প্রধানমন্ত্রী থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনার সঙ্গে ফোনে কথা বলা বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. জাহাঙ্গীর কবিরকে আটক করা হয়েছে।
আজ বুধবার ভোরে বরগুনা থেকে তাকে আটক করা হয়।
বরগুনা সদর থানার ওসি এ কে এম মিজানুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘ঢাকা থেকে পুলিশের একটি টিম এসে তাকে আটক করে। ধারণা করা হচ্ছে, শেখ হাসিনার সঙ্গে মোবাইলে কথা বলার পর বিশৃঙ্খলা এবং প্রতিবিপ্লবের ষড়যন্ত্র করার অভিযোগে তাকে আটক করা হয়েছে।’
এর আগে, গত ১২ আগস্ট শেখ হাসিনার সঙ্গে তিন মিনিট ফোনে কথা বলেন আওয়ামী লীগ নেতা মো. জাহাঙ্গীর কবির।
ফোনালাপে শেখ হাসিনা জাহাঙ্গীর কবীরকে বলেন, ‘আপনারা শৃঙ্খলা মেনে দলীয় কার্যক্রম চালাবেন। ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসকে যথাযথভাবে পালন করবেন।’
জবাবে মো. জাহাঙ্গীর বলেন, ‘আপা আপনি ঘাবড়াবেন না, মনোবল হারাবেন না। আপনি ঘাবড়ালে আমরা দুর্বল হয়ে যাই। আমরা শক্ত আছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি ঘাবড়াবো কেন? আমি ভয় পাইনি। আপনারা দেখছেন, আমাদের পুলিশ বাহিনীকে মেরে কীভাবে ঝুলিয়ে রেখেছে। আমাদের কর্মীদের মেরেছে। বোরকা পরে মেরেছে। এ দেশটা রক্তের বিনিময়ে স্বাধীন হয়েছে। আপনারা যেভাবে আছেন, থাকেন।’
উল্লেখ্য, সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মাত্র ২২ দিনের বিক্ষোভে পতন হয় শেখ হাসিনা সরকারের।
গত ৩ আগস্ট ঢাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের লাখো মানুষের সমাবেশে ৪৮ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিয়ে সরকার পতনের এক দফা দাবি ঘোষণা করা হয়।
পরদিন ৪ আগস্ট ঢাকাসহ সারাদেশে ছাত্র-জনতাকে প্রতিরোধ করতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা অস্ত্র নিয়ে মাঠে নামে। এ দিন সারাদেশে ১৪ পুলিশ, শিক্ষার্থী ও বিএনপির নেতাকর্মীসহ শতাধিক মানুষ প্রাণ হারায়।
এ অবস্থায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবন ঘেরাও করতে ৫ আগস্ট ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচির ডাক দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। সেদিন রাস্তায় নেমে আসেন লাখো মানুষ। শেষ পর্যন্ত ছাত্র-জনতার অবিস্মরণীয় অভ্যুত্থানের মুখে পতন হয় স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকারের।
ওই দিন বেলা আড়াইটার দিকে শেখ হাসিনা গণভবন থেকে হেলিকপ্টারে করে বঙ্গভবনে যান। সেখানে রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন তিনি। এরপর বিমানবাহিনীর একটি হেলিকপ্টারে করে ছোট বোন শেখ রেহানাকে সঙ্গে নিয়ে ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা।
এর মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের টানা সাড়ে ১৫ বছরের ক্ষমতার অবসান ঘটে। গত ৮ আগস্ট নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়। এরপর বদলে যেতে শুরু করে দেশের সার্বিক চিত্র।
হাসিনার পতনের পর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ও জেলা-উপজেলার বিভিন্ন কার্যালয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। এ ছাড়া নেতাদের মারধর, হত্যা, বাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটছে।
এ অবস্থায় আত্মগোপনে চলে যান আওয়ামী লীগ নেতারা। কেউ কেউ দেশ ছেড়েছেন। তবে ইতোমধ্যে অনেক নেতা বিমানবন্দর, নৌপথে ও সীমান্ত দিয়ে পালানোর সময় আটক হয়েছেন।
গত ১৩ আগস্ট রাজধানীর সদরঘাট এলাকা দিয়ে নৌপথে পালানোর সময় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান এবং সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এর আগে গত ৬ আগস্ট ঢাকা শাহজালাল বিমানবন্দরে সাবেক ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলককে আটক করা হয়। একই দিন অবৈধ পথে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় ফেনী-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারীকে আটক করে সেনাবাহিনী ও বর্ডার গার্ড।
আরও পড়ুন: গণহত্যাকাণ্ডের নতুন ভিডিও নিয়ে তোলপাড়