শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪ | ৮ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২০ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬

মূলপাতা দেশজুড়ে

ডিবি হারুনের শত কোটি টাকার ‘প্রেসিডেন্ট রিসোর্ট’


সাবেক ডিবিপ্রধান হারুন অর রশীদ কিশোরগঞ্জে শত কোটি টাকা ব্যয়ে গড়ে তুলেছেন বিলাসবহুল ‘প্রেসিডেন্ট রিসোর্ট’।

রাজনীতি সংবাদ ডেস্ক প্রকাশের সময় :১৬ আগস্ট, ২০২৪ ১২:২১ : পূর্বাহ্ণ

ঢাকা মেট্টোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক ডিবিপ্রধান হারুন অর রশীদ কিশোরগঞ্জের গ্রামের বাড়িতে শত কোটি টাকা ব্যয়ে গড়ে তুলেছেন ‘প্রেসিডেন্ট রিসোর্ট’ নামে অত্যাধুনিক ও বিলাসবহুল একটি প্রমোদাগার। মিঠামইন উপজেলার ঘাগড়া ইউনিয়নের হোসেনপুর গ্রামে একটি পুকুরের চারপাশে ৪০ একরেরও বেশি জায়গা নিয়ে রিসোর্টটি নির্মাণ করা হয়েছে।

রিসোর্টটির প্রিমিয়াম স্যুটের প্রতিদিনের ভাড়া ২০ হাজার টাকা। সর্বনিম্ন ডিলাক্স রুমের ভাড়া প্রতিদিন ১০ হাজার টাকা। এ ছাড়া সুপার ডিলাক্স রুমের ভাড়া ১২ হাজার টাকা।

২০২১ সালের ৩ সেপ্টেম্বর রিসোর্টটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়। রিসোর্টের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন এবং রিসোর্ট উদ্বোধন উভয় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন তৎকালীন প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদের ছেলে কিশোরগঞ্জ-৪ আসনের তৎকালীন সংসদ সদস্য রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক।

প্রেসিডেন্ট রিসোর্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ডিবি হারুনের ছোট ভাই ডা. শাহরিয়ার। রিসোর্টটিতে হারুনের পরিবারের ৫ থেকে ৭ একর জায়গা রয়েছে। বাকি অন্তত ৩৫ একর জায়গা ছিল অন্যদের। এসব জায়গার মালিকদের দাম দেওয়ার কথা বলে হারুন রিসোর্টের জন্য জায়গা দখলে নেন।

জায়গার মালিকদের মধ্যে হিন্দু-মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের মানুষজন রয়েছেন। কিন্তু এসব জায়গার জন্য কেউই পুরো দাম পাননি। কেউ ১০ লাখের মধ্যে এক লাখ, কেউ ২০ লাখের মধ্যে ২ লাখ এমন হারে টাকা পেয়েছেন। জায়গার দাম না পাওয়ায় এখনো অন্তত ১০ থেকে ১২ জন তাদের জমি রেজিস্ট্রি করে দেননি।

তাদেরই একজন মিঠামইন সদর ইউনিয়নের গিরীশপুর গ্রামের দিলীপ বণিক। তিনি জানান, হারুন রিসোর্ট করার কথা বলে তার এক একর ১০ শতাংশ জায়গা নিয়েছেন। জমির কোনো দরদামও নির্ধারণ করা হয়নি। তাকে ৫০ হাজার টাকা দেয়া হয়েছে। অথচ জমির দাম হবে অন্তত ২০ লাখ টাকা।

এলাকাবাসী বলছেন, সাবেক ডিবি প্রধান হারুন সাবেক প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদের আশীর্বাদ এবং সহযোগিতায় চাকরি পাওয়া থেকে শুরু করে পুলিশের বিভিন্ন উচ্চ পদে আসীন হতে পেরেছেন। আবদুল হামিদ সে সময় প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করায় তাকে খুশি করতে দাপুটে পুলিশ অফিসার হারুন তার রিসোর্টের নাম দিয়েছেন ‘প্রেসিডেন্ট রিসোর্ট’। ফলে নিজেদের তেমন উল্লেখযোগ্য পরিমাণ জায়গা না থাকলেও রিসোর্টের জন্য জায়গা নিতে বেগ পেতে হয়নি।

 

রিসোর্টটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের সময় সেখানে মাত্র একটি পুকুর ছিল। এখন চারপাশে গাছপালা, ডুপ্লেক্স কটেজ, কালচারাল সেন্টার, আউটডোরসহ নানা কারুকার্য সম্বলিত পাথরের বিভিন্ন সামগ্রী তৈরি করা হয়েছে। রয়েছে একটি চাইনিজ রেস্তরাঁ, শিশুপার্ক, ওয়াচ টাওয়ার, লেকসহ নানা কিছু।

সাবেক প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদসহ আওয়ামী লীগ সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের মন্ত্রী-এমপি, পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বিচার বিভাগের কর্মকর্তা, চলচ্চিত্র জগতের তারকা এবং ভিআইপি ব্যক্তিরা বিলাসবহুল রিসোর্টটিতে সময় কাটিয়েছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর থেকে রিসোর্টটিতে দর্শনার্থীদের প্রবেশ বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে রিসোর্টে বুকিং চালু রয়েছে।

হারুন অর রশীদ ২০তম বিসিএসের মাধ্যমে ২০০০ সালে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় পুলিশ বিভাগে চাকরি নেন। কিন্তু তার বাবা মো. হাসিদ ভূঁইয়া মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন না। ১৯৯৬ সালের ১২ জুনের নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে তার নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়। জাতীয় সংসদের তৎকালীন ডেপুটি স্পিকার আবদুল হামিদের প্রভাবে মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় জায়গা পান তিনি।

২০২২ সালের ১২ জুন হারুনকে ডিএমপির ডিবিপ্রধান হিসেবে নিযুক্ত করা হয়। ডিবি প্রধান হিসেবে বিএনপি’র নয়াপল্টন অফিসে নানা নাটক মঞ্চস্থ করে বিএনপি নেতাকর্মীদের গণগ্রেপ্তার ও দমন-পীড়নে নেতৃত্ব দেন তিনি। হেফাজতে ইসলামের অনেক নেতা তার দ্বারা নিগ্রহের শিকার হন।

ডিবি অফিসে নিয়ে মধ্যাহ্নভোজ এবং সেসবের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দেওয়ার মাধ্যমে তিনি ডিবিপ্রধানের কার্যালয়কে পরিচিত করান ‘ভাতের হোটেল’ হিসেবে। সর্বশেষ কোটা আন্দোলনের ৬ সমন্বয়ককে নিরাপত্তা হেফাজতের নামে আটকে রেখে ভিডিও স্টেটমেন্ট নিয়ে দেশে-বিদেশে সমালোচিত হন। এরপর গত ৩১ জুলাই তাকে ডিবি থেকে সরিয়ে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনারের (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন্স) দায়িত্ব দেওয়া হয়।

আরও পড়ুন: সাবেক ডিবিপ্রধান হারুন এখন কোথায়?

মন্তব্য করুন
Rajniti Sangbad


আরও খবর