রাজনীতি সংবাদ প্রতিনিধি, কিশোরগঞ্জ
প্রকাশের সময় : ১৭ আগস্ট ২০২৪, ৮:২১ অপরাহ্ণ
কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদের ৯টি দানবাক্স থেকে এবার মিলেছে ৭ কোটি ২২ লাখ ১৩ হাজার ৪৬ টাকা। এ ছাড়া বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা ও স্বর্ণালঙ্কারও পাওয়া গেছে।
আজ শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও পাগলা মসজিদের দানবাক্স খোলা কমিটির আহ্বায়ক কাজী মহুয়া মমতাজ বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
এর আগে সকাল সাড়ে সাতটার দিকে প্রশাসনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে ৯টি লোহার দানবাক্স খোলা হয়। দানবাক্সগুলো থেকে টাকা বের করে প্রথমে বস্তায় ভরা হয়। এবার ২৮ বস্তা টাকা হয়। এরপর টাকাগুলো মেঝেতে ঢেলে গণনা করা হয়।
মাদ্রাসার ২৫৭ জন ছাত্র, ব্যাংকের ৭০ জন স্টাফ, মসজিদ কমিটির ৪০ জন সদস্যসহ মোট ৩৬৭ জনের একটি দল দীর্ঘ ১০ ঘণ্টা ধরে এসব টাকা গণনা করে।
টাকা গণনা দেখতে শহরের নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ মসজিদে ছুটে আসেন।
প্রতি তিন থেকে চার মাস পরপর এই সিন্দুক খোলা হয়। এবার ৩ মাস ২৬ দিন পর দানবাক্সগুলো খোলা হয়েছে।
এর আগে গত ২০ এপ্রিল খোলা হয়েছিল দানসিন্দুকগুলো। তখন ২৭টি বস্তার মধ্যে ৭ কোটি ৭৮ লাখ ৬৭ হাজার ৫৩৭ টাকা পাওয়া গেছে। এ ছাড়া বৈদেশিক মুদ্রা, সোনার গয়না ও হীরা পাওয়া যায়, যা অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করেছিল।
জানা গেছে, মসজিদের দানবাক্স থেকে পাওয়া এসব অর্থ সংশ্লিষ্ট মসজিদসহ জেলার বিভিন্ন মসজিদ, মাদ্রাসা ও এতিমখানার পাশাপাশি বিভিন্ন সমাজকল্যাণমূলক কাজে ব্যয় হয়।
মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসক মো. আবুল কালাম আজাদ জানান, দানের টাকা জমা রাখা হয় মসজিদের নামে খোলা একটি ব্যাংক একাউন্টে। পাগলা মসজিদের টাকা নয়ছয় করার কোনো সুযোগ নেই। সুক্ষ্মভাবে প্রতিটি টাকার হিসাব রাখা হয়।
তিনি জানান, ১২০ কোটি টাকা ব্যয়ে আন্তর্জাতিক মানের দৃষ্টিনন্দন ইসলামিক কমপ্লেক্স ও মসজিদ নির্মাণের প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। যা বাস্তবায়নে প্রাথমিক কর্মকাণ্ড চলমান। শিগগির আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু হবে। যার নাম হবে ‘পাগলা মসজিদ ইসলামিক কমপ্লেক্স’। সেখানে ২২ হাজার মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারবেন।
কিশোরগঞ্জ শহরের ঐতিহাসিক স্থাপনার মধ্যে পাগলা মসজিদ অন্যতম একটি প্রতিষ্ঠান। শহরের পশ্চিমে হারুয়া এলাকায় নরসুন্দা নদীর তীরে মাত্র ১০ শতাংশ ভূমির ওপর এই মসজিদটি গড়ে উঠেছে বহু বছর আগে।
জনশ্রুতি রয়েছে, এক আধ্যাত্মিক পাগল সাধকের বসবাস ছিল কিশোরগঞ্জ শহরের হারুয়া ও রাখুয়াইল এলাকার মাঝপথে প্রবাহিত নরসুন্দা নদের মধ্যবর্তী স্থানে জেগে ওঠা উঁচু টিলাকৃতির স্থানটিতে। মুসলিম-হিন্দু নির্বিশেষে সব ধর্মের লোকজনের যাতায়াত ছিল ওই সাধকের আস্তানায়। ওই পাগল সাধকের মৃত্যুর পর তার উপাসনালয়টিকে কামেল পাগল পীরের মসজিদ হিসেবে ব্যবহার শুরু করে এলাকাবাসী।
কিন্তু ওই সাধকের মৃত্যুর পর থেকে আশ্চর্যজনকভাবে সেখানে দেশের দূর-দূরান্তের লোকজনের ভিড় বাড়তে থাকে। মানত কিংবা দান খয়রাত করলে মনের বাসনা পূরণ হয়-এমন বিশ্বাস থেকে বিভিন্ন বয়সের হিন্দু-মুসলিমসহ বিভিন্ন ধর্ম-বর্ণের নারী-পুরুষ মানত নিয়ে আসেন এই মসজিদে। এ ইতিহাস প্রায় আড়াইশ বছরেরও অধিক সময়ের বলে জানা যায়।
পাগলা মসজিদের পেশ ইমাম মুফতি খলিলুর রহমান জানান, প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ এসে দান করছে এই মসজিদে। যারা দান করতে আসেন তারা বলে থাকেন, এখানে দান করার পরে নাকি তাদের আশা পূরণ হয়েছে। এই বিশ্বাস থেকেই দূর-দূরান্তের মানুষও এখানে দান করতে ছুটে আসেন। মজার বিষয় হচ্ছে, দান সিন্দুক খুললে চিঠিপত্রও পাওয়া যায়। সেসব চিঠিতে দানকারীরা নিজেদের মনের বাসনার কথা লিখে দেন।
আরও পড়ুন: পাগলা মসজিদের কে সেই ‘পাগলা সাহেব’