রাজনীতি সংবাদ প্রতিবেদক, ঢাকা প্রকাশের সময় :৬ আগস্ট, ২০২৪ ১২:৪৮ : অপরাহ্ণ
ছাত্র-জনতার অবিস্মরণীয় অভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর খোঁজ মিলছে না আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী, এমপি ও শীর্ষ নেতাদের। অনেকে দেশ ত্যাগ করলেও আটকে পড়া অনেক মন্ত্রী-এমপি ও অসংখ্য নেতাকর্মী প্রাণভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। অনেক মন্ত্রী-এমপি বিভিন্ন দূতাবাসে আশ্রয়ও চেয়েছেন।
গতকাল সোমবার (৫ আগস্ট) দুপুরে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে সামরিক হেলিকপ্টারে চড়ে ভারতের উদ্দেশে উড়াল দেন শেখ হাসিনা। তার তাৎক্ষণিক এ সিদ্ধান্তে কয়েকজন মন্ত্রী-এমপি দেশ ছাড়তে না পেরে দেশে গা ঢাকা দেন। এমনকি, কয়েকজন মন্ত্রী জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে বিভিন্ন দূতাবাসে আশ্রয় চেয়েছেন বলেও খবর চাউর হয়েছে।
গতকাল সোমবার রাজধানী ছাড়াও সারাদেশে আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপি ও নেতাদের বাসাবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে।
এ অবস্থায় আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী, এমপি ও সিনিয়র নেতারা আত্মগোপনে চলে যান। কোথাও তাদের দেখা মিলছে না। তাদের মোবাইল ফোনও বন্ধ রয়েছে।
একটি সূত্র জানিয়েছে, হাসিনা সরকারের ক্ষমতাধর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান, অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম, কৃষিমন্ত্রী আব্দুস শহীদ, পণপূর্তমন্ত্রী র আ ম উবায়দুল মোক্তাদির, সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী, সাবেক হুইপ নুর-ই আলম চৌধুরী, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস, এমপি নুর-ই হাসনা লিলি চৌধুরী ও জেপি প্রধান ও সাবেক মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু বিমানযোগে দেশ ছেড়েছেন। তবে তারা কে কোন দেশে গেছেন তা জানা যায়নি।
সূত্র মতে, গত শনিবার (৩ আগস্ট) বিকেল থেকে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গা ঢাকা দেন। গত জাতীয় নির্বাচনের পর থেকে প্রতিদিন মিডিয়ার সামনে কথা বললেও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শেষ মুহূর্তে মিডিয়ায় কথা কম বলতে দেখা যায় তাকে। গত শনিবার ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে শেষবারের মতো কথা বলেন ওবায়দুল কাদের। তবে রোববার থেকে তাকে কোথাও দেখা যায়নি।
একটি সূত্র জানিয়েছে, রোববার রাতেই দেশত্যাগ করেছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। বর্তমানে তিনি সিঙ্গাপুর রয়েছেন। তবে অন্য একটি সূত্র বলেছে, ওবায়দুল কাদের বর্তমানে নয়াদিল্লিতে অবস্থান করছেন।
তবে মন্ত্রী-এমপিদের অনেকে শেষ মুহূর্তে শত চেষ্টা করেও দেশ ছাড়তে পারেননি। রোববার ও সোমবার দু’দিন টিকিটের জন্য তারা বিভিন্ন এয়ারলাইন্সের সঙ্গে যোগাযোগ করেও বিফল হন। অনেকে পরিবারের সদস্যদের নিরাপদে বিদেশ পাঠাতে পারলেও নিজে আর যেতে পারেননি।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের ধানমন্ডির বাসভবন সোমবার ভাঙচুর হলেও তিনি ঠিক কোথায় ছিলেন জানা যায়নি।
এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে বেশি সরব থাকা পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, শিক্ষামন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, সমাজকল্যাণ মন্ত্রী ডা: দীপু মনি, তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এবং তথ্য প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী আরাফাত অজ্ঞাত স্থানে চলে গেছেন।
তবে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক নিজ এলাকা গাজীপুরেই অবস্থান করছেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
জানা গেছে, গত ১৪ জুলাই দেশের পরিস্থিতি নাজুক দেখে বিদেশ থেকে ফ্লাইটের টিকিট কেটে ঢাকা ছাড়েন আওয়ামী লীগের অনেক প্রভাবশালী নেতা, মন্ত্রী-এমপি ও ব্যবসায়ীরা। গতকাল সোমবার পর্যন্ত শতাধিক মন্ত্রী, এমপি ও নেতা দেশ ছেড়েছেন। তারা রাশিয়া, যুক্তরাজ্য, কানাডা, সিঙ্গাপুর, অস্ট্রেলিয়া, ভারত, থাইল্যান্ড, চীন ও দুবাই পাড়ি জমান।
এদিকে আজ মঙ্গলবার সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউর দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়, দলীয় সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয় এবং তেজগাঁওয়ের ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ ভবন। বাদ যায়নি ধানমন্ডি-৩২ নম্বরের বঙ্গবন্ধু ভবনও, যেখানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘর গড়ে তোলা হয়েছিল।
আরও পড়ুন:
শেখ হাসিনা ক্ষমতা ছাড়ার শেষ চার ঘণ্টা যা ঘটেছিল
গণভবনে ঢুকে মানুষের বিজয় উল্লাস
ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু ভবন ও সুধা সদনে আগুন
দেশ ছেড়ে পালালেন শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা