রাজনীতি সংবাদ প্রতিনিধি, রংপুর প্রকাশের সময় :১০ আগস্ট, ২০২৪ ১২:০২ : অপরাহ্ণ
রংপুরে পুলিশের গুলিতে নিহত বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদের বাড়িতে গিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‘আমরা সবাই আবু সাঈদ। আবু সাঈদ এখন এক পরিবারের সন্তান না। বাংলাদেশের যত পরিবার আছে, তাদের সন্তান। যারা বড় হবে, স্কুল-কলেজে পড়বে, তারা আবু সাঈদের কথা জানবে এবং নিজে নিজেই বলবে, আমিও ন্যায়ের জন্য লড়বো। আবু সাঈদ এখন ঘরে ঘরে।’
আজ শনিবার সকালে হেলিকপ্টারযোগে রংপুরের পীরগঞ্জের জাফরপাড়া বাবনপুর গ্রামে যান ড. ইউনূস। বেলা ১১টার দিকে আবু সাঈদের কবর জিয়ারত ও তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি।
প্রায় ১৫ মিনিট ধরে আবু সাঈদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা। পরে স্বজনদের সঙ্গে মিলিত হন। এ সময় উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভুইয়া সঙ্গে ছিলেন। এছাড়াও রংপুরের বিভাগীয় কমিশনার জাকির হোসেন, জেলা প্রশাসক মোবাশ্বের হাসানসহ জেলা ও উপজেলার প্রশাসনের ঊর্দ্ধতন কর্মকতারা উপস্থিত ছিলেন।
ড. ইউনূস বলেন, ‘এই নতুন বাংলাদেশ গড়ার দায়িত্ব এখন আমাদের। তার (আবু সাঈদ) কথা স্মরণ হবে এই কাজটা করার মধ্য দিয়ে। আবু সাঈদ যেমন দাঁড়িয়েছে, আমাদেরকেও সেভাবে দাঁড়াতে হবে। যারা পার্থক্য করে আমরা তেমন না। আমরা সবাই বাংলাদেশি, আমরা বাংলাদেশেরই সন্তান। আবু সাঈদের মা সবার মা এবং সবার মা আবু সাঈদের মা। কাজেই তাকে রক্ষা করতে হবে, তাদের বোনদের রক্ষা করতে হবে, তাদের ভাইদের রক্ষা করতে হবে। সবাই মিলে এটা করতে হবে।’
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রধান বলেন, ‘বাংলাদেশে জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সবারই সন্তান আবু সাঈদ। হিন্দু পরিবার হোক, মুসলমান পরিবার হোক, বৌদ্ধ পরিবার হোক-সবার ঘরের সন্তান এই আবু সাঈদ। এটা এক বাংলাদেশ, দুই বাংলাদেশ নেই এখানে। এটা আবু সাঈদের বাংলাদেশ, যেখানে কোনো ভেদাভেদ নেই। আপনাদের কাছে অনুরোধ, যে যেখানেই আছেন, সবাইকে রক্ষা করুন। কোনো রকম গোলোযোগ হতে দেবেন নাকাজেই আপনারা খেয়াল রাখবেন, কোথাও কোনো গোলোযোগ যেন না হয়।’
ড. ইউনূস বলেন, ‘আমরা সবাই এই মাটিরই সন্তান। জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে এই মাটির সন্তানদের রক্ষা করা আমাদের কর্তব্য। আমরা যেন এটা নিশ্চিত করি।’
এর আগে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন আবু সাঈদের বাবা মকবুল হোসেন। আবু সাঈদের মা ও পরিবারের অন্য সদস্যরাও এ সময় ছিলেন অশ্রুসজল।
শপথ গ্রহণের দুই দিন পরই কোটা সংস্কার আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদের বাড়িতে আসেন প্রধান উপদেষ্টা।
উল্লেখ্য, গত ১৬ জুলাই দুপুর ২টার দিকে রংপুরের খামার মোড় থেকে শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ নম্বর ফটকের সামনে যান। এ সময় তারা বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে প্রবেশের চেষ্টা করলে পুলিশ বাধা দেয়। এতে পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ বাধে। একপর্যায়ে পুলিশ প্রায় ২০০ রাউন্ড গুলি ও রাবার বুলেট ছোড়ে।
এ সময় পুলিশের গুলিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ নিহত হন। আবু সাঈদ রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার বাবনপুরের বাসিন্দা মকবুল হোসেনের ছেলে। তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন।