রাজনীতি সংবাদ প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম প্রকাশের সময় :২০ আগস্ট, ২০২৪ ১০:২১ : অপরাহ্ণ
ইয়াবা গডফাদার হিসেবে পরিচিত কক্সবাজার-৪ আসনের বিতর্কিত ও সমালোচিত সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) আব্দুর রহমান বদিকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম নগরীর জিইসি মোড় এলাকার একটি বাসা থেকে তাকে আটক করা হয়।
বদিকে আটকের বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মুনীম ফেরদৌস।
জানা যায়, বদিকে কক্সবাজারের টেকনাফ থানায় দায়ের করা হত্যাচেষ্টার একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। গত ১৮ আগস্ট আবদুল্লাহ নামের এক ব্যক্তি মামলাটি করেন। এতে বদিসহ ৫০-৬০ জনকে আসামি করা হয়েছে। গ্রেপ্তারের পর বদিকে কক্সবাজারে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে জানিয়েছে র্যাব।
এর আগে বিভিন্ন সময় কক্সবাজার-টেকনাফ কেন্দ্রীক ইয়াবা সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ উঠে বদির বিরুদ্ধে। তবে তিনি প্রত্যেকবার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাদক তালিকায় পৃষ্ঠপোষক হিসেবে বদির নাম রয়েছে। তালিকায় গডফাদার হিসেবে আছেন বদির চার ভাইসহ পরিবারের অন্তত ২৬ জনের নাম।
চলতি বছরের ১৭ এপ্রিল আব্দুর রহমান বদির দুই ভাইয়ের ইয়াবা কারবারে সংশ্লিষ্টতা পায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। কক্সবাজারের ১০ মাদক গডফাদারের মামলা তদন্ত করতে গিয়ে তাদের সংশ্লিষ্টতা মিলেছে বলে জানায় সংস্থাটি।
অভিযোগ আছে, বদি তার প্রকাশ্য ব্যবসার আড়ালে ইয়াবা পাচারে জড়িত। আর তার সম্পদের একটি বড় অংশই আসে মিয়ানমার থেকে মাদক এনে। গত কয়েক বছর ধরে বহুবার এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশ হয়েছে গণমাধ্যমে।
মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর এবং বেশ কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও বদিকে মাদকের গডফাদার হিসেবে চিহ্নিত করেছে একাধিকবার।
মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইয়াবার অন্য বড় পাচারকারী বা স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বদির মতের বিরুদ্ধে গিয়ে এই কাজ করতে পারবেন না।
প্রতিবেদন অনুযায়ী বদির ভাই মুজিবুর রহমান ও আবদুল শুক্কুর এবং চাচাতো ভাই মং মং সেনও ইয়াবার গডফাদার।
একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, কক্সবাজারে ইয়াবার ১২০ জন তালিকাভুক্ত ইয়াবার পাচারকারী আছে। এদের মধ্যে বদির নাম আছে সবার আগে।
বদি ১৯৯৬ সালে বিএনপির মনোনয়ন চেয়েছিলেন। পরে ২০০৮ সালে তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান।
ওই বছর মনোনয়নপত্রের সঙ্গে জমা দেওয়া হলফনামায় বদি উল্লেখ করেন, তিনি বাড়ি ও দোকান ভাড়া থেকে বছরে এক লাখ ৭৬ হাজার টাকা, সঞ্চয়পত্র ও শেয়ার থেকে ৯১ হাজার ৯৮ টাকা এবং ৩৩ হাজার ৬০০ টাকা আয় করেন লবণ মাঠ থেকে। অর্থাৎ তার বার্ষিক আয় তিন লাখ টাকার কম ছিল সে সময়। সে সময় তিনি জানান, তার ওপর নির্ভরশীলরা বছরে দুই লাখ ২৫ হাজার টাকা আয় করেন।
তবে ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে বদি জানান, তিনি কৃষি থেকে চার হাজার ৬৫০ টাকা, বাড়ি ও অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া থেকে দুই কোটি আট লাখ, ব্যবসা থেকে পাঁচ কোটি ৩২ লাখ, সঞ্চয়পত্র ও শেয়ার থেকে আট কোটি পাঁচ লাখ এবং লবণের মাঠ থেকে ৯১ হাজার টাকা আয় করেন বছরে।
এই হিসাবে তখন বদির বছরে আয় দাঁড়ায় ১৫ কোটি ৪৬ লাখ টাকা এবং তার ওপর নির্ভরশীলদের আয় দাঁড়ায় তিন কোটি ৪৮ লাখ টাকা।
২০১৮ ও ২০২৪ সালের সংসদ নির্বাচনে অংশ নেননি বদি। তবে তার স্ত্রী শাহীন আক্তার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
গত দুই মেয়াদে এমপি পদে না থাকলেও নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে বারবার সমালোচিত হয়েছেন বদি। স্ত্রীকে সামনে রেখে বদিই মূলত সংসদ সদস্যের প্রভাব খাটিয়ে এলাকায় আধিপত্য বজায় রাখেন বলে অভিযোগ রয়েছে।