শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ | ৫ আশ্বিন, ১৪৩১ | ১৬ রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

মূলপাতা জাতীয়

শেখ হাসিনাকে ডুবিয়েছে ‘গ্যাং অব ফোর’


রাজনীতি সংবাদ ডেস্ক প্রকাশের সময় :২২ আগস্ট, ২০২৪ ১০:৩২ : অপরাহ্ণ
শেখ হাসিনা
Rajnitisangbad Facebook Page

শেখ হাসিনার পতন নিয়ে নানা বিশ্লেষণ করছেন দলটির শীর্ষ নেতারা। ‘গ্যাং অব ফোর’ নামে দলের অভ্যন্তরীণ একটি স্বার্থগোষ্ঠী শেখ হাসিনাকে ডুবিয়েছে বলে মনে করছেন এক আওয়ামী লীগ নেতা।

ছাত্র-জনতার তীব্র আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। তার এমন আকস্মিক পদত্যাগ ও পালানোর ঘটনায় হতভম্ব হয়ে পড়েন তৎকালীন অনেক মন্ত্রী, এমপি ও দলের নেতাকর্মীরা। দলীয় ও সরকারপ্রধানের দেশত্যাগের পর পালিয়ে থাকা আওয়ামী লীগের মন্ত্রী, এমপি ও নেতারা এবার মুখ খুলতে শুরু করেছেন।

এমন কয়েকজন উচ্চপর্যায়ের নেতার সঙ্গে কথা বলেছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।

আওয়ামী লীগ সরকারের পতন নিয়ে নানা ব্যাখ্যা দিয়েছেন তারা। তাদের বর্ণনায় সবচেয়ে গুরুত্বের সঙ্গে উঠে এসেছে ‘গ্যাং অব ফোর’ নামে একটি অভ্যন্তরীণ স্বার্থগোষ্ঠীর কথা।

আওয়ামী লীগের এক নেতা সরকারের পতনের জন্য দলের অভ্যন্তরীণ একটি স্বার্থগোষ্ঠীকে দায়ী করে বলেছেন, তিনি (হাসিনা) আমাদের কথা শুনতেন না, তিনি শুনতেন ‘গ্যাং অব ফোরে’র কথা। তারা তাকে বাস্তবতা বুঝতে দিতো না বলে অভিযোগ করেন।

‘গ্যাং অব ফোর’ কারা-এমন প্রশ্ন করলে ওই নেতা বলেন, শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ-বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।

আওয়ামী লীগের ওই নেতা আরও বলেন, চারজনের এই দল তার (হাসিনা) পতনে নেতৃত্ব দিয়েছে। এই ব্যক্তিদের ওপর তার ছিল অন্ধবিশ্বাস। তার যে সহজাত রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ছিল, তা তিনি তাদের কারণে হারিয়ে ফেলেছিলেন।

দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস দাবি করেছে, গত এক সপ্তাহে তারা আত্মগোপনে থাকা আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলতে পেরেছে। সেসব বেশিরভাগ নেতারাই নাকি বলেছে, শেখ হাসিনা দল ও জনগণকে পরিত্যাগ করেছেন।

আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে, শেখ হাসিনার দেশ ছাড়ার সিদ্ধান্ত তার মন্ত্রিসভার সদস্য, এমনকি ঘনিষ্ঠ সহযোগীরাও জানতেন না। টেলিভিশনে খবর দেখে জানতে পারার কথা জানিয়েছেন এক নেতা।

শেখ হাসিনা অকস্মাৎ দেশ ছেড়ে পালিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের জীবন বিপদের মধ্যে ফেলেছে বলে ক্ষোভ জানিয়েছেন কেউ কেউ। আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা চলে যাওয়ার পর আমরা শুধু একটা সময়ই বাড়ি থেকে বের হওয়ার সুযোগ পাই। সেটি সেনাপ্রধান যখন বেলা তিনটার দিকে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন। কারণ, ওই সময় মানুষ তা শুনতে টেলিভিশনের পর্দায় নজর রাখছিলেন।

 

আরেক নেতা ও মন্ত্রী বলেন, আমি ও আমার পরিবারের সদস্যরা ধরা পড়লে লোকজন আমাদের জীবন্ত পুড়িয়ে মারতেন।

এ বছরের জানুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে বিএনপিকে না আনা ছিল শেখ হাসিনার একটি ‘বড় ভুল’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন অনেকে। একটি সূত্র জানিয়েছে, আওয়ামী লীগের কিছু নেতা মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে তারেক রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছিলেন। একটি চ্যানেলের মাধ্যমে প্রস্তাবও দেওয়া হয় বিএনপিকে নির্বাচনে আনার। কিন্তু শেখ হাসিনা ওই প্রস্তাবে সবুজসংকেত দেননি। এটি ছিল ‘সাংঘাতিক ভুল’। কেননা, একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে বিএনপি নির্বাচনে আসার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। বিএনপিকে নির্বাচনে আনা গেলে বিরোধীদের রাগ–ক্ষোভ হয়তো মিটে যেতো।

আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, নির্যাতন, পুলিশের নিষ্ঠুরতায় জনগণের মধ্যে যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে, তা আমরা বুঝছিলাম। বিএনপিকে নির্বাচনে আনা গেলে সেই ক্ষোভ হয়তো থামানোও যেত। তাতে আমরাই আবার জিততে পারতাম এবং দল ক্ষমতায় থাকতো।

আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মনে করেন, গত জানুয়ারির নির্বাচনে জেতার পর শেখ হাসিনা আরও একগুঁয়ে হয়ে ওঠেন। কারও কোনো পরামর্শ শোনেননি। অতি আত্মবিশ্বাসের কারণে কোটা সংস্কার আন্দোলনে সৃষ্ট ক্ষোভের মাত্রা বুঝতে ব্যর্থ হন তিনি।

সূত্রগুলো বলেছে, কৌশলে কিছু নেতা শেখ হাসিনাকে জুলাইয়ের শুরুতে ছাত্র বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসার আহ্বান জানান। তবে তা প্রত্যাখ্যান করেন তিনি।

হাসিনা সরকারের কফিনে শেষ পেরেকটি বসে তখন, যখন একই মাসে পুলিশের গোয়েন্দা শাখার সদস্যরা ছাত্রনেতাদের তুলে নিয়ে যান এবং ভয়ভীতি দেখিয়ে আন্দোলন কর্মসূচি প্রত্যাহারে জোরপূর্বক প্রতিশ্রুতি আদায় করে ছেড়ে দেন।

এ কৌশল হিতে বিপরীত হয়ে দাঁড়ায়। কর্মসূচি প্রত্যাহারে কীভাবে জোরপূর্বক প্রতিশ্রুতি আদায় করা হয়েছে, ছাত্রনেতারা সেই বিষয় জনসমক্ষে প্রকাশ করে দেন। এটি পরপর কিছু ঘটনার সূত্রপাত ঘটায় এবং শেখ হাসিনা দেশ ছাড়তে বাধ্য হন।

শেখ হাসিনার দেশত্যাগের সঙ্গে সঙ্গে তার দলের সিনিয়র নেতারা আত্মগোপন করেছেন, কেউবা গ্রেপ্তার হয়েছেন। নেতারা বলছেন, ৫০ বছরের পুরনো যে দল টানা ১৫ বছরের বেশি দেশ শাসন করেছে, তারাই এখন অস্তিত্ব সংকটে।

আরও পড়ুন:

শেখ মুজিবকে নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর

ব্যবসায়ীর সুন্দরী স্ত্রীকে যেভাবে বাগিয়ে নেন সালমান এফ রহমান

মন্তব্য করুন
Rajnitisangbad Youtube


আরও খবর