রাজনীতি সংবাদ প্রতিবেদক, ঢাকা প্রকাশের সময় :২৫ আগস্ট, ২০২৪ ৮:২১ : অপরাহ্ণ
জাতির উদ্দেশে ভাষণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুস বলেছেন, ‘দেশের সংকটকালে ছাত্রদের আহ্বানে আমরা সরকারের দায়িত্ব গ্রহণ করেছি। কখন নির্বাচন হবে সেটা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত, আমাদের সিদ্ধান্ত নয়। দেশবাসীকে ঠিক করতে হবে আপনারা কখন আমাদের ছেড়ে দেবেন।’
আজ রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি এ কথা বলেন।
ড. ইউনূস বলেন, ‘বর্তমান সরকারের দায়িত্ব গ্রহণ করার মাত্র দুই সপ্তাহ শেষ হলো। কর্ম যাত্রার প্রথম পর্যায়ে রাষ্ট্র সংস্কারের কাজে আপনাদের কাছ থেকে যে সমর্থন পাচ্ছি সেজন্য আন্তরিক ধন্যবাদ। আমরা অনুধাবন করছি যে, আমাদের কাছে আপনাদের প্রত্যাশা অনেক। এ প্রত্যাশা পূরণে আমরা বদ্ধপরিকর।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘দীর্ঘদিনের গণতন্ত্রহীনতা, ১৫ বছরের ফ্যাসিবাদী শাসন ব্যবস্থা প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই আমাদের জন্য পর্বতসম চ্যালেঞ্জ রেখে গিয়েছে। কিন্তু এই চ্যালেঞ্জ গ্রহণে আমরা প্রস্তুত। আজ আমি সরকারের পক্ষ থেকে আপনাদের দোয়া ও সহযোগিতা কামনা করতে আপনাদের সামনে এসেছি। শুধু আমি বলবো, দেশবাসীকে একটু ধৈর্য ধরতে হবে।’
ড. ইউনূস বলেন, ‘আমি বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত এবং দাতা সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেছি। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর দেশ গঠনের জন্য সকল প্রকার আর্থিক ও অন্যান্য সহযাগিতার জন্য তাদের অনুরোধ জানাচ্ছি। তারা এ ব্যাপারে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। তাদের কাছে আমাদের প্রস্তাবসমূহ প্রণয়ন করে দ্রুত পাঠানোর ব্যবস্থা নিয়েছি। তাদেরও অনুরোধ জানিয়েছি তারা যেন পরিস্থিতির কারণে অতি দ্রুত অর্থ ছাড় করার ব্যবস্থা নেন।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘একটা বিষয়ে সবাই জানতে আগ্রহী, কখন আমাদের সরকার বিদায় নেবে। এটার জবাব আপনাদের হাতে, কখন আপনারা আমাদেরকে বিদায় দেবেন। আমরা কেউ দেশ শাসনের মানুষ নই। আমাদের নিজ নিজ পেশায় আমরা আনন্দ পাই। আমাদের উপদেষ্টামণ্ডলীও এই লক্ষ্যে উদ্বুদ্ধ হয়ে সবাই মিলে একটা টিম হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে।’
ড. ইউনূস বলেন, ‘আমরা ছাত্রদের আহ্বানে এসেছি। তারা আমাদের প্রাথমিক নিয়োগকর্তা। দেশের আপামর জনসাধারণ আমাদের নিয়োগ সমর্থন করেছে। আমরা ক্রমাগতভাবে সবাইকে বিষয়টি স্মরণ করিয়ে যাবো যাতে হঠাৎ করে এই প্রশ্ন উত্থাপিত না হয়-আমরা কখন যাবো ? তারা যখন বলবে আমরা চলে যাবো।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা সংস্কারের অংশ হিসেবে নির্বাচন কমিশনকেও সংস্কার করবো। কমিশনকে যে কোনো সময় আদর্শ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত রাখবো।’
দেশবাসীর উদ্দেশে ড. ইউনূস বলেন, ‘একটা বিশেষ ব্যাপারে আমরা আপনাদের সহযোগিতা চাচ্ছি। আমাদের দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে প্রতিদিন সচিবালয়ে, আমার অফিসের আশপাশে, শহরের বিভিন্ন স্থানে সমাবেশ করা হচ্ছে। গত ১৬ বছরের অনেক দুঃখ-কষ্ট আপনাদের জমা আছে। সেটা আমরা বুঝি। আমাদের যদি কাজ করতে না দেন তাহলে এই দুঃখ ঘোচানোর সব পথ বন্ধ হয়ে থাকবে।’
দেশবাসীকে অনুরোধ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আপনাদের কাছে অনুরোধ, আমাদের কাজ করতে দিন। আপনাদের যা চাওয়া তা লিখিতভাবে আমাদের দিয়ে যান। আমরা আপনাদের বিপক্ষ দল নই। আইনসংগতভাবে যা কিছু করার আছে আমরা অবশ্যই তা করবো।’
ড. ইউনূস বলেন, ‘ফ্যাসিবাদী সরকারের বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম, খুন, অপহরণ এবং আয়নাঘরের মতো চরম ঘৃণ্য সব অপকর্মের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা হবে। বাংলাদেশকে আর কোনো দিন কেউ যেন কোনো পুলিশি রাষ্ট্রে পরিণত না করতে পারে তার ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিচার বিভাগকে দুর্নীতি ও দলীয় প্রভাবমুক্ত করতে কার্যক্রম শুরু হয়েছে। একটি সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’
আরও পড়ুন: ভারতে থাকার মেয়াদ ফুরিয়ে আসছে শেখ হাসিনার