রাজনীতি সংবাদ ডেস্ক
প্রকাশের সময় : ২২ আগস্ট ২০২৪, ২:০৮ অপরাহ্ণ
আব্দুর রহমান বদি, কক্সবাজার-৪ আসনের আওয়ামী লীগের বিতর্কিত ও সমালোচিত সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি)। যাকে বাংলাদেশের ইয়াবার ‘গডফাদার’ বলা হয়। কিন্তু কেন?
মিয়ানমার, লাউস ও থাইল্যান্ত সীমান্তে অবস্থিত এলাকাকে মাদকের গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গল বলা হয়। কারণ দক্ষিণ এশিয়ায় ইয়াবা, আইসসহ অন্যান্য মাদক উৎপাদনের সবচেয়ে বড় হাব এই অঞ্চল। সেখানে সারা পৃথিবীর মাদকের বড় বড় মাফিয়ারা বিনিয়োগ ও বাণিজ্য করেন। মাদকের সেই গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গলের আন্তর্জাতিক চক্রের অন্যতম সদস্য সাবেক এমপি আব্দুর রহমান বদি। যিনি ইয়াবা ও আইসের বাংলাদেশের রুট নিয়ন্ত্রণ করেন। সে কারণে বদিকে বলা হয় মাদকের ‘গডফাদার’।
নানা জল্পনা কল্পনার পর মাদকের গডফাদার বদিকে গত ২০ আগস্ট চট্টগ্রাম নগরীর জিইসি এলাকায় আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় আটক করা হয়। পরদিন তাকে কক্সবাজারে আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। কিন্তু রিমান্ড শুনানি না করে আদালত তাকে কারাগারে প্রেরণ করে।
বদিকে নিয়ে আসার খবরে আদালত চত্বরে হৈ চৈ পড়ে যায়। ক্ষুব্ধ সাধারণ মানুষ তার বিরুদ্ধে নানা আপত্তিকর মন্তব্য করে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খেতে হয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে।
এ বিষয়ে আইনজীবী শহিদুল্লাহ কায়সার জানান, টেকনাফ থানায় দায়ের হওয়া একটি মামলায় বদিকে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। রিমান্ড শুনানির বিষয়ে পরবর্তী দিন ধার্য্য করা হবে। আর ক্ষুব্ধ সাধারণ মানুষের দাবি, বাংলাদেশে ইয়াবা ঢুকিয়ে বদি কয়েকটি প্রজন্মকে ধ্বংস করে দিয়েছে। নিজের সাম্রাজ্য মজবুত করতে পুলিশকে ব্যবহার করে দিনের পর দিন টেকনাফে নিরীহ লোকজনকে হত্যা করেছে। তাই তার দশবার ফাঁসি হলেও কম হবে না।
কিন্তু প্রশ্ন হলো আব্দুর রহমান বদি কিভাবে ‘ইয়াবা গডফাদার’ হলে উঠলেন? কারা তাকে পেছন থেকে শক্তি যুগিয়েছে?
বদির বাবা এজাহার মিয়া বাংলাদেশের অন্যতম চোরাকারবারি ছিলেন। বাবার দেখানো পথে হাটতে গিয়ে প্রবেশ করেন চোরাচালানের অন্ধকার জগতে। যেটি মজবুত হয় ২০০৮ সালে প্রথমবার আওয়ামী লীগের হয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে। ২০০২ সালে বদি প্রথমবার টেকনাফ পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হন। এরপর ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের নৌকার হয়ে প্রথমবার সংসদে যান। সংসদে যাওয়ার পর থেকেই মাদকের জগতে ‘কিং’ হয়ে উঠতে শুরু করেন তিনি। একহাতে নিয়ন্ত্রণ করতে শুরু করেন মাদকসহ মিয়ানমারের সকল চোরাচালান।
২০১৪ সালে আবারও নির্বাচিত হয়ে সংসদে যাওয়ার সুযোগ পান বদি। কিন্তু ২০১৮ সালে সমালোচনার মুখে বদির পরিবর্তে আওয়ামী লীগ তার স্ত্রীকে সংসদে নিয়ে যায়। সর্বশেষ নির্বাচনেও স্ত্রী শাহিনা আক্তার নৌকা প্রতীকে নির্বাচিত হয়েছিলেন।
মূলত ২০০৯ সাল থেকে আওয়ামী লীগের ক্ষমতা ব্যবহার করে উখিয়া-টেকনাফের একক নায়ক হয়ে উঠেন বদি। মাদকের পাশাপাশি টেকনাফ স্থলবন্দরেরও একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ ছিলো তার হাতে।
টেকনাফের প্রাক্তন আলোচিত ওসি প্রদীপ কুমার দাশকে ব্যবহার করে টেকনাফে অসংখ্য নিরীহ মানুষকে ক্রসফায়ারের নামে হত্যা করেছেন বদি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকার পাশাপাশি বদির বিরুদ্ধে দুদক ও সিআইডির পক্ষ তদন্ত পরবর্তী মামলা হলেও ক্ষমতার প্রভাবে সব সময় থেকেছেন অধরা।
মূলত আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের ছত্রছায়ায় মাদকের অপ্রতিরোধ্য গডফাদার হয়ে উঠেন বদি।
বদিকে আটকের মধ্যদিয়ে কি মাদক কমবে?
বদিকে রিমান্ডে নিয়ে গিয়ে মাদকের নেটওয়ার্কের সবাইকে শনাক্ত করে কঠোর শাস্তির আওতায় আনার দাবি সাধারণ মানুষের।
আরও পড়ুন: ব্যবসায়ীর সুন্দরী স্ত্রীকে যেভাবে বাগিয়ে নেন সালমান এফ রহমান