রাজনীতি সংবাদ প্রতিবেদক, ঢাকা প্রকাশের সময় :১৫ আগস্ট, ২০২৪ ৯:১৬ : পূর্বাহ্ণ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৯তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। এবার ভিন্ন প্রেক্ষাপটে এসেছে ১৫ আগস্টের দিনটি। টানা ১৫ বছর পর এবারই দিনটি রাষ্ট্রীয়ভাবে ও জাতীয় শোক দিবস হিসেবে পালন হচ্ছে না।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে ১৫ আগস্টেকে জাতীয় শোক দিবস হিসেবে পালন করা হতো। এদিনটিতে সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছিল।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। এরপর গত ১৩ আগস্ট অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জাতীয় শোক দিবসের সরকারি ছুটি বাতিল করে।
১৯৭৫ সালের এই দিনে এক দল বিপথগামী সেনাসদস্য ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাসভবনে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করে। রচনা করা হয় ইতিহাসের এক কলঙ্কিত অধ্যায়।
সেদিন ধানমন্ডির ঐতিহাসিক ৩২ নম্বর সড়কের নিজ বাসভবনে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তার পরিবার-পরিজনকেও নৃশংস হত্যাকাণ্ডের শিকার হতে হয়। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সেদিন শাহাদাতবরণ করেন তার সহধর্মিণী বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব; তিন ছেলে শেখ কামাল, শেখ জামাল ও শেখ রাসেল; পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও রোজী জামালকে হত্যা করা হয়।
বঙ্গবন্ধুর একমাত্র ভাই শেখ আবু নাসের, সামরিক সচিব জামিলউদ্দিন আহমেদ, এসবি কর্মকর্তা সিদ্দিকুর রহমান ও সেনাসদস্য সৈয়দ মাহবুবুল হককেও হত্যা করে ঘাতকেরা।
বঙ্গবন্ধুর ভাগনে যুবলীগের নেতা শেখ ফজলুল হক মনির বাসায়ও একই দিনে হামলা চলে। তিনি ও তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আরজু মনি হত্যার শিকার হন।
এ ছাড়া বঙ্গবন্ধুর ভগ্নিপতি আবদুর রব সেরনিয়াবাত, তার মেয়ে বেবি, ছেলে আরিফ সেরনিয়াবাত, নাতি সুকান্ত বাবু, বড় ভাইয়ের ছেলে সজীব সেরনিয়াবাত এবং আবদুল নঈম খান ও কর্নেল জামিলসহ পরিবারের ১৬ জন সদস্য ও ঘনিষ্ঠজনকে হত্যা করে ঘাতকেরা।
বঙ্গবন্ধুর দুই মেয়ে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা সে সময় ছিলেন বেলজিয়ামের ব্রাসেলসে। তারা প্রাণে বেঁচে যান।
পঁচাত্তরের বিয়োগান্ত হত্যাকাণ্ডের দীর্ঘ ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগ সরকার বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের পদক্ষেপ নেয়। নানা ঘটনাপ্রবাহ শেষে ২০১০ সালের ২৭ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর পাঁচ হত্যাকারীর ফাঁসির রায় কার্যকরের মধ্য দিয়ে এই বিচার প্রক্রিয়া শেষ হয়।
সরকার পতনের পর থেকে কার্যত জনবিচ্ছিন্ন আওয়ামী লীগের আজ বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আনুষ্ঠানিক কোনো কর্মসূচি নেই। যদিও দলের পক্ষ থেকে গত ৩১ জুলাই প্রতি বছরের মতো এবারও শোকের মাস পালনের অংশ হিসেবে ১৫ আগস্টের বিস্তারিত কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছিল। গত ৫ আগস্ট পদত্যাগের পর থেকে ভারতে অবস্থান করছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারাসহ সর্বস্তরের নেতাকর্মী ও ক্ষমতাচ্যুত সরকারের মন্ত্রী-এমপিদের প্রায় সবাই আত্মগোপনে।
ভারতে অবস্থান করা আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা দলীয় নেতাকর্মীদের ১৫ আগস্ট ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে আহ্বান জানিয়েছিলেন। কিন্তু ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে আজ ভোর থেকে অবস্থান নিয়েছে হাজার হাজার ছাত্র-জনতা। এ অবস্থায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা কেউ সেখানে যায়নি।