বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর, ২০২৪ | ১৩ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৫ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬

মূলপাতা চট্ট-মেট্টো

ব্যবসায়ীদের বিক্ষোভ, চট্টগ্রাম চেম্বারের পরিচালনা পর্ষদের পদত্যাগের দাবি


আজ সকালে চট্টগ্রাম নগরীর আগ্রাবাদ ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের সামনে বিক্ষোভ করেন ব্যবসায়ীরা। ছবি: সংগৃহীত

রাজনীতি সংবাদ প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম প্রকাশের সময় :১৮ আগস্ট, ২০২৪ ১:০৫ : পূর্বাহ্ণ

শতবর্ষী বাণিজ্য সংগঠন চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্সকে ‘স্বৈরশাসন ও পরিবারতন্ত্র’ থেকে মুক্ত করার দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন সাধারণ ব্যবসায়ীরা। তারা চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতিসহ সকল পরিচালকদের পদত্যাগের দাবি জানিয়েছেন।

আজ রোববার সকাল ১০টায় নগরীর আগ্রাবাদের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের সামনে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে তারা এ দাবি জানান।

‘চট্টগ্রামের সকল ব্যবসায়ী সমাজ’ ব্যানারে এ বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করা হয়। এতে শতাধিক ব্যবসায়ী অংশ নেন।

সমাবেশে চেম্বারকে সংস্কারের দাবি জানিয়ে ব্যবসায়ীরা বলেন, পরিবারতন্ত্রের কবলে পড়ে চট্টগ্রাম চেম্বার দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখতে পারেনি। এম এ লতিফের স্বেচ্ছাচারিতার কারণে চট্টগ্রাম চেম্বারে গত ৯ বছর ধরে কোনো ভোট হয়নি। তিনি এই চেম্বারকে তার পারিবারিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলেছেন। কোনো নিয়ম-কানুন ছিল না। যাকে ইচ্ছা তাকে চেম্বারের সদস্যপদ দিয়েছেন। যাকে ইচ্ছা তাকে পরিচালক বানিয়েছেন। তিনি নিজের খেয়াল-খুশিমতো চেম্বারকে পরিচালনা করেছেন। তিনি চেম্বারের নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি করে নিজের আখের গুছিয়েছেন।

সমাবেশে চেম্বারের পরিচালক জহিরুল ইসলাম চৌধুরী আলমগীরও অংশ নিয়েছেন। এমনকি তিনি সমাবেশে চেম্বারকে সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন। তাকে সমাবেশে দেখে ব্যবসায়ীদের অনেকে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন।

জহিরুল ইসলাম চৌধুরী আলমগীর বাঁশখালী আসনের বিএনপির সাবেক এমপি প্রয়াত জাফরুল ইসলাম চৌধুরীর ছেলে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ব্যবসায়ী রাজনীতি সংবাদকে বলেন, তিনি (জহিরুল ইসলাম চৌধুরী আলমগীর) এম এ লতিফের ঘনিষ্ট লোক। তিনি তো এতোদিন লতিফের পরিবারতন্ত্রকে সমর্থন দিয়েছেন। বিনাভোটে পরিচালক হয়েছেন। এখন কোন মুখে তিনি সংস্কারের দাবি তুলছেন? এতোদিন চট্টগ্রাম চেম্বারের পরিচালনা পর্ষদে থেকে কেন সংস্কারের দাবি তুলেননি? প্রতিবাদ জানিয়ে কেন পদত্যাগ করেননি? লতিফের রাজত্ব চলে যাওয়াতে তিনি এখন বোল পাল্টে ফেলেছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জহিরুল ইসলাম চৌধুরী আলমগীর কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

সমাবেশ চলাকালে চট্টগ্রাম চেম্বারে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পর্ষদের জহিরুল ইসলাম চৌধুরী আলমগীর ছাড়া আর কোনো সদস্য ছিলেন না।

সমাবেশ শেষে ব্যবসায়ীরা ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের চেম্বারের কার্যালয়ে গিয়ে কর্মকর্তাদের কাছে পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের অবিলম্বে পদত্যাগ করতে হুঁশিয়ারি দিয়ে আসেন।

সমাবেশে ব্যবসায়ীদের মধ্যে বক্তব্য দেন বিজিএমইএ’র সহ সভাপতি রাকিবুল আলম, চেম্বারের জহিরুল ইসলাম চৌধুরী আলমগীর, বারভিডার সাবেক সেক্রেটারি জেনারেল হাবিবুর রহমান, চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি এসএম নুরুল হক, আবদুল মান্নান রানা, মাহবুব রানা প্রমুখ।

সমাবেশে চট্টগ্রাম চেম্বারের চাকরিচ্যুত কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও ব্যানার নিয়ে অংশ নেন।

উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম চেম্বারে গত ৯ বছর ধরে ভোট হয়নি। এ সময়ে পাঁচ মেয়াদে বিনাভোটে চেম্বারের কমিটি গঠন হয়েছে।

সর্বশেষ গত বছরের ৮ আগস্ট বিনাভোটে চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন ওমর হাজ্জাজ। তিনি চট্টগ্রাম-১১ আসনের (বন্দর-পতেঙ্গা) আওয়ামী লীগের সদ্য সাবেক সংসদ সদস্য এম এ লতিফের তৃতীয় সন্তান। চট্টগ্রাম চেম্বারের বর্তমান ২৪ সদস্যের পরিচালনা পর্ষদের মধ্যে লতিফের আরেক ছেলে ওমর মুক্তাদিরসহ আরও ছয়জন নিকটাত্মীয় রয়েছেন।

এম এ লতিফকে গত শুক্রবার রাতে নগরীর বায়েজিদ বোস্তামী এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ডবলমুরিং থানায় দায়েরকৃত একটি মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর গতকাল শনিবার তাকে আদালতে হাজির করে তিনদিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।

চট্টগ্রাম চেম্বারের সর্বশেষ ভোটাভুটি হয়েছিল ২০১৩ সালের ৩০ মার্চ। ওই নির্বাচনে চট্টগ্রাম-১১ আসনের সংসদ সদস্য এম এ লতিফ সমর্থিত মাহবুবুল আলম-নুরুন নেওয়াজ সেলিম পরিষদ জয়লাভ করে। তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলো মোরশেদ-সালাম ঐক্য পরিষদ।

এর পরের চার মেয়াদের নির্বাচনে মাহবুবুল আলমের প্রতিপক্ষ হিসেবে কোনো প্যানেল বা প্রার্থী ছিল না। তাই ভোটাভুটিও হয়নি।

২০০৮-১০ মেয়াদে সাবেক সংসদ সদস্য এম এ লতিফ প্রথম চেম্বারের সভাপতি হওয়ার পর শতবর্ষী এই প্রতিষ্ঠানকে কব্জায় নিয়েছে। গত ১৬ বছর ধরে তার প্যানেলই চেম্বারের নেতৃত্ব দিয়ে আসছে।

অভিযোগ আছে, লতিফের ম্যাকানিজমের কারণে চেম্বারের ভোট বন্ধ হয়ে গেছে। চেম্বারের ৬ হাজার ৬২৩ জন সদস্যের মধ্যে প্রায় দেড় হাজার সদস্য লতিফের একক নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এ ছাড়া আরও এক চতুর্থাংশ সদস্য তার প্যানেলের নেতাদের নিয়ন্ত্রণে আছে। অর্ধেক ভোটার লতিফের প্যানেলের নিয়ন্ত্রণে থাকায় নির্বাচনে তিনি ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়ান। যে কারণে তার প্যানেলের বিরুদ্ধে কেউ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সাহস করে না। লতিফের এই ম্যাকানিজমের কারণে গত ১১ বছর ধরে চেম্বারের ভোট হয়নি।

আরও পড়ুন:

চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি ওমর হাজ্জাজের কর ফাঁকি!

‘চাপে’ পড়ে ২ কোটি ১৫ লাখ টাকা ট্যাক্স দিলো চট্টগ্রাম চেম্বার

চট্টগ্রাম চেম্বারে এমপি লতিফের পরিবারতন্ত্রের জালে সৈয়দ নজরুল

শতবর্ষের ঐতিহ্যবাহী চট্টগ্রাম চেম্বারে কী হচ্ছে?

মন্তব্য করুন
Rajniti Sangbad


আরও খবর