শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪ | ৭ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৯ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬

মূলপাতা জাতীয়

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন

কারফিউয়ের মধ্যেই ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি আজ


ছবি: সংগৃহীত

রাজনীতি সংবাদ প্রতিবেদক, ঢাকা প্রকাশের সময় :৫ আগস্ট, ২০২৪ ৯:২১ : পূর্বাহ্ণ

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা অসহযোগ আন্দোলনের প্রথম দিনে (৪ আগস্ট) ভয়াবহ একটি দিন পার করলো পুরো দেশ। প্রায় শত মানুষের মৃত্যু আর অসংখ্য আহত হওয়ার খবর দেশের মানুষকে আতঙ্কিত করে তুলেছে। এরই মধ্যে কারফিউ প্রত্যাখ্যান করে সরকার পতনের এক দফা দাবিতে আজ সোমবার ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচির ডাক দিয়েছে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া সংগঠনটি।

গতকাল রোববার বিকেল ৩টায় রাজধানীর শাহবাগে এক সমাবেশ থেকে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম। তিনি প্রথমে আগামীকাল মঙ্গলবার ‘মার্চ টু ঢাকা’ পালনের ঘোষণা দিলেও সরকার কারফিউ জারির পর এক বিজ্ঞপ্তিতে কর্মসূচি এক দিন এগিয়ে আনা হয়েছে বলে জানান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আরেক সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘পরিস্থিতি পর্যালোচনায় এক জরুরি সিদ্ধান্তে আমাদের ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি ৬ আগস্ট থেকে পরিবর্তন করে ৫ আগস্ট করা হলো।
কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য দেশের ছাত্র-জনতাকে ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা করার আহ্বান জানাচ্ছি।’

চূড়ান্ত লড়াইয়ের কথা উল্লেখ করে এতে বলা হয়, ‘এই ছাত্র নাগরিক অভ্যুত্থানের চূড়ান্ত স্বাক্ষর রাখার সময় এসে গেছে। ইতিহাসের অংশ হতে ঢাকায় আসুন সকলে। যে যেভাবে পারেন, কালকের (৫ আগস্ট) মধ্যে ঢাকায় চলে আসুন। ছাত্র-জনতা এক নতুন বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটাবো।’

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘ছাড়তে হবে ক্ষমতা, ঢাকায় আসো জনতা’ স্লোগান সামনে রেখে ‘লংমার্চ টু ঢাকা’র কর্মসূচিতে সারাদেশের ছাত্র-নাগরিক-শ্রমিকদের ঢাকায় আসার আহ্বান জানাচ্ছি। এদিন দুপুর ২টায় শাহবাগে জড়ো হবেন।

এর আগে গতকাল দুপুরে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ধাওয়া দিয়ে শাহবাগে অবস্থান নেন আন্দোলনকারীরা। এরপর বিভিন্ন দিক থেকে একের পর এক মিছিল শাহবাগে জড়ো হতে শুরু করে। পরে বিকেলে শাহবাগে ছাত্র-জনতার সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম কর্মসূচি ঘোষণা করেন।

এ সময় নাহিদ বলেন, ‘যারা ঢাকার বাইরে রয়েছেন সব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী-শিক্ষক, ছাত্র-জনতা, শ্রমিক, পেশাজীবী দলে দলে আপনারা ঢাকামুখী লং মার্চ করবেন। আমরা শাহবাগে সমাবেশ করবো।’

প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আমরা এখনো সময় দিচ্ছি। সরকার যদি এখনো সহিংসতা চালিয়ে যায়, আমরা কিন্তু গণভবনের দিকে তাকিয়ে আছি। আপনাকে ঠিক করতে হবে শেখ হাসিনা, আপনি কী এখনো সহিংসতা চালাবেন, রক্তপাত চালাবেন? নাকি ছাত্রদের দফা অনুযায়ী পদত্যাগ করবেন?’

প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় সংগ্রাম কমিটি গড়ে তোলার ঘোষণা দিয়ে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আর যদি আমার ভাইদের বুকি গুলি করা হয়, আমার বোনদের কেউ আহত হয়, আমরা বসে থাকবো না। পাড়ায় পাড়ায়, গ্রামে গ্রামে, মহল্লায় মহল্লায়, অলিগলিতে প্রতিরোধ সংগ্রাম কমিটি গঠন করুন। আমরা এই সরকারকে মানি না। এখন থেকে দেশের নেতৃত্ব দেবে ছাত্র-জনতা। ছাত্র-জনতার ঘোষণা চূড়ান্ত ঘোষণা।’

আওয়ামী লীগ দেশে গৃহযুদ্ধ সৃষ্টি করেছে অভিযোগ করে নাহিদ বলেন, ‘আজকে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা সরাসরি মাঠে নেমেছে। দেশটা একটা গৃহযুদ্ধের পরিস্থিতিতে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। ছাত্র-জনতা যেকোনো মুহূর্তের জন্য প্রস্তুত। আজকে লাঠি তুলে নিয়েছি। যদি লাঠিতে কাজ না হয় আমরা অস্ত্র তুলে নিতে প্রস্তুত। প্রতিরোধ করুন, রুখে দাঁড়ান, সন্ত্রাসীদেরকে বাংলাদেশ ছাড়া করতে হবে।’

সমর্থকদের উদ্দেশে সমন্বয়ক নাহিদ বলেন, যদি ইন্টারনেট ক্র্যাকডাউন হয়, আমাদের গুম, গ্রেপ্তার, খুন করা হয়, যদি ঘোষণা করার কেউ না-ও থাকে, একদফা দাবিতে সরকার পতন না হওয়া পর্যন্ত সবাই রাজপথ দখলে রাখবেন এবং শান্তিপূর্ণভাবে অসহযোগ আন্দোলন অব্যাহত রাখবেন।

কোটা সংস্কারের দাবিতে শুরু হওয়া শিক্ষার্থীদের আন্দোলন শেষ পর্যন্ত শনিবার (৩ আগস্ট) এক দফা দাবিতে সরকার পরিবর্তনের আন্দোলনে রূপ নেয়। এ কর্মসূচি ঘিরে সহিংসতা, হামলা ও সংঘর্ষে এ পর্যন্ত পুলিশের ১৪ সদস্যসহ প্রাণ গেছে ৯৮ জনের।

উল্লেখ্য, সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের লাগাতার আন্দোলন শুরু হয় গত ১ জুলাই। এরপর গত ১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ঘিরে সংঘর্ষের পর বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে প্রায় সারাদেশে। এর পরদিন থেকে এ আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় হামলা, সংঘর্ষ, সহিংসতা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও হতাহতের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষ ও সংঘাতে এখন পর্যন্ত ২১৫ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন বহু মানুষ।

এই পরিস্থিতিতে গত ১৯ জুলাই দিবাগত রাত ১২টা থেকে সারাদেশে কারফিউ জারি করা হয়। সেইসঙ্গে মোতায়েন করা হয় সেনাবাহিনী। এখনো বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা করে যাচ্ছে সেনাবাহিনী। গত ২২ জুলাই থেকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসে। কিন্তু গতকাল শুক্রবার (২ আগস্ট) থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের গণমিছিল কর্মসূচিকে ঘিরে পরিস্থিতি আবার উত্তপ্ত হয়ে উঠে।

আরও পড়ুন:

দেশবাসীকে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান হেফাজত আমীরের

অসহযোগ আন্দোলন: সারাদেশে সংঘর্ষ, গুলি, নিহত ১০০

মন্তব্য করুন
Rajniti Sangbad


আরও খবর