুও আশাবাদী; দু এক মাস বেশি লাগতে পারে।’ তিনি আরও বলেন, ‘রিজার্ভ থেকে এখন ডলার বিক্রি হচ্ছে না। তাই রিজার্ভ কমার সম্ভবনা নেই। ভবিষ্যতে রিজার্ভ আরও বাড়বে। সরকারের চাহিদা (ডলার) আন্তঃব্যাংক মার্কেট থেকে মেটানো হচ্ছে।’
সাবেক দুই গভর্নরের বিষয়ে জানতে চাইলে আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘এখানে সুশাসনের অভাব ছিল। সামনে যে হবে না, তেমন নয়। তবে আমার হাত দিয়ে হবে না। কেন্দ্রীয় ব্যাংকেরও সংস্কার করতে হবে। কারণ, তারাও দায় এড়াতে পারে না।’
আমানতকারীদের উদ্দেশে আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘গ্রাহকদের বলব, ধৈর্য ধরুন। একবারে সবাই টাকা তুলতে যাবেন না। তাহলে কেউ টাকা দিতে পারবেন না। অনেকে অতিরিক্ত সুদের লোভে এসব ব্যাংকে টাকা রেখেছেন। এখন অধৈর্য হলে হবে না। আমানতের টাকা লোকসান হোক, এটা আমরা চাই না। আমরা টাকা ছাপিয়ে কোনো আমানতের টাকা দেব না। কারণ, সেটা জাতির জন্য ভালো হবে না। তখন মূল্যস্ফীতি ১০০ শতাংশ হয়ে যাবে। যেটুকু টাকা না তুললে নয়, সেটা তোলেন। ৫ থেকে ৬ মাস পর অবস্থার পরিবর্তন হবে।’
গভর্নর আরও বলেন, বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত কোনো আমানতকারী টাকা হারাননি। ব্যাংকে আগে সুশাসন ফেরাতে হবে, যাতে আমানতকারীদের আস্থা ফিরে আসে। এজন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
বিগত সরকারের বিশেষ আনুকূল্যে এস আলম গ্রুপের দখলে ছিল ৭ ব্যাংক। এসব ব্যাংকসহ বিভিন্ন ব্যাংক থেকে নামে-বেনামে অন্তত ২ লাখ কোটি টাকা বের করে তার বেশিরভাগই পাচার করেছে। সরকার বদলের পর ব্যাংকগুলোর পর্ষদ ভেঙে দিচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
মঙ্গলবারও তার নিয়ন্ত্রণে থাকা ইউনিয়ন ও গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের পর্ষদ ভাঙা হয়েছে। এছাড়া তার মামাতো ভাই সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাভেদের পরিবার মুক্ত করা হয়েছে ইউসিবি ব্যাংককে। এর আগে ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ও ন্যাশনাল ব্যাংকের পর্ষদ এস আলম মুক্ত করা হয়। এছাড়া তার শেয়ার বিক্রি ও ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলনে বিধিনিষেধ দেওয়া হয়েছে। আর শতভাগ মার্জিন ছাড়া এলসি না খোলাসহ বিভিন্ন ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: ৬ ব্যাংক থেকে এস আলম গ্রুপ ও সহযোগীদের ঋণ ৯৫ হাজার কোটি টাকা